Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিনিয়োগে ভাটার টান

সম্পাদকীয়-২

| প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম


কী দেশী, কী বিদেশী কোনো বিনিয়োগই বাড়ছে না। সরকার বিনিয়োগ বৃদ্ধির ব্যাপারে সোচ্চার এবং দাবিও করছে, বিনিয়োগ বাড়ছে। কিন্তু পরিসংখ্যান সরকারের দাবির সঙ্গে যাচ্ছে না। অবকাঠামো খাতে সরকারের বিনিয়োগ অবশ্য বাড়ছে। সেই অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না। বরং কমছে। কিছুদিন আগে খবর বেরিয়েছিল, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে। অনেকেই এ খবরে আশ্বস্ত হয়ে ভেবেছিলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি যখন বেড়েছে তখন বিনিয়োগ না বাড়ার কোনো হেতু নেই। কিন্তু এখন অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তারা বলছেন, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির নামে অর্থ পাচার হয়েছে। তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, বিনিয়োগ না বেড়ে উল্টো কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ২.৬৩ শতাংশ। চলতি বছর তা ১.৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তথ্যে বলা হয়েছে, বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে ধীরগতি নেমে এসেছে। বলা বাহুল্য, ঋণ বিতরণে ধীরগতির অর্থ বিনিয়োগ নেতিবাচক প্রবণতার শিকার। বিনিয়োগ বোর্ডের কাছে বিনিয়োগ নিবন্ধনের যে তালিকা পাওয়া যায়, বাস্তবে বিনিয়োগ হয় তার চেয়ে অনেক কম। বিদেশী বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির ১০ শতাংশও বাস্তবায়ন হয় না। বেশির ভাগ বিদেশী কোম্পানিই নিবন্ধনের পর প্রত্যাশিত সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে ফিরে যায়। দেশী বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও কম-বেশি একই বাস্তবতা লক্ষ্য করা যায়। বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্য মতে, গত তিন মাসে বিনিয়োগ ধস নেমেছে। কমেছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, ব্যাংকঋণও চাইলে পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে ব্যাংকঋণের সুদহার কমানো হয়েছে। ব্যাংক খাতে বিপুল বিনিয়োগযোগ্য অর্থ পড়ে আছে। অবকাঠামোর সুবিধা কিছুটা হলেও বেড়েছে। সর্বোপরি সরকার বিনিয়োগকারীদের সর্বপ্রকার সহযোগিতা দিতে সদা প্রস্তুত। বিনিয়োগ অলাভজনক তাও নয়। এরপরও দেশী- বিদেশী বিনিয়োগ না বেড়ে কমছে কেন, সেটা বিরাট এক প্রশ্ন। সরকারের তরফে যে উন্নয়ন-আকাক্সক্ষার কথা প্রচার করা হচ্ছে, তা পূরণে ব্যাপক বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। শিল্পে  ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ বাড়লে সঙ্গতকারণেই উৎপাদন-রফতানি বাড়ার কথা, বাড়ার কথা কর্মসংস্থান। আর বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, উৎপাদন-রফতানি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেলেই কেবল জাতীয় উন্নয়ন আকাক্সক্ষা পূরণ হতে পারে। সরকার উন্নয়ন-আকাক্সক্ষার কথা প্রচার করছে, স্বপ্ন দেখাচ্ছে, কিন্তু বিনিয়োগ বন্ধ্যাত্ব মোচনে সাফল্যের পরিচয় দিতে পারছে না। এমতাবস্থায়, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন- প্রয়াস কিভাবে সফল হবে, সেটাই প্রশ্ন। বিনিয়োগের মোটামুটি অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান থাকার পরও বিনিয়োগ না বাড়ার কারণটি সরকারকে গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। এটা খুবই বিস্ময়কর তথ্য যে, দেশী বিনিয়াগকারী বা উদ্যোক্তারা দেশে বিনিয়োগ না করে বিদেশে বিনিয়োগ করতে চাইছে। এজন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও সুবিধা চাইছে। শুধু তাই নয়, বিনিয়োগকারীদের অনেকেই নানা কৌশলে দেশ থেকে অর্থ সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বিদেশে নামে-বেনামে বিনিয়োগ করছে। বিদেশে অর্থ পাচারের এটা অন্য কারণ। দেশী বিনিয়োগকারীরা যদি বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে কিংবা বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে ওঠে তাহলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আস্থাহীনতার শিকার হতে বাধ্য। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ ও আগ্রহ নিয়ে এসেও ফিরে যাওয়ার এটি একটি বড় কারণ।
অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগে মন্দা বা বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এ ছাড়া অনিরাপত্তা, আইনের শাসনের অভাব, ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতা, জমির অভাব, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট এবং দুর্নীতি ইত্যাদির কথাও উল্লেখ করা যায়। সত্য বটে, দেশে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা ও হানাহানি নেই। কিন্তু গুরুতর রাজনৈতিক সংকট রয়েছে যার মীমাংসা এখনো হয়নি। কবে হবে, কেউ আন্দাজ করতে পারে না। যে কোনো সময় এই শান্ত পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠতে পারে। বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু-সুস্থ রাজনৈতিক পরিস্থিতি অপরিহার্য পূর্বশত হিসেবে বিবেচিত। কাজেই, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তার যদি কাম্য হয়, তাহলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত ও স্থিতিশীল করতে হবে। এ দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতার আশংকা কেন বিদ্যমান রয়েছে তা দেশের কারো অজানা নেই। অংশগ্রহণমূলক অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচন এই আশংকাকে দূর করতে পারে। সরকারকে সে রকম একটি নির্বাচনের পথে গিয়ে এ আশংকা দূর করতে হবে। অন্যান্য দলেরও এ ব্যাপারে সরকারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে। এইসঙ্গে বিনিয়োগের অন্তরায়গুলো সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে দূর করার পদক্ষেপ নিতে  হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন