Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কর আদায় মোবাইলে নিয়ে আসতে হবে: ড. আতিউর রহমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০২২, ৮:০৬ পিএম

দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অর্থ প্রয়োজন। আর সেই অর্থ আয় করতে হলে কর কাঠামো সহজ থেকে সহজতর করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় কর সংগ্রহ করা সম্ভব। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এনবিআর ও ব্যাংকগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে এটি সহজেই করা যায় বলে অভিমত জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান।
তিনি বলেন, আমাদের কর আদায় বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে মোবাইলে খুব সহজেই প্রতি মাসে যাতে কর দেয়া যায় সেই পদ্ধতি নেয়া যেতে পারে। বেতন থেকে একটি অংশও কেটে রাখার ব্যবস্থা নেয়া যায়। কেননা কানাডাসহ অনেক দেশেই এটি চালু আছে।
এ ক্ষেত্রে তিনটি প্রস্তাব রাখেন তিনি। বলেন, কর আদায় থানা/উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। ১. সমস্যা নিরসনে জনশক্তি নিয়োগ দেয়া ও মামলা হলে কোর্টে ভালো আইনজীবী দেয়া। ২. পারস্পারিক আলোচনা করে সমাধান করা। ৩. করে ডিজিটালাইজেশন করা। তথা অনলাইন মোবাইলে সহজে কর আদায় করা।
শনিবার মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস ও দৈনিক আনন্দবাজার আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩: পর্যালোচনা’ শীর্ষক ওয়েনিবারে এসব কথা বলেন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ত্রিশাল-ময়মনসিংহের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমান, ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি শারমীন রিনভী ও প্যানেল আলোচক ঢাকা পোস্টের জেষ্ঠ প্রতিবেদক আবদুর রহমান মাসুম। সংগঠনটির আহ্বায়ক ফারুক আহমাদ আরিফের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এনায়েতুল্লাহ কৌশিক, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জীম মণ্ডল।
তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তাখাতে আরো বাজেট বাড়াতে হবে। কোভিড-১৯, বন্যা ও নানা প্রাকৃতিক, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ^ অর্থনীতি আগামীতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বুঝা যাচ্ছে না। তাই এ মূহুর্তে মানুষের দুর্যোগ-দুর্ভোগ কমাতে সামাজিক নিরাপত্তাখাতে বরাদ্দ আরো বাড়াতে হবে। যদিও প্রস্তাবিত বাজেট ১৭ হতে ২০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয় এটি যথেষ্ট নয়। কেননা মানুষের বেঁচে থাকতে হলে এই খাতে বাজেট বৃদ্ধি দরকার।
ড. আতিউর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু শুধু আবেগের জায়গা নয় বরং এটি ভুটান, নেপাল, পশ্চিমবঙ্গ, আসামের সাথে উপ-আঞ্চলিক ব্যবসায়িক জোনে পরিণত হবে। ট্রান্স এশিয়া হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবো। সুতরাং আমাদের ব্যাংক, আইসিটি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রকল্পে স্টার্টআপের জন্য যে বাজেট আছে তার বিশাল একটি অংশ এখানকার মানুষের জন্য বিনিয়োগ করা দরকার। পাকিস্তানের ভারতের সঙ্গে ৭০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা ছিল সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা দূর থেকে পণ্য আনার চেয়ে কাছের দেশগুলো হতে পণ্য আনলে পারলে খরচ অনেক কমে যাবে। আর পদ্মা সেতুর কারণে বছরে ১.২৬ শতাংশ জিডিপিতে যুক্ত হবে, রেলে ১ শতাংশ, ২১ জেলায় ৩.৫ শতাংশ জিডিপি বাড়বে, ১.২ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বছরে ২ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এর প্রভাব পুরো অর্থনীতিতে পড়বে। মূলত পদ্মা রুপান্তরবাদী প্রকল্পে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, দিল্লিতে মেট্রোরেলের কারণে ১৮.৫০ শতাংশ জিডিপি বেড়ে গিয়েছিল। আমাদের মেট্রো রেল হলে আমাদের অবস্থাও এমন হবে। এখন দিনে ৩৮ লাখ কর্ম ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে ট্রাফিক জ্যামের কারণে। মেট্রো রেল হয়ে গেলে ৬০ হাজার মানুষ ঘণ্টায় যাতায়াত করতে পারবে। যাতায়াত ২ ঘণ্টার থেকে কমে ৪০ মিনিট হয়ে যাবে। এর প্রভাব দিল্লির মতো ঢাকাতেও পড়বে।
মাতারবাড়ী প্রকল্প সম্পর্কে বলেন, শিল্পে জাহাজের প্রভাব এখনো আমরা বুঝতে পারিনি। জাহাজে ৫-৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে পারলে এখানে বিপ্লব ঘটবে। কেননা এখন যে, ৫-৬ শতাংশ ভাড়া বেড়ে গেছে তা পুরোটাই বিদেশি লাইনের। তথা সিঙ্গাপুর হয়ে করতে হয়। চট্টগ্রাম হয়ে ইতালি বা অন্যান্য দেশে পোশাকপণ্য নিলে টাকাতেই তা পরিশোধ করা যেত। ডলারের ক্রাইসিস কমে যেত। এ জন্য নিজেরা জাহাজ ভাড়া করে চালু করতে পারলে আমদানি-রপ্তানিতে বিশাল ভূমিকা রাখবে।
তিনি স্বাস্থ্যে আরও ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়ে বলেন, এতে নিজের পকেট থেকে যে ৬৮ টাকা ব্যয় হয় সেখানে ৫১ টাকায় নেমে আসবে। তা ছাড়া শিক্ষায় প্রশিক্ষণবাবদ আরও বরাদ্দ প্রয়োজন।
ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ডলারের সংকট কাটিয়ে উঠতে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি বন্ধ করা উচিত। কিছুদিনের জন্য হলেও বন্ধ করা উচিত। রেগুলেটরি ডিউটি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কারণ এক শ্রেণির হাতে অঢেল টাকা রয়েছে, তাদের দাম বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
এ ব্যাপারে ড. আতিউর বলেন, ডলার সংকট নিরসনে ৬ মাস বিলাস বহুল পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয়া দরকার।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, কেমন করে বাস্তবায়ন হবে, তার ওপর নির্ভর করবে বাজেটের সাফল্য। আমাদের উচিত সম্পূরক বাজেটের আলোচনা করা। কি করেছি, কি করতে পারিনি সেটা দেখতে হবে। দেশে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নের কাজ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রকল্পে দ্রুত বাজেট বাড়ছে কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বরাদ্দ বাড়েনি। এখানে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। জাতীয় সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণেও বিনিয়োগ করতে হবে। যোগাযোগ ও জ্বালানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, যোগাযোগের ব্যাপারে আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ৮১১৫১ কোটি টাকা তথা ১২ শতাংশ এখাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১৩৪৯টি প্রকল্পের মধ্যে ২৫৬টি যোগাযোগ সংক্রান্ত। ৬টি নতুন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। গত বছরের রয়েছে ১১০টি যা শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০২২-২৩ শেষ হবে ৮৯টি এবং এর পরেও চলমান থাকবে তেমন হচ্ছে ৫১টি। এসবের কাজ শেষ হলে দেশের অর্থনীতিতে ফল আসে কিন্তু ১১০টি যা বহন করতে হচ্ছে এতে খরচ বাড়ে। তাই যথাসময়ে কাজ শেষ করাতে তদারকি বাড়াতে হবে।
অধ্যাপক মোস্তাফিজ বিদ্যুতের ডিস্ট্রিবিউশন এন্ড ট্রান্সমিশনের ঘাটতি ব্যাপারে বলেন, ডিস্ট্রিবিউশন সঠিকভাবে করতে না পারার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকা দিতে হচ্ছে। অথচ এসব কাজে আসছে না। ক্যাপটিপ পাওয়ারকে বাদ দিতে হবে।
