Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কালিনিনগ্রাদকে ঘিরে রাশিয়ার সাথে ইউরোপের নতুন উত্তেজনা

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০২২, ২:১৭ পিএম

লিথুয়ানিয়া তার ভেতর দিয়ে রেলপথে কিছু পণ্য রুশ ভূখণ্ড কালিনিনগ্রাদে পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর রাশিয়া বাল্টিক ওই দেশটিকে তার এই সিদ্ধান্তের জন্য গুরুতর পরিণতি ভোগ করার হুমকি দিয়েছে।মস্কো বলছে লিথুয়ানিয়ার এই সিদ্ধান্তের জবাবে রাশিয়া এমন ব্যবস্থা নেবে যার ফলে ওই দেশের জনগণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে রাশিয়ার ‘জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ কালিনিনগ্রাদে কিছু কিছু পণ্য পরিবহনের ওপর লিথুয়ানিয়ার নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্তের পরেই রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রায় চার মাসের মাথায় ইউরোপের সঙ্গে রাশিয়ার নতুন এই উত্তেজনা তৈরি হলো। রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সাথে কালিনিনগ্রাদের স্থলপথে কোনো সংযোগ নেই। রুশ এই ভূখণ্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ ঘিরে রেখেছে। এই ভূখণ্ডটি রাশিয়া ১৯৪৫ সালে দখল করে নেয় যা তাদের জন্য কৌশলগতভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রেমলিন বলছে, লিথুয়ানিয়ার এই সিদ্ধান্ত ‘নজিরবিহীন’ এবং ‘বেআইনি’। তারা বলছে, এটি শত্রুতামূলক আচরণ এবং লিথুয়ানিয়াকে অবশ্যই এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘কালিনিনগ্রাদ এবং রুশ ফেডারেশনের বাকি অংশের সঙ্গে মালবাহী রেল চলাচল সম্পূর্ণভাবে শুরু করা না হলে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য রাশিয়ার পদক্ষেপ গ্রহণের অধিকার রয়েছে।’ তবে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে এবং কখন সেসব ব্যবস্থা নেয়া হবে সেবিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি।

বিবিসির রাশিয়া বিষয়ক সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গ বলছেন লিথুয়ানিয়ার এই সিদ্ধান্তে রুশ কর্মকর্তারা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়েছেন। তারা এটিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের মতো ঘটনা হিসেবেই দেখছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একজন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সোমবার বলেছেন, ‘পরিস্থিতি আসলেই গুরুতর এবং যেকোনো ব্যবস্থা কিম্বা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে গভীর বিশ্লেষণের প্রয়োজন। আগামী কয়েকদিন ধরে বিষয়টি বিশ্লেষণ করে দেখা হবে।’ তার একদিন পর মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট পুতিনের একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র নিকোলাই পাত্রুশেভ ‘রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে জাতীয় নিরাপত্তার’ বিষয়ে আলোচনার জন্য কালিনিনগ্রাদে গেছেন।

লিথুয়ানিয়ার বক্তব্য: পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোর সদস্য লিথুয়ানিয়ায় কর্তৃপক্ষ গত সপ্তাহে ঘোষণা করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যেসব পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সেসব পণ্য তারা তাদের ভূখণ্ডের ভেতর দিয়ে কালিনিনগ্রাদে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেবে না। লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েলিয়াস ল্যান্ডসবার্গিস বলেছেন, ‘এখানে লিথুয়ানিয়া নিজেরা কিছু করছে না। এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যা ১৭ জুন থেকে কার্যকর হওয়া শুরু হয়েছে।’

‘ইউরোপিয়ান কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে এই কমিশনের গাইডলাইন অনুসারেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে,’ বলেন তিনি। লিথুয়ানিয়ার এই সিদ্ধান্তের পরই রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মস্কোতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মারকাস এডেরারকে তলব করে। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের কারণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে লিথুয়ানিয়া শুধু সেগুলো বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, যেসব পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি সেগুলো কালিনিনগ্রাদে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যেসব পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞার আরোপ করেছে তার মধ্যে রয়েছে কয়লা, ধাতব পদার্থ, নির্মাণ সামগ্রী এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। কিন্তু রাশিয়া বলছে যে, এধরনের নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করা হয়েছে। কালিনিনগ্রাদ অঞ্চলের গভর্নর আন্তন আলিখানভ বলেছেন কালিনিনগ্রাদ যেসব পণ্য আমদানি করে তার ৫০ শতাংশ এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। ‘আমরা মনে করি কালিনিনগ্রাদের মুক্তভাবে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির যে অধিকার রয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা তার গুরুতর লঙ্ঘন,’ বলেন তিনি।

কালিনিনগ্রাদ কেন গুরুত্বপূর্ণ : রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কালিনিনগ্রাদ কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক ভূখণ্ড। রাশিয়ার বাল্টিক নৌবহরের সদর দপ্তর এই কালিনিনগ্রাদে। এর আগে মস্কো সেখানে পরমাণু অস্ত্র বহন করতে সক্ষম এরকম এক ক্ষেপণাস্ত্র ইস্কান্দর ব্যালিস্টিক মিসাইল মোতায়েন করেছিল। সূত্র: বিবিসি।



 

Show all comments
  • আকিব ২২ জুন, ২০২২, ২:৪১ পিএম says : 0
    বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো যদি সহানুভূতি বজায় রাখে, তাহলে সারা বিশ্বে শান্তিতে থাকবে। আর তারা যদি যুদ্ধ ও হানাহানি নিয়ে ব্যস্ত থাকে তাহলে বিশ্বে অশান্তি হয়ে পড়বে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