চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
কাবা শরীফের পূর্ব দিকের তাওয়াফ ভূমি সংলগ্ন কাঁচে ঘেরা মিনার সদৃশ্য ছোট ঘরটিতে রয়েছে জান্নাতী এক খন্ড বর্ঘাকৃতির পাথর । এর উপর দাঁিড়য়ে হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) কাবাঘর পূর্ণ নির্মাণ করেছিলেন। পাথরের উপর তাঁর কদম মুবারক রাখলেই সেটা নরম হয়ে যেত এবং হযরতের কদম মুবারক পাথরের ভিতর চার আঙ্গুল পরিমাণ দেবে যেত. যাতে নির্মাণ কাজ আঞ্জাম দানের সময় পা পিছলে না যায়। এমনকি এটা ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) আপন ইচ্ছানুযায়ী উপরে- নিচে, ডানে- বামে নিয়ে গিয়ে নিজ প্রয়োজন অনুসারে কাজ করেছিলেন অবলীলায়।
কাবা ঘর নির্মাণ শেষে ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) পাথরটি এ জায়গায় স্থাপন করেন। কালামুল্লাহ শরীফে এ পূণ্য পাথরের মহিমা ঘোষণায় এরশাদ হয়েছে - “ওয়াত্তাখিযু মিম মাক্বামে ইব্রাহিমা মুসোল্লা।” অত্র আয়াতে এটিকে মাক্বামে ইব্রাহিম বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং নামাজের স্থান রূপে গ্রহন করার জন্য আদেশ করা হয়েছে। তাই পবিত্র কাবা গৃহের তাওয়াফ শেষে মাক্বামে ইব্রাহিমকে সামনে নিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয়। এ থেকে বুঝা যায়, সাধারণ মূল্যহীন পাথরটি হযরত ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) এর সংস্পর্শে এসে অনন্য মর্যাদার অধিকারী হয়েছে। একথাও প্রতিয়মান হয় যে, নামায সম্পন্ন করার সময় আল্লাহ ব্যতিত অন্য কিছুর প্রতি সম্মান প্রদর্শণও জায়েজ আছে। কেননা, মাক্বামে ইব্রাহিমের প্রতি সম্মান প্রদর্শণ নামাজের মধ্যে হচ্ছে।
মক্কার উম্মুল জুদস্থ জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত কর্র্মকর্তা সালেহ বিন আব্দুর রহমানের সূত্রে জানা যায়, চার হাজার বছরের বেশী সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও মাক্বামে ইব্রাহিমে ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) এর পদ চিহ্ন অপরিবর্তিত রয়েছে। পাথরটির ওপরে প্রতিটি ছাপের দৈর্ঘ্য ২৭ সে:মি: এবং প্রস্থ ১৪ সে: মি:। পাথরের নিচের অংশে রূপাসহ প্রতিটি পাথরের দৈর্ঘ্য ২২ সে: মি: এবং প্রস্থ ১১ সে: মি: । পাথরটিতে ইব্রাহিম ( আলাইহিস সালাম ) এর পদ চিহ্নের গভীরতা পাথরটির উচ্চতার অর্ধেক, ৯ সে: মি:। দীর্ঘদিন ধরে লাখ লাখ নবীপ্রেমিকের হাতের স্পর্শের পরও আঙ্গুলের চিহ্নগুলো এখনো বিদ্যমান।
ভালো করে লক্ষ্য করলে এখনো বুঝা যায় আঙ্গুলের চাপ, বুঝা যায় পায়ের গোড়ালির চিহ্ন। আগে পাথরটি প্রয়োজনে স্থানান্তর করা যেত। জাহেলী যুগে লোকেরা বন্যার ভয়ে মাক্বামে ইব্রাহিমকে কাবা শরীফের মঞ্চে লাগিয়ে রাখত। হযরত উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর খিলাফতকালে এটি সরিয়ে বর্তমান জায়গায় বসানো হয়। এক সময় পাথরটিকে একটি মিম্বরের উপর তুলে রাখা হয়েছিল, যেন বন্যার পানি এর নাগাল না পায়। যুগে যুগে বহু শাসক মাক্বামে ইব্রাহিমের সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নেন। ১৬০ হিজরীতে খলিফা মাহদী হজ্বে এসে মাক্বামে ইব্রাহিম-পাথরটির উপর থেকে নিচ পর্যন্ত রূপা দিয়ে মজবুত করে মুড়িয়ে দেন। ইতোপূর্বে মানুষ পাথরটি হাতে ধরে দেখার সুযোগ পেয়েছিল। এ্খন শুধু দেখা যায়, ধরা যায না।
কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, হযরত ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) এর শেষ জীবনের ইবাদতের স্থান মাক্বামে ইব্রাহিম। এর প্রতিটি অনুকণা খলিলুল্লাহর অশ্রু ধারায় সিক্ত/ সিঞ্চিত। তাঁর কর্মের অঙ্গন বিশ্ব মুসলিমের ইবাদতের স্থান। দিন-রাত এ স্থান জনাকীর্ণ। হাঝী সাহেবানগণ তাওয়াফ শেষে এখানে দু রাকাআত নামাজ পড়ে বারেগাহে ইলাহীতে স্বীয় মনোবাসনা কামনা করেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে হারামাইনে শরীফাইনের যিয়ারত এবং মাকামে ইব্রাহিমে দু’রাকাত নামায আদায় করার তওফিক দান করুন! আমিন বিজাহিন নবীয়্যিল আমীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।