Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার রেকর্ড

মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ে সমাজ আজ থর থর করে কাঁপছে। ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, নারী ও শিশুর প্রতি সংহিসতা ভয়ানকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে কিশোরী ধর্ষণ, তরুণী ধর্ষণ, হত্যা ও শিশু নির্যাতনের খবর। ৫ বছরের শিশুরা পর্যন্ত ধর্ষিত হচ্ছে। তাছাড়া ধর্ষণ থেকে বাদ যাচ্ছেন না মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরাও।
অন্যদিকে অভিভাবক ও সুবিধাবাদী কিছু মানুষও পরোক্ষভাবে শিশুদের ওপর করছেন এক ধরনের নির্যাতন। শিশুদের দিয়ে করানো হচ্ছে অমানবিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। আবার অভিভাবকরা ৫-৭ কেজি ওজনের একটি স্কুল ব্যাগ শিশুদের পিঠে ঝুলিয়ে দিচ্ছেন, যা বহন করতে গিয়ে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে হয়ে পড়ছে অসুস্থ। এজন্য অনেক শিশু কোমর ও মেরুদ- সোজা করে দাঁড়াতে পারে না। এটাও এক ধরনের নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে। এক কথায় অসহায় শিশু, কিশোরী ও তরুণীরা আজ সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা পাচ্ছে না; সমাজ ও রাষ্ট্র যেন তাদের কাছে হয়ে পড়ছে এক আতঙ্কের নাম।
মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ধাক্কায় তিলে তিলে গড়ে ওঠা সোনার সংসার মুহূর্তেই ভেঙে যাচ্ছে। সবচেয়ে নিরাপদ ও আস্থার জায়গা পরিবারের ভেতরই নারী সদস্যরা নিজেদের নিরাপত্তাহীন মনে করছেন। বাংলাদেশে আজ স্বামীর কাছে স্ত্রী নিরাপদ নয়, স্ত্রীর কাছেও নিরাপদ নয় স্বামী। নিরাপদ নয় মায়ের কাছে সন্তান এবং সন্তানের কাছে মা। এমনকি শিক্ষকের কাছেও নিরাপদ নয় শিক্ষার্থী। অপরূপা রূপসীরাও তাদের ভালোবাসার স্বামীদের হাতে প্রাণ দিচ্ছেন। নয়ন জুড়ানো, প্রাণ ভরানোর মতো আদরের সন্তানকেও তার আপন মমতাময়ী মায়ের হাতে জীবন দিতে হচ্ছে, যা মনুষ্যত্বকে রীতিমত স্তম্ভিত ও হতবাক করছে; নিজ পরিবারের ভেতর যদি মানুষের নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে আলোকিত বা ভালো মানুষ কীভাবে তৈরি হবে?
গত কয়েক দিনে দেশে শিশু হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণের বীভৎস ও ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। গোপালগঞ্জে ৭ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করেছে ৭০ বছরের বৃদ্ধ, দিনাজপুরে ধর্ষিত হয়েছে ৫ বছরের এক শিশু, রাজশাহীর বাটারায় ধর্ষিণের শিকার হয়েছে ৫ বছরের এক শিশু, নাটোরেও ধর্ষিত হয়েছে ৫ বছরের এক শিশু, ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ৪ বছরের শিশুর গলিত লাশ উদ্ধার হয়েছে। রংপুরে ধর্ষিত হয়েছে ২ তরুণী, সাভারে এক তরুণীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে এক তরুণ। সিলেটে খাদিজাকে নির্মম, নিষ্ঠুরভাবে কুপিয়েছে এক তরুণ। কিছু দিন আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মেয়েকে যৌন নির্যাতনে বাধা দেয়ায় মাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সালমা আক্তার নামে এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। রাজবাড়ীতে এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে এক পাষ-। মাদারিপুরে এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। নরসিংদীর রায়পুরায় কয়েক যুবক মিলে এক শিশুকে গণধর্ষণ করেছে। ফরিদপুরে ধর্ষিত হয়েছে এক শিশু। নীলফামারিতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক শিশু। নাটোরে এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের শিশু মেয়েকে তার স্কুল থেকেই ধরে নিয়ে গেছে এক বখাটে যুবক। ঢাকার মিরপুরে বেড়িবাঁধের ওপর এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। পটুয়াখালীর দশমিনায় ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রী ধর্ষিত হয়েছে। মৌলভী বাজারের কুলাউড়ায় এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক করা হয়েছে ধর্ষককে। ঢাকায় ধর্ষিত হয়েছে কর্মজীবী দুই তরুণী।
