পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, জাতির অহংকার। রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সম্পদের নিরাপত্তা দেয়া অতীব জরুরী। নানা ধরণের ষড়যন্ত্র ও বাধা-বিপত্তির মুখে নির্মিত হয়েছে এই পদ্মা সেতু। ফলে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে কঠোর তদারকীর প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়ের দাবি। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে পদ্মা সেতুর ওপর যানবাহন থামানো, হেঁটে চলাচল ও ছবি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এ নির্দেশনা দেয়ার পরও গতকাল পদ্মা সেতুতে দেখা গেছে অসংখ্য মানুষ উঠেছে, ছবি তুলেছে এবং যানবাহন থামিয়ে ছবি তুলছেন মানুষ। অবশ্য ছবি তোলার অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালত গতকাল একজনের জরিমানা করেছে বলে জানা গেছে। তবে গতকাল পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলামের সই করা চিঠি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট অ্যান্ড সেফটি টিমকে (ইএসএসটি) পাঠানো হয়েছে। এতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা জোরদারে টহল বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল থেকে টোল দিয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। যান চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকেই অনেকে আবার ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল সেতুর পাশে রেখে ছবি তুলছেন। কেউ আবার যানবাহন চলাচলরত অবস্থায় সেতুতে ছবি ও সেলফি তুলছেন। যানবাহন চলাচল শুরুর পর থেকেই পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাবাহিনী লোকজনকে বারবার সেতুতে গাড়ি থামাতে নিষেধ করে মাইকিং করছে। তারপরও উৎসুক জনতা সেতুতে গাড়ি থামিয়ে সেলফি এবং ছবি তুলছিলেন।
সরেজমিনে সেতুর মধ্যভাগে দেখা যায়, সেতু প্রশাসনের লোকজন দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি ও মানুষজনকে সেতু থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন। শেষ বিকেলের দিকে সেতুতে ছোট গাড়ি ও মোটরসাইকেল চলাচল অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সেতুতে গাড়ি রেখে ছবি তুলতে না পারলেও চলমান ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলে চড়ে যাত্রীরা ছবি তুলছেন। মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে এসেছেন অনেকে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পদ্মা সেতুর ওপর যানবাহন থামানো নিষেধ। সকল নাগরিককে পদ্মা সেতু পারাপারের জন্য সরকার নির্ধারিত হারে টোল প্রদান করতে হবে। সর্বসাধারণকে টোল প্রদান করে সেতু পার হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। এছাড়া, পদ্মা সেতুর উপর সকল ধরনের যানবাহন থামানো, হেঁটে চলাচল করা ও ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং আইনগতভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ। এই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার জন্য সর্বসাধারণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো যাচ্ছে। জানতে চাইলে রোববার বিকালে সাড়ে ৬টায় ঘটনাস্থল থেকে পদ্মসেতু দক্ষিণ থানার এএসআই সোহেল রানা ইনকিলাবকে বলেন, দর্শনার্থীরা কিছুই মানছে না। