Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাংকে নৈতিকতা সমাজের সার্বিক সুশাসন ও মূল্যবোধের ওপর নির্ভর করে

বিআইবিএমে ১৯তম নুরুল মতিন মেমোরিয়াল লেকচারে ড. আতিউর রহমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৮:২৬ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ব্যাংকে নৈতিকতা এককভাবে কাজ করতে পারে না। এটা নির্ভর করে সার্বিক সমাজের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ওপর।

রোববার (২ ফেব্রæয়ারি) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে ১৯তম নুরুল মতিন মেমোরিয়াল লেকচার ‘ইথিকস ইন ব্যাংকিং’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএম গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএম’র মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিআইবিএম’র প্রফেসর এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী।

মূল প্রবন্ধে ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্যতা দ্রæত কমে যাচ্ছে। এমডিজি’র লক্ষ্যগুলো ভালোভাবে অর্জন করেছি। এখন এসডিজি’র কয়েকটি লক্ষ্য ভালো অগ্রগতি হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসব লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। মানব উন্নয়ন সূচকে পার্শ্ববর্তী উচ্চ আয়ের দেশগুলোর তুলনায় ভালো অর্জিত হয়েছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের। চলমান উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারলে আগামী বছরে বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, উচ্চ এবং উন্নয়নশীল যে কোন অর্থনীতিতে অর্থায়নের মূল বিষয় হলো বিশ্বাস। এ বিশ্বাস স্থাপন করা সম্ভব হলেই ব্যাংক, নন -ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগ করবে। তবে এক্ষত্রে আর্থিক ঝুঁকিগুলো মূল্যায়ন করতে হবে।

গভর্নর ফজলে কবির বলেন, আর্থিক অর্ন্তভুক্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্ত আর্থিক অবকাঠামো বিনির্মাণে গুরুত্ব দিচ্ছে যাতে আর্থিক ঝুঁকি হ্রাস পায়। যাতে দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের জীবন যাত্রার মান অনেকাংশে বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, আর্থিক অর্ন্তভুক্তির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং সেবাকে গ্রাম এবং শহরের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এজেন্ট এবং বুথ ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনকি পথশিশুদের ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনা, মেলার আয়োজন এবং পুনঃঅর্থায়ন স্কীমের কারণে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা মানুষরা এখন ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছে।

 

বিআইবিএম’র মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিআইবিএম প্রতিবছর এ, এফ, এম, নুরুল মতিন স্মরণে মর্যাদাপূর্ণ স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে। এ বছর ১৯তম স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রত্যেক বছর নৈতিকতার বিষয়ে নতুন বার্তা পেয়ে থাকি। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান মহোদয়ের বক্তৃতা ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে।

উল্লেখ্য, এ. এফ.এম. নুরুল মতিন ১৯২৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫১ সালে তদানিন্তন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের গবেষণা বিভাগে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে তাঁর চাকুরী ঐ ব্যাংকের অপারেশন বিভাগে স্থানান্তরিত হয়। তাঁর দীর্ঘ ব্যাংকিং জীবনে তিনি স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে নির্বাহী পরিচালক, ইক্যুইটি পার্টিসিপেশন ফান্ড এর নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর সহ বহু ঊর্দ্বতন পদমর্যাদায় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এর পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিআইবিএম এর একজন প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। তিনি শুধু একজন দক্ষ কর্মকর্তাই ছিলেন না বরং একজন সম্মানিত ও নিষ্ঠাবান চরিত্রের লোক ছিলেন।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকেই বাংলাদেশের ব্যাংকিং পরিকাঠামো নির্মাণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখেন। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনালাইজেশন অর্ডার ১৯৭২ প্রনয়ণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সত্তর দশক এবং পরবর্তীতে ব্যাংকিং খাতের উন্নতির জন্য নীতি নির্ধারণী বিষয়ে তাঁর অবদান উচ্চ মহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তিনি ১৯৭৮ সালে ব্যাংকিং খাতে তার অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। ব্যাংকিং খাতে তাঁর এই অসামান্য অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা শীর্ষক এ মেমোরিয়াল লেকচার ১৯৯৭ সাল থেকে চালু করেছে বিআইবিএম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ড. আতিউর রহমান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