যশোরের কেশবপুরে দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছে ধর্ষক। ঢাকার মিরপুরে এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। রংপুরে ৬ বছরের এক শিশু ধর্ষিত হয়েছে এক মধ্যবয়সী বীর পুরুষের হাতে! কুষ্টিয়ায় এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। নোয়াখালিতেও ধর্ষিত হয়েছে এক শিশু। হবিগঞ্জ, মাধারীপুর, গাইবান্ধা, চাঁদপুর ও সিরাজগঞ্জে পৃথকভাবে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
তাছাড়া টাঙ্গাইলে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে এক কিশোরী। চট্টগ্রামের খুলশীতে কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এক কর্মজীবী মহিলাকে চারজন মুখ বেধে ধর্ষণ করে। হবিগঞ্জের মাধবপুরে এক গামেন্টস শ্রমিককে গণধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। মিঠপুকুরে এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের পর ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখে কতিপয় বখাটে যুবক। কুমিলার চৌদ্দগ্রামে গামেন্টকর্মী দুই বোনকে চোখ ও মুখ বেধে ১০-১২ জন মিলে গণধর্ষণ করে। উল্লাপাড়ায় এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলন্তবাসে এক গামেন্টকর্মীকে ধর্ষণ করেছে বাসের চালক ও হেলপার। পিরোজপুরের কাউখালিতে কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে জামির নামে এক লম্পট। ঢাকার উত্তরায় এক গৃহকর্মীকে ধর্ষণের হত্যা করা হয়। সূত্র বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেল।
লক্ষণীয় মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদেরও নৈতিক অধঃপতন ভয়ানক পর্যায়ে পৌঁছেছে। একজন শিক্ষকের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ আর কে গ্রহণ করে? অসংখ্য ছাত্রছাত্রীকে গড়ে তুলতে যে অপরিসীম জীবনী শক্তি লাগে তা তো কেবল একজন শিক্ষকেরই থাকে। সে শিক্ষক কীভাবে পারেন ছাত্রীকে ধর্ষণ করতে? কীভাবে ছাত্রীদের ফাঁদে ফেলে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেন?
গেল কিছু দিন আগে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শহিদ বীর উত্তম আনোয়ার গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষকের বিরুদ্ধে তারই এক এসএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে, শিক্ষকের নাম তারাকচন্দ্র ম-ল। ধর্ষণের অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহযোগী অধ্যাপককে আটক করেছে পুলিশ। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং একজন প্রধান শিক্ষক ছাত্রীর শ্লীলতাহানী করেছেনÑ এমন খবরও পত্রপত্রিকায় দেখা যায়। পাবনায় এক স্কুল শিক্ষককে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। মানিকগঞ্জে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে এক শিক্ষককে পুলিশে দিয়েছে জনতা।
শিক্ষকদের এই অনভিপ্রেত, পাশবিক এবং ন্যক্কারজনক আচরণ থেকে পরিষ্কার একটি সিগনাল পাওয়া যাচ্ছে যে, মনুষ্যত্বের কী ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে চলেছে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে।
উপরোল্লেখিত পরিসংখ্যান বাস্তবতার একটি খ-চিত্র মাত্র। সমগ্র দেশের প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ। এভাবে একটার পর একটা লোমহর্ষক, বীভৎস ও পৈশাচিক, পারিবারিক এবং সামাজিক ট্র্যাজেডি ঘটে চলেছে বাংলাদেশে। এসবের জন্য আমরা কাকে দায়ী করব, নিশ্চয় শাসনকে; আর শাসন করেন কার্যত যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন তারাই। দেশে সুশাসন থাকলে এমনটি হওয়ার কথা নয়। প্রকাশ্যে একজন মানুষকে যখন কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে অপরাধীরা বীরের বেশে চলে যায়, তখন সমাজে অপরাধ করতে অন্যরাও উৎসাহ পায়।