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সবাই সেতুর উপরেই উঠে গেছে। দুপুর থেকে এসপি স্যারের নেতৃত্বে পুলিশ কাজ করছে। তারপরও কাউকে সেতুর উপর থেকে নামানো যাচ্ছে না। অভিযানে একজন ম্যাজিস্ট্রেটও রয়েছেন। ইতোমধ্যেই অনেকেই আটক করা হয়েছে। তবে তাদের জরিমানা করা হয়েছে কি না এখনো জানা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সেতুর নামফলক উন্মোচনের আগে যানবাহন পদ্মা সেতু পারাপারের সময় থামানো যাবে না গাড়ি, যানবাহন থেকে নেমে সেতুতে তোলা যাবে না ছবি, করা যাবে না হাঁটাহাঁটি এই নির্দেশনাগুলো দিয়েছিল বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। সেতু উদ্বোধনের পরপরই সে নির্দেশনা কাগুজে বিষয়ে পরিণত হয়। উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বিপুলসংখ্যক মানুষ উঠে পড়েন মূল সেতুতে। তাদের নামাতে বলপ্রয়োগ করতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল রোববার ভোরে সেতুতে যান চলাচল শুরু হওয়ার পরও একই চিত্র দেখা যায়। যে যার মতো করে সেতুতে হাঁটাহাঁটি করছেন; তুলছেন ছবি। কেউ আবার এক ধাপ এগিয়ে সেতুর রেলিংয়ে বসে দিচ্ছেন পোজ। কেউ সেতুতে শুয়ে পোজ দিচ্ছেন। যানবাহন থামিয়ে শত শত লোক সেতুতে ঘোড়ঘুড়ি করছেন। একজনকে দেখা গেল সেতুর নাটবল্টু হাত দিয়ে খুলে প্রদর্শন করছেন; বলছেন, ‘এই হলো পদ্মা সেতু। চালু হওয়ার দিনই এমনিতেই হাত দিয়ে নাটবল্টু খোলা যাচ্ছে’। এ যেন নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা।
সরেজমিন দেখা যায়, সাধারণের জন্য খুলে দেয়ার পর গণপরিবহন ছাড়া অন্য প্রায় সব গাড়িকে সেতুতে থামাতে দেখা যায়। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটাহাঁটির পাশাপাশি তুলেছেন ছবি। মাইক্রোবাস ভাড়া করে পরিবার নিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে আসেন মো. তোফাজ্জল হোসেন। গাড়িটি দাঁড় করিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে পরিবারের ১৪ সদস্য সেতু ঘুরে দেখেন; তোলেন দলবদ্ধ ছবি। মো. তোফাজ্জল সাংবাদিকদের বলেন, যেদিন সেতু উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছে, আমরা সেদিনই ঠিক করেছি প্রথম দিনই সেতু দেখতে আসব। এ জন্য আমার মা, খালা, ফুপুসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি। সারা দিন ঘুরে আবার কুমিল্লা ফিরে যাব। নিয়মে ভাঙার প্রসঙ্গ টানলে তিনি বলেন, দেখেন আমরা তো কত অনিয়মই করি। এতদিনের ইচ্ছা স্বপ্নের সেতুতে এসে দাঁড়াব। নিজের স্বপ্নপূরণে একটু অনিয়ম করা দোষের কিছু না। সেতু নিয়ে আমাদেরও তো আবেগ রয়েছে।
পরিবার নিয়ে মাইক্রোবাসে গোপালগঞ্জ যাচ্ছিলেন শিক্ষক নিহার রঞ্জন দাস। তাদের মাইক্রোবাস সেতুতে গাড়ি দাঁড় করিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নেমে পড়েন এ শিক্ষক। সেলফি তোলাসহ ভিডিও ধারণ করেন সেতু ও নদীর। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি গোপালগঞ্জ যাচ্ছি। আজকেই যেহেতু সেতু খুলে দেয়া হলো, তাই সেতুতে দাঁড়ানোর সুযোগটা মিস করতে চাইনি। এটা আমাদের অনেক বড় একটা স্বপ্নের বাস্তবায়ন। কে না চায় স্বপ্ন সত্যি হলে সেটা দুই চোখ ভরে দেখতে? এটা ঠিক আমরা নিয়ম ভাঙছি, কিন্তু এই সুযোগ আর কখনও নাও পেতে পারি, তবে সরকারের উচিত ছিল কয়েক দিন মানুষকে দেখতে সুযোগ দেয়ার, কারণ সবারই আগ্রহের কেন্দ্র এখন পদ্মা সেতু।