হামিদুর রহমান বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও কৃষক হিসেবে বাজেটটিকে অভিনন্দন জানাই। আমার পর্যবেক্ষণে এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থা, যোগাযোগ ও শিল্পকে সামনে রেখে বাজেটটি করা হয়েছে।
তবে গ্রামীণ মানুষ চায় তিন বেলা পেট ভরে খাবার, সুচিকিৎসা ও তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য এই বিষয়গুলোর দিকে সরকারের সুদৃষ্টি দিতে হবে। তা ছাড়া কৃষক ও শ্রমিকের বরাদ্দকৃত বাজেট যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় সেটি নজর দিতে হবে।
শারমীন রিনভী বলেন, সর্বজনীন পেনশন এই বাজেটের ভালো দিক। ব্যবসায়ীদের করের হার কমানোও ভালো দিক বলবো তবে কালো টাকা ও পাচার করা অর্থ বিনা প্রশ্নে দেশে আনা প্রশ্নের বিষয়।
তিনি ওএমএস চালের ১০টাকা কেজিকে ১৫ টাকা করাকে দু:খজনক বলে চিহ্নিত করেন। বলেন, এই অবস্থায় কেজিতে ৫ বেড়েছে এটি খুব ভালো হয়নি। সরকার এটি নিয়ে চিন্তা করতে পারে।
আবদুর রহমান মাসুম বলেন, বর্তমান প্রায় ৮০ লাখ ব্যক্তির ইটিআইএন রয়েছে। যেহেতু প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন রিটার্ন জমার বড় চাপ আসবে। ২৫ লাখ করদাতা রিটার্ন দাখিল সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে এনবিআর। অফিস স্পেসের অভাব ও লোকবল সংকটের কারণে এমন অবস্থা। উপজেলায় পর্যায় যত দিন না নিজস্ব কর অফিস স্থাপন করা না যায় ততদিন উপজেলা হিসাবরক্ষণ অর্থাৎ অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টের সাথে সংযুক্ত করে আপাতত সংকট সমাধানে কর কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে আপাতত একসাথে কাজ করতে পারে। কারণ দুটি প্রতিষ্ঠানই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ। কর আদায় মোবাইলে নিয়ে আসতে হবে: ড. আতিউর রহমান

দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অর্থ প্রয়োজন। আর সেই অর্থ আয় করতে হলে কর কাঠামো সহজ থেকে সহজতর করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় কর সংগ্রহ করা সম্ভব। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এনবিআর ও ব্যাংকগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে এটি সহজেই করা যায় বলে অভিমত জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান।
তিনি বলেন, আমাদের কর আদায় বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে মোবাইলে খুব সহজেই প্রতি মাসে যাতে কর দেয়া যায় সেই পদ্ধতি নেয়া যেতে পারে। বেতন থেকে একটি অংশও কেটে রাখার ব্যবস্থা নেয়া যায়। কেননা কানাডাসহ অনেক দেশেই এটি চালু আছে।
এ ক্ষেত্রে তিনটি প্রস্তাব রাখেন তিনি। বলেন, কর আদায় থানা/উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। ১. সমস্যা নিরসনে জনশক্তি নিয়োগ দেয়া ও মামলা হলে কোর্টে ভালো আইনজীবী দেয়া। ২. পারস্পারিক আলোচনা করে সমাধান করা। ৩. করে ডিজিটালাইজেশন করা। তথা অনলাইন মোবাইলে সহজে কর আদায় করা।
শনিবার মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস ও দৈনিক আনন্দবাজার আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩: পর্যালোচনা’ শীর্ষক ওয়েনিবারে এসব কথা বলেন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ত্রিশাল-ময়মনসিংহের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমান, ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি শারমীন রিনভী ও প্যানেল আলোচক ঢাকা পোস্টের জেষ্ঠ প্রতিবেদক আবদুর রহমান মাসুম। সংগঠনটির আহ্বায়ক ফারুক আহমাদ আরিফের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এনায়েতুল্লাহ কৌশিক, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জীম মণ্ডল।
তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তাখাতে আরো বাজেট বাড়াতে হবে। কোভিড-১৯, বন্যা ও নানা প্রাকৃতিক, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ^ অর্থনীতি আগামীতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বুঝা যাচ্ছে না। তাই এ মূহুর্তে মানুষের দুর্যোগ-দুর্ভোগ কমাতে সামাজিক নিরাপত্তাখাতে বরাদ্দ আরো বাড়াতে হবে। যদিও প্রস্তাবিত বাজেট ১৭ হতে ২০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয় এটি যথেষ্ট নয়। কেননা মানুষের বেঁচে থাকতে হলে এই খাতে বাজেট বৃদ্ধি দরকার।
ড. আতিউর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু শুধু আবেগের জায়গা নয় বরং এটি ভুটান, নেপাল, পশ্চিমবঙ্গ, আসামের সাথে উপ-আঞ্চলিক ব্যবসায়িক জোনে পরিণত হবে। ট্রান্স এশিয়া হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবো। সুতরাং আমাদের ব্যাংক, আইসিটি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রকল্পে স্টার্টআপের জন্য যে বাজেট আছে তার বিশাল একটি অংশ এখানকার মানুষের জন্য বিনিয়োগ করা দরকার। পাকিস্তানের ভারতের সঙ্গে ৭০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা ছিল সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা দূর থেকে পণ্য আনার চেয়ে কাছের দেশগুলো হতে পণ্য আনলে পারলে খরচ অনেক কমে যাবে। আর পদ্মা সেতুর কারণে বছরে ১.২৬ শতাংশ জিডিপিতে যুক্ত হবে, রেলে ১ শতাংশ, ২১ জেলায় ৩.৫ শতাংশ জিডিপি বাড়বে, ১.২ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বছরে ২ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এর প্রভাব পুরো অর্থনীতিতে পড়বে। মূলত পদ্মা রুপান্তরবাদী প্রকল্পে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, দিল্লিতে মেট্রোরেলের কারণে ১৮.৫০ শতাংশ জিডিপি বেড়ে গিয়েছিল। আমাদের মেট্রো রেল হলে আমাদের অবস্থাও এমন হবে। এখন দিনে ৩৮ লাখ কর্ম ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে ট্রাফিক জ্যামের কারণে। মেট্রো রেল হয়ে গেলে ৬০ হাজার মানুষ ঘণ্টায় যাতায়াত করতে পারবে। যাতায়াত ২ ঘণ্টার থেকে কমে ৪০ মিনিট হয়ে যাবে। এর প্রভাব দিল্লির মতো ঢাকাতেও পড়বে।
মাতারবাড়ী প্রকল্প সম্পর্কে বলেন, শিল্পে জাহাজের প্রভাব এখনো আমরা বুঝতে পারিনি। জাহাজে ৫-৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে পারলে এখানে বিপ্লব ঘটবে। কেননা এখন যে, ৫-৬ শতাংশ ভাড়া বেড়ে গেছে তা পুরোটাই বিদেশি লাইনের। তথা সিঙ্গাপুর হয়ে করতে হয়। চট্টগ্রাম হয়ে ইতালি বা অন্যান্য দেশে পোশাকপণ্য নিলে টাকাতেই তা পরিশোধ করা যেত। ডলারের ক্রাইসিস কমে যেত। এ জন্য নিজেরা জাহাজ ভাড়া করে চালু করতে পারলে আমদানি-রপ্তানিতে বিশাল ভূমিকা রাখবে।
তিনি স্বাস্থ্যে আরও ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়ে বলেন, এতে নিজের পকেট থেকে যে ৬৮ টাকা ব্যয় হয় সেখানে ৫১ টাকায় নেমে আসবে। তা ছাড়া শিক্ষায় প্রশিক্ষণবাবদ আরও বরাদ্দ প্রয়োজন।
ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ডলারের সংকট কাটিয়ে উঠতে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি বন্ধ করা উচিত। কিছুদিনের জন্য হলেও বন্ধ করা উচিত। রেগুলেটরি ডিউটি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কারণ এক শ্রেণির হাতে অঢেল টাকা রয়েছে, তাদের দাম বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
