পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। খন্দকার আনোয়ার পদ্মা সেতুর কারণেই তার ক্যারিয়ারের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছেছেন বলে মনে করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পদ্মা সেতু নিয়ে ঘটনাপ্রবাহের আগে তিনি অনেকটাই আলোচিত এবং উপেক্ষিত ছিলেন। ১৯৮৩ সালের ব্যাচের কর্মকর্তা খন্দকার আনোয়ার। এছাড়া চীন- জাপান ও ভারতে কর্মকর্তাদের সাথে পদ্মা সেতুর জন্য একাধিক সভা করেছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল শনিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত এগারো বছর তিনি দৃঢ় প্রত্যয়, দূরদর্শিতা এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নইলে এই সেতু নির্মাণে বিশ বছর সময় লাগতো। খরচ হতো ১৫ বিলিয়ন ডলার। এটা এই সময়ের মধ্যে, নির্ধারিত এই কস্টের মধ্যে এবং আমাদের মর্যাদা উন্নত রেখে আমাদের এই প্রজেক্টটা যে সম্পন্ন করতে পেরেছি তার প্রধান এবং একমাত্র কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনারা বাইরে থেকে তার দৃঢ়তা, সংকল্পের কথা শুনেছেন আর আমরা তা প্রত্যক্ষভাবে দেখেছি।
সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মনে করেন, সেতুর মাধ্যমে সরকার প্রধান পুরো জাতিকে ‘একতাবদ্ধ করেছেন। আমরাও আশা করবো প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ ও জাতি গঠনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিব ইনশাআল্লাহ। পদ্মা সেতু প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। দেশের দীর্ঘতম এই সেতুতে গাড়ি ও রেল দুটোই চলবে। নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে যা শেষ হল সাত বছরে।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যখন প্রথম উপজেলা ব্যবস্থা চালু করেন তখন উপজেলায় ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য তড়িঘড়ি করে একটি বিসিএস পরীক্ষার আয়োজন করা, যে বিসিএস ব্যাচটি টিকমার্ক দিয়ে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তখন কথা ছিলো যে, শুধুমাত্র তারা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই ব্যাচের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয় এবং এই রিটে তারা বিজয়ী হয়ে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে যুক্ত হয় ৮৩ এর এই ব্যাচটি। এই ব্যাচের অনেক মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে অনেকেই এই ব্যাচ থেকে নানাভাবে আলোচিত হন। আবার এই ব্যাচ থেকেই মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট জালিয়াতি বা বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অবসরেও গেয়েছেন। তবে সবার আলোচনা-সমালোচনা বিতর্কের উর্ধ্বে ছিলেন খন্দকার আনোয়ার। তিনি নিভৃতে কাজ করতেন। কিন্তু যখন পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয় এবং তৎকালীন যোগাযোগ সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করা হয়, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, ঠিক সেই সময়ে খন্দকার আনোয়ারকে দেওয়া হয় সেতু বিভাগের দায়িত্বে।
খন্দকার আনোয়ার একজন সৎ, পরিশ্রমী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অনেকেই তাকে কোনো ঘরোনার নয়, কর্ম পাগল একজন ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করতো। কিন্তু সেতু মন্ত্রণালয়ের পান তিনি পদ্মা সেতু নিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় মধ্যে। এরকম পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়ে তিনি তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়টি পার করেন। মূলত তার বিচক্ষণতা, কর্ম তৎপরতা এবং সততার কারণে পদ্মা সেতু নিয়ে নতুন কোনো বিতর্ক হয়নি বলে অনেকে মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর যে আস্থা রেখেছিলেন সেই আস্থার প্রতিদান তিনি খুব ভালমতোই দেন। প্রশাসন ক্যাডারে এই কর্মকর্তার ক্যারিয়ার বদলে দেয়। পদ্মা সেতুর সাফল্যের কারণেই সেতু বিভাগ থেকে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব হন, যদিও আমলাতান্ত্রিক হিসাব-নিকাশে তার মন্ত্রিপরিষদ সচিব হওয়ার কথা ছিল না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব হওয়ার পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর আরও আস্থাভাজন হন। এজন্য তিনি দুদফা চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। তার সততা, যোগ্যতাই তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। যেটি সম্ভব হয়েছে পদ্মা সেতুর কারণে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বিসিএস ১৯৮২ (বিশেষ) ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। তিনি কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিশ্বব্যাংক, ইউএনএফপিএ, এডিবি, সিআইডিএ, ডিজিআইএস, ইউএনডিপি এর অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে উপপরিচালক, উপ-প্রকল্পপরিচালক, প্রকল্প পরিচালক এবং জাতীয় প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও তার রয়েছে। তিনি দাপ্তরিক প্রয়োজনে ইউএসএ, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানী, স্পেন, ইতালী, মরোক্কো, সুইডেন, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিশর, তুরস্ক, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, চীন, জাপান, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস এবং কেনিয়া সফর করেছেন। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ বিভাগ হতে বিএসএস (অনার্স) এবং এমএসএস ডিগ্রী অর্জন করেন। ডেভলপমেন্ট প্ল্যানিং এর উপরে তাঁর একটি পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমাও করেছেন। তার স্ত্রী কামরুন নাহার বাংলাদেশ সরকারের সচিব ছিলেন। তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।