পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
হঠাৎ করে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট দেখা দেয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে রাজধানীসহ দেশে লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সোমবার রাজধানীতে এক ঘন্টা পরপর লোডশেডিং হয়েছে। এ কারণে গরমে নগরবাসীর হাসফাঁস অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে ডিজেল কিনে জেনারেটর চালানোয় খরচ বেড়ে যাচ্ছে। অনেকে সময়মতো শিপমেন্ট করতে পারছে না। বিদ্যুতের এই সংকট কতদিন চলবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তিনি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানী সরবরাহ বিঘ্নিত ও সংকট সৃষ্টির ধারাবাহিকতাকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে শতকার ৫২ ভাগ প্রাকৃতিক ও এলনজি গ্যাস ব্যবহার করা হয়। বিশ্ববাজারে এলএনজি’র দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার এখন তা না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দাম কমলে আবার কেনা হবে। গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন যেমন কমেছে, তেমনি বিদ্যুৎ বিভাগকে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, রেকর্ড সৃষ্টি করা, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সরকারের ‘সিগনেচার ক্যাম্পেইন’। তবে গত কয়েক দিন ধরে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এসব ক্যাম্পেইন সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। কেন এই সংকট তার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এই সংকট শুধু আমাদের দেশেই নয়, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও সংকটে পড়েছে। যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানির মতো আন্যান্য উন্নত দেশও জ্বালানি সংকটের মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিদ্যুতের ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি সংকট কতদিন চলবে তা অনিশ্চিত। এ কারণে উন্নত দেশগুলো বিশ্ববাজার থেকে অধিক হারে জ্বালানি সংগ্রহ করে রিজার্ভ গড়ে তোলায় সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। উপমহাদেশের দেশগুলোও জ্বালানি সংকটের মধ্যে পড়েছে। পাকিস্তানে সংকট দেখা দেয়ায় বিদ্যুৎ ব্যবহারে কৃচ্ছতা অবলম্বনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করে চলেছে। জ্বালানি সংকটে শ্রীলঙ্কার কী শোচনীয় অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তা সকলেরই জানা। দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটকে পর্যবেক্ষকরা শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার ‘পূর্বাভাবস’ হিসেবে গণ্য করে এখন থেকেই সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ আশঙ্কা থেকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নেয়া এবং অপচয় রোধ করা ছাড়া উপায় নেই বলে তারা মত দিয়েছেন। তা নাহলে, দিন যত যাবে সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠবে। শুধু লোডশেডিং করে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এজন্য যেসব কমগুরুত্বপূর্ণ এবং অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিদ্যুতের ব্যবহার রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়বে। পশুর হাটে বিদ্যুতের ব্যবহার, কোরবানির গোশত ফ্রিজে রাখা এবং ফ্রিজের বিক্রি বেড়ে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। চলমান বিদ্যুৎ সংকট তখন আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে।
বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় সাশ্রয়ী হওয়া এবং কৃচ্ছসাধনের বিকল্প নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে খুঁজে বের করতে হবে, কোথায় কোথায় বিদ্যুতের অপচয় হয়, অপ্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং কোথায় বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়Ñএসব বিষয় খতিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেখানে যেখানে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যেতে পারে সেখানেই তা করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এমন অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা রয়েছে যেখানে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। রাজধানীসহ বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে বিদ্যুৎচালিত বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ড রয়েছে সেগুলো সময় নির্দিষ্ট করে বন্ধ রাখার পরিকল্পনা করা যেতে পারে। ঈদের সময় মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে ব্যাপক হারে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়। সেখানে কিভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়, এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি একদিন বাড়িয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায় কিনা, তা ভেবে দেখতে হবে। অফিসের সময়সূচি কমিয়ে কাজের গতি বাড়িয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের চিন্তা করতে হবে। আমরা দেখেছি, এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। এসব অপ্রয়োজনীয় স্থান চিহ্নিত করতে হবে। যেসব অবৈধ সংযোগ রয়েছে, সেগুলো বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। বছরের পর বছর ধরে চলা সিস্টেম লস নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যুৎ সরবারাহ নির্বিঘ্ন করতে দেশের অভ্যন্তরে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কাক্সিক্ষত বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না, অথচ সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করার চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। কোনো ধরনের ব্লেম গেইমে না গিয়ে বিশ্ব বাস্তবতার নিরিখে বিচার-বিশ্লেষণ করে বিদ্যুৎ সঞ্চয় ও সাশ্রয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।