এ ব্যাপারে ড. আতিউর বলেন, ডলার সংকট নিরসনে ৬ মাস বিলাস বহুল পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয়া দরকার।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, কেমন করে বাস্তবায়ন হবে, তার ওপর নির্ভর করবে বাজেটের সাফল্য। আমাদের উচিত সম্পূরক বাজেটের আলোচনা করা। কি করেছি, কি করতে পারিনি সেটা দেখতে হবে। দেশে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নের কাজ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রকল্পে দ্রুত বাজেট বাড়ছে কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বরাদ্দ বাড়েনি। এখানে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। জাতীয় সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণেও বিনিয়োগ করতে হবে। যোগাযোগ ও জ্বালানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, যোগাযোগের ব্যাপারে আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ৮১১৫১ কোটি টাকা তথা ১২ শতাংশ এখাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১৩৪৯টি প্রকল্পের মধ্যে ২৫৬টি যোগাযোগ সংক্রান্ত। ৬টি নতুন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। গত বছরের রয়েছে ১১০টি যা শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০২২-২৩ শেষ হবে ৮৯টি এবং এর পরেও চলমান থাকবে তেমন হচ্ছে ৫১টি। এসবের কাজ শেষ হলে দেশের অর্থনীতিতে ফল আসে কিন্তু ১১০টি যা বহন করতে হচ্ছে এতে খরচ বাড়ে। তাই যথাসময়ে কাজ শেষ করাতে তদারকি বাড়াতে হবে।
অধ্যাপক মোস্তাফিজ বিদ্যুতের ডিস্ট্রিবিউশন এন্ড ট্রান্সমিশনের ঘাটতি ব্যাপারে বলেন, ডিস্ট্রিবিউশন সঠিকভাবে করতে না পারার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকা দিতে হচ্ছে। অথচ এসব কাজে আসছে না। ক্যাপটিপ পাওয়ারকে বাদ দিতে হবে।
হামিদুর রহমান বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও কৃষক হিসেবে বাজেটটিকে অভিনন্দন জানাই। আমার পর্যবেক্ষণে এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থা, যোগাযোগ ও শিল্পকে সামনে রেখে বাজেটটি করা হয়েছে।
তবে গ্রামীণ মানুষ চায় তিন বেলা পেট ভরে খাবার, সুচিকিৎসা ও তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য এই বিষয়গুলোর দিকে সরকারের সুদৃষ্টি দিতে হবে। তা ছাড়া কৃষক ও শ্রমিকের বরাদ্দকৃত বাজেট যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় সেটি নজর দিতে হবে।
শারমীন রিনভী বলেন, সর্বজনীন পেনশন এই বাজেটের ভালো দিক। ব্যবসায়ীদের করের হার কমানোও ভালো দিক বলবো তবে কালো টাকা ও পাচার করা অর্থ বিনা প্রশ্নে দেশে আনা প্রশ্নের বিষয়।
তিনি ওএমএস চালের ১০টাকা কেজিকে ১৫ টাকা করাকে দু:খজনক বলে চিহ্নিত করেন। বলেন, এই অবস্থায় কেজিতে ৫ বেড়েছে এটি খুব ভালো হয়নি। সরকার এটি নিয়ে চিন্তা করতে পারে।
আবদুর রহমান মাসুম বলেন, বর্তমান প্রায় ৮০ লাখ ব্যক্তির ইটিআইএন রয়েছে। যেহেতু প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন রিটার্ন জমার বড় চাপ আসবে। ২৫ লাখ করদাতা রিটার্ন দাখিল সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে এনবিআর। অফিস স্পেসের অভাব ও লোকবল সংকটের কারণে এমন অবস্থা। উপজেলায় পর্যায় যত দিন না নিজস্ব কর অফিস স্থাপন করা না যায় ততদিন উপজেলা হিসাবরক্ষণ অর্থাৎ অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টের সাথে সংযুক্ত করে আপাতত সংকট সমাধানে কর কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে আপাতত একসাথে কাজ করতে পারে। কারণ দুটি প্রতিষ্ঠানই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ড. আতিউর রহমান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