মাওয়া পয়েন্ট থেকে জাজিরা পয়েন্ট পর্যন্ত দেখা মিলল শত শম মানুষ সেতুতে উঠে উল্লাস করছে। মোড়ট সাইকেলের যেন প্রতিযোগিতা চলছে। সেতুতে উঠে উচ্ছ্বাসে প্রাণঝুঁকির কথা ভুলে যাওয়া এক যুবকের। নাম তার মো. হৃদয়। বসা ছিলেন সেতুর রেলিংয়ের ওপর। কাছে গিয়ে কথা জানা গেল, হৃদয় ঢাকা থেকে নিজের মোটরসাইকেল চালিয়ে এসেছেন সেতু দেখতে। তার সঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছেন কয়েক বন্ধু। কথাগুলো বলার সময় রেলিয়ের ওপরই বসা ছিলেন হৃদয়। রেলিংয়ে বসা নিয়ে প্রশ্ন করতেই সেখান থেকে নেমে পড়ে তিনি বলেন, ‘একটা ছবি তোলার জন্য বসছিলাম। ভুল হয়ে গেছে।’
সাধারণদের নিয়ম ভাঙার এ খেলা বন্ধ করতে সাইরেন বাজিয়ে সেতুর উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছে টহল গাড়ি। থেমে থাকা গাড়ি বা মানুষকে দাঁড়াতে দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন পেট্রলম্যান। কখনো অনুরোধ করে, আবার কখনো গলা চড়িয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন নিয়মকে থোড়াই কেয়ার করা লোকজনকে।
সেতুর পেট্রলম্যান সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমি গাড়ি নিয়ে শুধু ছুটেই যাচ্ছি। পাবলিক কোনো কথা শোনে না। এক জায়গার মানুষের গাড়ি সরাচ্ছি, অন্য জায়গায় আবার দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার অনুরোধও শুনছেন না। তখন বাধ্য হয়ে আমি তাদের গাড়ির কাগজ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে নিচ্ছি। জানিয়ে দিচ্ছি সেতু থেকে নেমে যাওয়ার পর আমি এগুলো ফেরত দেব। কথা না শুনলে কী আর করতে পারি বলেন? এখানে নিয়ম ভাঙলে জরিমানার বিধান রাখা হয়নি।
এদিকে গতকাল পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলামের সই করা চিঠি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট অ্যান্ড সেফটি টিমকে (ইএসএসটি) পাঠানো হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তায় নির্মাণকাজের শুরু থেকেই ইএসএসটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে প্রকল্প পরিচালক বলেন, সেতুর ওপরে যানবাহন থেকে নামা নিষিদ্ধ। এরপরও অনেকে সেতুতে নেমে মূল্যবান মালামাল ও যন্ত্রপাতি চুরি করছে। অনেকে দুই দিকের টোল প্লাজার আশপাশে যন্ত্রপাতি ও মালামালের ক্ষতি করছে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে ইএসএসটিকে টহল জোরদার করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সেতু বিভাগ সূত্র বলছে, সেতুর আশপাশে এখনো নানা নির্মাণসামগ্রী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। টোল প্লাজার কাছে চারপাশে বেড়া দেওয়ার কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। ফলে বাইরে থেকেও অনেকে ঢোকার চেষ্টা করছে। আর গাড়ি- মোটরসাইকেল থামিয়ে সেলফি তোলা, শুয়ে পড়ে ছবি তোলা, ঝুলে রেলিংয়ে ওঠার চেষ্টা করা এসব দেখা যাচ্ছে। এতে একদিকে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এ ছাড়া মালামাল চুরির ঘটনাও হচ্ছে। এ জন্য সাধারণ মানুষের নামার বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা আছে, তা কঠোরভাবে কার্যকরের বিষয়ে সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের বলেন ,পদ্মা সেতুতে গাড়ি থেকে কেউ নামতে পারবেন না। যদি গাড়িতে চড়া অবস্থা কেউ ছবি তুলে তাতে সমস্যা নেই।
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাবিবা ফারজানা বলেন, রোববার শিথিল থাকলে সোমবার থেকে আমরা কঠোর হবো। সেতুতে উঠে ছবি তুললে, আড্ডা দিলে কিংবা গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে গল্প করলে জরিমানা করা হবে। যেসব বাইকচালক নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে বাইক চালাবেন, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।