দেশে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও পারিবারিক অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের অপব্যবহার এবং বিদেশি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ভূমিকা রয়েছে গাঁজা, ফেনসিডিল ও হেরোইনসহ অন্যান্য নেশাদ্রব্যের সহজলভ্যতারও। পারিবারিক মূল্যবোধের অভাব ও ধর্মীয় শিক্ষায় উদাসীনতাও সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বাংলাদেশে আজ অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের হাতে হাতে ইন্টারনেট সংযোগসহ মাল্টিমিডিয়া মোবাইল ফোন। এই ফোনগুলোতে অনায়াসে অশ্লীল ও পর্নোছবি ডাউনলোড করা যায়। সাথের বন্ধুদের নিয়ে নির্জন জায়গায় বসে এসব পর্নোছবি দেখে থাকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেরা। এ থেকেই তাদের মাঝে অপরাধ প্রবণতা জাগ্রত হচ্ছে। তারা জড়িয়ে পড়ছে ভয়ঙ্কর সব অপরাধের সঙ্গে। তাতে সমাজে বেড়ে যাচ্ছে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও নারী নির্যাতন। এ ব্যাপারে পরিবারের দায়িত্ব অপরিসীম। দায়িত্ব আছে রাষ্ট্রেরও।
ভালো মানুষ বা অন্য ভালো যা অর্জন, তা সর্বপ্রথম পরিবার থেকেই সূচিত হয়। সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা অনেকটা পরিবারের ওপর নির্ভর করে। একজন মানুষের প্রথম নিরাপত্তা তার পরিবারে। পরিবার বলতে টুকরো টুকরো পরিবার নয়, যৌথ পরিবার; যৌথ পরিবারে মানুষের মন-মনন ও নৈতিকতা-মূল্যবোধ এবং মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। আয়-উন্নতিও যৌথ পরিবারে বেশি হয়। সুতরাং যৌথ পরিবার গড়তে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে, রাষ্ট্রকে দিতে হবে সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা; রাষ্ট্রের সার্বিক শাসন কাঠামোও হতে হবে যৌথ পরিবার গড়ার মুখী।
বাংলাদেশে যৌথ পরিবারের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে বলে সমাজে দিন দিন ভয়ঙ্কর সব পারিবারিক অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পারিবারিক অপরাধ বৃদ্ধির ফলে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা অবনতির ক্ষেত্রেও তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ট্র্যাজেডি, বাড়ছে মাদকাসক্তির সংখ্যাও। পরিবারে সংঘটিত নেতিবাচক ঘটনার প্রভাব সমাজ ও রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রেই প্রতিফলিত হয়। পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের নেতিবাচক প্রভাব কোনো না কোনোভাবে রাষ্ট্রকেই বহন করতে হয়, বাংলাদেশে তা-ই হচ্ছে; রাষ্ট্রকে ‘ক্রসফায়ারের’ নামে প্রতিনিয়ত মানুষ খুন করেই টিকে থাকতে হচ্ছে।
গত কয়েক মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে ভয়ানক হারে পরিবার ভেঙে যাচ্ছে। এই পরিবার ভাঙার ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে এগিয়ে মেয়েরা। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের গত এক বছরের ‘ডিভোর্স রেকর্ড’ পর্যালোচনায় পরিবার ভাঙার ক্ষেত্রে এগিয়ে মেয়েরা। শতকরা সত্তর ভাগ তালাক আবেদন জমা পড়েছে মেয়েদের তরফ থেকে। শুধু ঢাকা সিটি কর্পোরেশনই নয়, সমগ্র বাংলাদেশের চিত্রও একই। পরিবার ভাঙার ঘটনা ছাড়াও, পরিবার একেবারে ধ্বংস করে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে মেয়েদের তরফ থেকে বেশি, যা সমাজ বিশেষকদের রীতিমত স্তম্ভিত ও হতবাক করছে।
বর্তমানে অবাধ তথ্যের রাজ্যে সব কিছুই বাধাহীন, আর তথ্যেও অবাধ বিচরণের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও বিদেশি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল। ফলে সমাজ জীবনে বয়ে নিয়ে আসছে বিপজ্জনক সব ভাইরাস, বয়ে নিয়ে আসছে অপসংস্কৃতি, অশ্লীল, উলঙ্গ ও বিকৃত সব ছবি। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের অপব্যবহার অন্যদিকে বিদেশি টিভি চ্যানেলগুলোর যতসব অশ্লীল ও আপত্তিকর অনুষ্ঠান, আরেক দিকে ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা ও আফিমসহ নেশার ছড়াছড়ি। এর সবই যদি হয় একটি রাষ্ট্রের যুব সমাজের জীবনাচরণের অনুষঙ্গ, তাহলে এ যুব সমাজের ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী, যা কোন আইন দিয়ে, শাসন দিয়ে ঠেকানো যাবে না।
তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফাঁক ফোকর বন্ধ করতে হবে, এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে; আর এর জন্য বেসরকারি সেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থাকা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে আরো জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। কারণ, মোবাইল ফোনেরই এখন সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার হচ্ছে।
সমাজে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে হলে, পরিবারের ভেতর ধর্মীয় অনুশাসন অপরিহার্য। শুধু ইসলাম নয়, প্রত্যেক ধর্মেই সৎ চরিত্র গঠনের নির্দেশনা দেয়া আছে। সন্তানদের ছোট থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা দেয়াও বাধ্যতামূলক। ধর্মীয় অনুশাসনে বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়েদের ‘অ্যানার্জি’ সঠিক পথে ব্যবহৃত হয়, তাদের অন্তর্নিহিত শক্তি হয় পরিশুদ্ধ। অন্যায়, পাপাচার, কাম-ক্রোধ মোহ ও যাবতীয় লোভ-লালসা এবং অযাচিত চাওয়া-পাওয়া তাদের মনোবৃত্তিকে দুর্বল করতে পারে না।
ধর্মীয় ও পারিবারিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী ছেলেমেয়েদের দর্শন ও মূল্যবোধ তৈরি হয় পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার আলোকে। তারা জানে অন্যের মা-বোনের ইজ্জত ও সম্ভ্রম নষ্ট হলে, অনুরূপ ইজ্জত ও সম্ভ্রম নষ্ট হবে তাদের মা-বোনদেরও। এটিই সামাজিক মূল্যবোধ, ভয় ও সামাজিক দায়বদ্ধতা। আর এটি তৈরি হয় মূলত ধর্মীয় অনুশাসন থেকে। সুতরাং সমাজের ক্ষীয়মান মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে হলে, ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি সবার মনোনিবেশ করা অত্যাবশ্যক।
ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায়, সর্বস্তরে এ আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে। সভা, সেমিনার গোলটেবিল বৈঠক, টিভি টকশো, মতবিনিময় সভা ইত্যাদির মাধ্যমে এই সামাজিক আন্দোলনের অপরিহার্যতার বিষয়টি ‘ফোকাসে’ আনতে হবে। এছাড়াও আলেম সমাজ, মাদরাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমামসহ সামাজিক দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এই কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে।
মানুষের মনে আজ মরচে ধরেছে। দেশের কোটি কোটি যুবক শরীরে বেঁচে থাকলেও তারা ভেতরে ভেতরে মরে গেছে। মরণঘাতী নেশা ও অপসংস্কৃতির ছোবল তাদের জীবনী শক্তি কেড়ে নিয়েছে। নেশা ও অপসংস্কৃতির মরণব্যাধি তাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। খাচ্ছে তাদের ইচ্ছাশক্তি, কল্পনাশক্তি, মেধাশক্তি, দৈহিক শক্তি ও মানসিক শক্তিকেও। যে দেশের যুব সমাজের বিরাট একটি অংশের এ পরিণতি, সে দেশের ভবিষ্যৎ কী? সে দেশটিকে বাঁচিয়ে রাখার উপায় কী? হ্যাঁ, উপায় আত্মজাগরণে ও মনুষ্যত্ব জাগরণে। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক্য, রাজনৈতিক ঐক্য ছাড়া এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে জাতিকে কোনোভাবেই বের করে আনা সম্ভব নয়।
লেখক : কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
[email protected]



 

Show all comments
  • liton ২৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৩১ এএম says : 0
    সময়োপযোগী লেখা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সমাজ

১৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