চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
হজ্জের আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা করা, সফর, ভ্রমণ করা। ইসলামি পরিভাষায় হজ হলো নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত স্থানে বিশেষ কিছু কর্ম সম্পাদন করা। হজ্জ ইসলামের অন্যতম একটি ফরজ বিধান এবং তা অবশ্য পালনীয় । ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ অন্যতম। আর এটি বান্দার অর্থ-সম্পদ ও শারীরিক শক্তিমত্তা উভয়ের সাথেই সম্পৃক্ত। অর্থাৎ এই ইবাদত পালন করতে সম্পদ এবং শারীরিক শক্তি সামর্থ্য দুটোই প্রয়োজন।
এখন প্রশ্ন জাগতে পারে কাদের উপর হজ ফরজ? এবং এটা কি যাকাতের মতোই প্রত্যেকে বছর ফরজ নাকি জীবনে একবার অতি সংক্ষেপ বলতে গেলে, যে সমস্ত মানুষ পুরুষ হোক বা নারী, অর্থ-সম্পদ ও শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য উভয় দিক মিলিয়ে বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, কেবল তাদের জন্যই আল্লাহ হজকে ফরজ করেছেন। পর্যায়েক্রমে তা দলিল প্রমাণের ভিত্তিতে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
হজ কতো হিজরি সনে ফরজ হয়, সে ব্যাপারে সামান্য মতভেদ আছে ইমামগনের মাঝে। ষষ্ঠ হিজরি, নবম হিজরি, এবং দশম হিজরি এই কয়েকটি মত পাওয়া যায়। তবে এদের মধ্যে নবম হিজরির মতটিই অধিক নির্ভরযোগ্য। হজ ফরজ হওয়া প্রসঙ্গে কোরআনের বাণীথঅর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ; আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও হযরত ইসমাঈল (আ.) কে দিয়ে বায়তুল্লাহ শরীফের পুনঃনির্মাণের কাজ সমাপ্ত করার পর, হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে লোকদের মাঝে হজের ঘোষণা করার নির্দেশ দিলেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে;আর তুমি মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দাও,তারা তোমার নিকট আসবে পায়ে হেঁটে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উটের পিঠে করে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। (সূরা হজ, আয়াত-২৭)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে; তাতে রয়েছে মাকামে ইবরাহীম এর মতো সুস্পষ্ট নিদর্শন। যে কেউ তাতে প্রবেশ করবে সে নিরাপত্তা লাভ করবে। আর আল্লাহর জন্য উক্ত ঘরের হজ করা বান্দার জন্য আবশ্যক যার সে পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য আছে এবং যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে (সে জেনে রাখুক!) নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা বিশ্ব জাহানের মুখাপেক্ষী নন। (সূরা আলে ইমরান,আয়াত-৯৭)। এই আয়াতের তাফসীরে বিখ্যাত সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেন, যে ব্যক্তি হজ ফরজ হওয়াকে অস্বীকার করবে সে কাফের হয়ে যাবে। বিখ্যাত তাবেঈ সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেন,এই আয়াতাংশটুকু ইহুদিদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যখন তারা বলেছিল মক্কা শরীফের হজ করা ফরজ নয়। এখান থেকে স্পষ্ট বুঝে আসে হজের গুরুত্ব কতোটুকু এবং তার অস্বীকারকারী কাফের নিঃসন্দেহে।
