Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আর-৭ ও চম্পা ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে

ছদ্মবেশে ইয়াবা পাচার

তাজ উদ্দীন, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন বানের পানির মতো ইয়াবা আসছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশকে টার্গেট করে গত কয়েক বছরে মিয়ানমারে বাংলাদেশ সীমান্তে ৪০টির অধিক ইয়াবা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছিল। তন্মধ্যে অর্ধেক কারখানা মিয়ানমার সরকার বন্ধ করলেও এখনো ২০টির অধিক কারখানা রয়েছে। এছাড়াও ইয়াবার মধ্যে আর-৭ (যেটি বাজারে ১নং হিসেবে পরিচিত) সেটি থাইল্যান্ডেই উৎপাদিত হয়ে থাকে। আর চম্পা (যেটির গুণগতমান অপেক্ষাকৃত কম ও কমদামে পাওয়া যায়) সেটি মিয়ানমারে উৎপাদিত হয়। মিয়ানমারে উৎপাদিত ইয়াবা শুধু বাংলাদেশে পাচার হয়ে থাকে। আর মাদক পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। মহাসড়কে চলমান বাসে সাধারণ যাত্রীর ছদ্মবেশে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ইয়াবা ও বিভিন্ন মাদক পাচার করছে কয়েকটি চক্র। এসব ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম নগরী, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে। ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য দক্ষিণ চট্টগ্রামে আলাদা বিভাগ থাকলেও তাদের তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না। বছরে ১-২ বার নির্দিষ্ট ইয়াবা তথা মাদক ব্যবসায়ীদের মাদক নিয়ে আটক করে দায় সারেন। অথচ প্রতিদিন নতুন নতুন লোক এ ব্যবসায় জড়িয়ে থাকলেও তারা বরাবরই ধারা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। অবশ্য ইয়াবা তথা মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী আটকের ব্যাপারে লোহাগাড়া থানা পুলিশের তৎপরতায় প্রশংসনীয়। পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়ের ফলে লোহাগাড়ার বেশ কয়েকজন পেশাদার ইয়াবা ব্যবসায়ী এই ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়াতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়াও ইতোমধ্যে ১ ডজন ইয়াবা সেবনকারী মসজিদে গিয়ে ইয়াবা গ্রহণ না করার শপথ নিয়েছেন। লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহজাহান পিপিএম জানান, এলাকায় সকল ধরনের অপরাধের মূলে মাদক জড়িত। তাই আমরা লোহাগাড়া উপজেলাকে মাদকমুক্ত রাখার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ী আটকের সফলতায় লোহাগাড়া থানার সাব-ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ সোলেমান পাটোয়ারী বেশ কয়েকবার পুলিশ বিভাগের উর্ধŸতন মহলের বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি বর্তমানে লোহাগাড়ার মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের রীতিমতো আতঙ্ক। তিনি জানান, গত ৩ বছরে লোহাগাড়া থানায় গড়ে প্রতি মাসে ১৪টি করে প্রায় ৫শ-এর অধিক ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক মামলা হয়েছে। আটক করা হয়েছে প্রায় ১৪শ’ মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী। এছাড়াও ইয়াবা ও বিভিন্ন মাদক বহন করার অপরাধে প্রায় ১শ’টি প্রাইভেটকার, নুহা, মাইক্রো, ট্রাক ও পিকআপ আটক করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, লোহাগাড়া থানায় গত ৩ বছরে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা আটক করা হয়েছে। যা এর আগে ২০ বছরেও হয়নি। এছাড়াও স্থানীয় এমপি আবু রেজা নদভীর স্ত্রী মিসেস রিজিয়া রেজা চৌধুরীও ইতোমধ্যে লোহাগাড়ায় মাদকবিরোধী কয়েকটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। তারা ইতোমধ্যে এলাকায় এলাকায় গিয়ে সভা-সেমিনার করে মাদকের ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করে তুলছেন। জানা যায়, প্রতিদিন ৩০ লাখ ইয়াবা আসে বাংলাদেশে। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ, বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার ৪৩ পয়েন্টে আসছে ইয়াবার চালান। বিশেষ করে টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপের মধ্যবর্তী প্রায় ১৪ কিলোমিটার নাফ নদীর চ্যানেল এলাকা ব্যবহার করা হচ্ছে ইয়াবা পাচারের প্রধান রুট হিসেবে। এ পথে চালানের ব্যবহার করা হয় ছোট নৌকা, ট্রলার ও মালবাহী ছোট জাহাজ। এছাড়াও উখিয়ার ঘুনধুম, বটতলী, বালুখালী ও কুতুপালং হয়েও ইয়াবা আসে বাংলাদেশে। টেকনাফ বিওপি এলাকার আড়াই নম্বর সুইচ গেইট, মৌলভীপাড়া, নাজিরপাড়া, হাবিবপাড়া ডেইলপাড়া, চকবাজার, শিলবনিয়াপাড়া, খানকাপাড়া, আলিয়াবাদ, ২ নম্বর স্লুইচ গেইট, জালিয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া কুলালপাড়া, নাইটংপাড়াসহ পয়েন্টগুলোতে দিনরাত কাজ করছে পাচারকারী চক্র। নাইক্ষ্যংছড়ির ছেড়ার মাঠ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফুলতলি, আসাদতলিসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সক্রিয় রয়েছে চোরাইকারবারিরা। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে প্যাকেট প্যাকেট ইয়াবা পার হয়ে আসছে বাংলাদেশে। স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমারের মংডু এলাকার বেশকিছু লোক পাচার কাজে জড়িত। মাঝে মাঝে তারা চালান নিয়ে বাংলাদেশেও ঢুকে পড়ে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন মংডু এলাকার পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে লোহাগাড়া থানা পুলিশ। জানা গেছে, ইয়াবা পাচারের কাজে বিশেষ সুবিধার জন্য অনেক নারী ও শিশুকে ব্যবহার করে পাচারকারীরা। একটি সূত্র জানায়, সীমান্ত থেকে বাসযোগে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ইয়াবা সরবরাহের কাজে ৩শ’রও বেশি নারী জড়িত রয়েছে। এদের বেশিরভাগই বোরকা পরে এ অপকর্ম চালায়। এছাড়াও পর্যটকের পোশাকে দামি গাড়িতে করেও ইয়াবা পাচার অব্যাহত রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইয়াবা


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