হজ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে রাসূল (সা.) থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত একাধিক হাদিস রয়েছে। তন্মধ্যে দু’একটা হাদিস এখানে উল্লেখ করবো। যেখান থেকে সুস্পষ্ট বুঝে আসে হজের গুরুত্ব। হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এখানে শারীরিক শক্তি সামর্থ্য ও অর্থ-সম্পদ উভয়ই খরচ হয় এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর অধিক নৈকট্য হাসিল হয়। সাহাবী হযরত আবূ হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত। এক- আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহম্মাদ সা. আল্লাহর বান্দা ও রাসূল একথার সাক্ষ্য প্রদান করা। দুই- নামাজ কায়েম করা। তিন- যাকাত আদায় করা। চার- বায়তুল্লাহর হজ করা। পাঁচ- রমজানের রোজা রাখা। (বুখারী, মুসলিম)
অপর এক হাদীসে হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে।তিনি বলেন, রাসূল (সা.) একদা আমাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন, বক্তব্যে তিনি বলেন : হে লোক সকল! আল্লাহ তোমাদের উপর হজ ফরজ করেছেন। অতএব তোমরা হজ কর। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) হজ কি প্রতি বছর আমাদের উপর ফরজ? রাসূল সা. চুপ রইলেন। এমনকি লোকটি তিনবার জিজ্ঞেস করল এই কথা!অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন, যদি আমি হ্যাঁ বলতাম তাহলে ফরজ হয়ে যেতো।অথচ তোমরা তা করতে সক্ষম হতে না।এরপর তিনি বলেন : আমি তোমাদের সামনে যেভাবে উপস্থাপন করেছি আমাকে ওভাবেই ছেড়ে দাও। জেনে রাখ! তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণ শুধু এই কারণে ধ্বংস হয়েছে যে, তারা অধিক পরিমাণে প্রশ্ন করত এবং তাদের নবীর বিরোধিতা করত। অতএব যখন আমি তোমাদের কোন বিষয়ে আদেশ করি, তা সাধ্যমতো পালন কর এবং যখন কোন বিষয়ে নিষেধ করি, তা পরিহার কর। উপরোল্লিখিত হাদিসদ্বয় দ্বারাও একথাই প্রমাণিত হয়। পাশাপাশি একথার প্রমাণ পাওয়া যায় যে, হজ প্রতিবছর ফরজ নয় বরং শরীয়তের মুকাল্লাফ প্রত্যেক ব্যক্তির উপর জীবনে একবারই হজ ফরজ।
উপরোল্লিখিত আয়াত ও হাদিসের আলোকে আমরা জানতে পারলাম যে হজ্জ ফরজ। এখন জেনে নেব! হজের ফজীলত বা তাৎপর্য। সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন আমল উত্তম? উত্তরে রাসূল (সা.) বললেন, আল্লাহ এবং তার রাসূলের প্রতি ঈমান রাখা।। জিজ্ঞেস করা হলো এরপর কোনটি?তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, এরপর কোনটি?তিনি বললেন হজ্জে মাবরুর। হজ্জে মাবরুর হচ্ছে, যে হজে হজকারী ব্যক্তি কোন প্রকার পাপাচারে লিপ্ত হয় না। (বুখারী মুসলিম)। হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হজ করলো আর তাতে স্ত্রীসম্ভোগ বা কোন পাপাচারে লিপ্ত হল না। সে হজ থেকে ফিরবে সেদিনের মতো যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছেন। (বুখারী মুসলিম।)
হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে আরেক হাদীসে বর্ণিত আছে। রাসূল (সা.) বলেন. এক ওমরা থেকে আরেক ওমরা তার মধ্যবর্তী ভুল ত্রুটির জন্য কাফফারা স্বরূপ।আর হজ্জে মাবরুর এর প্রতিদান কেবল জান্নাতই। (বুখারী মুসলিম)। এই হাদিস থেকে একটি বিষয় পরিস্কার হয়ে যায় যে, ওমরা যে কোন সময় করা যেতে পারে এবং তা একাধিকবার করাতে কোন দোষ নেই। আর হজ্জে মাবরুর এর প্রতিদান তো আল্লাহ বলেই দিলেন। তাই যে সকল মুসলিম ভাই বোনেরা হজ করার সামর্থ্য আছে, তাদের কর্তব্য হচ্ছে হজ্জ সম্পন্ন করা আর আমার মতো সহায় সম্বলহীন মানুষ যাদের সামর্থ্য নেই তাদের উচিত আল্লাহর কাছে অধিক পরিমাণে দোয়া করা যেন আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে তার ঘরের মেহমান বানিয়ে নেন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।