চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ইলম আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো- জানা, বুঝা, হৃদয়ঙ্গম করা, জ্ঞান। পরিভাষায়- বিখ্যাত আরবী অভিধান ‘আল মুজামুল ওয়াসীত’ প্রণেতার মতে- ইলম বলা হয় কোনো কিছু সম্পর্কে যাবতীয় তত্ত্ব ও তথ্যানুসারে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা। মহান আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা.) এর কাছে সর্বপ্রথম ওহী প্রেরণ করে বলেন, ‘ইকরা’ অর্থাৎ পড়। এই পড়ার দ্বারাই মানুষের জ্ঞান অর্জিত হয়। জ্ঞান এমন একটি বিষয় যা মানুষকে উচ্চাসনে আসীন করতে পারে। যার দ্বারা মানুষের নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ে পুরো পৃথিবী জুড়ে।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, বল, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? (সুরা যুমার : ৯)। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন, আর যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাদের জন্য রয়েছে উচ্চমর্যাদা। (সুরা মুজাদালাহ : ১১)। আল্লাহ আরো বলেছেন, তোমাকে তারা রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, তুমি বল রূহ আমার রবের আদেশ ঘটিত; এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে। (সুরা ইসরা : ৮৫)।
জ্ঞান অর্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক নর-নারীর উপর দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা ফরজ। রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, আমি হলাম জ্ঞানের শহর। জ্ঞানীর মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আবেদের উপর আলেমের মর্যাদা হলো সমস্ত তারার উপর চাঁদের মর্যাদার মতো। জ্ঞান অর্জন করার জন্য করতে হয় অনেক কষ্ট, সাধনা, পরিশ্রম। এই কষ্ট-সাধনা করে যারা জ্ঞান অর্জন করে তারাই পুরো পৃথিবী জুড়ে পরিচিতি পায়, পায় জ্ঞানের স্বীকৃতি। জ্ঞান অর্জন করার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। এজন্য বলা হয় দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন কর। রাসূল (সা.) বলেছেন, দ্বীনি জ্ঞান অন্বেষণের জন্য জন্য যে পথ চলতে থাকে তার জন্য আল্লাহ তায়ালা বেহেশতের পথ সহজ করে দেন।
জ্ঞান শুধু বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তা প্রকৃত জ্ঞান নয়। এজন্য বলা হয় জ্ঞান হলো যা বক্ষে থাকে, যা ছত্রে থাকে তা নয়। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা যার কল্যাণ কামনা করেন, তাকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করেন। (বুখারী ও মুসলিম)। হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মুআবিয়াহ (রা.)-কে খুৎবায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নবী (সা.)কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের ইলম দান করেন। আমি তো বিতরণকারী মাত্র, আল্লাহই (জ্ঞান) দাতা। (সহিহ বুখারী : ৭১)।
জ্ঞান অর্জনের ফজিলত সম্পর্কে রাসূল (সা.) থেকে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন ইবনু আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একজন ফক্বীহ (আলিমে দ্বীন) শয়তানের কাছে হাজার আবিদ (ইবাদাতকারী) হতেও বেশি ভীতিকর। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)। ইবনু উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (সা.) বলেন, গাছের মধ্যে এমন একটি গাছ রয়েছে যার পাতা ঝরে পড়ে না এবং তা হলো মুসলিমের দৃষ্টান্ত।
তোমরা আমাকে বল তো সেটা কোন গাছ? তখন লোকজনের খেয়াল জঙ্গলের গাছপালার প্রতি গেল। আর আমার মনে হতে লাগল যে, সেটি খেজুর গাছ। আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘কিন্তু আমি লজ্জাবোধ করলাম।‘ সাহাবায়ে কিরাম (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনিই আমাদের তা বলে দিন।’ আল্লাহর রসূল (সা.) বলেন, তা হলো খেজুর গাছ।’ আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘তারপর আমি আমার পিতাকে আমার মনে যা এসেছিল তা বললাম।’ তিনি বললেন, ‘তুমি তখন তা বলে দিলে তা আমার নিকট এরূপ এরূপ জিনিস লাভ করার চেয়ে অধিক প্রিয় হতো।’ (সহিহ বুখারী : ১৩১)
অতএব জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত দ্বীনি জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি দুনিয়াবি জ্ঞানও অর্জন করা এবং জ্ঞানের যথাযথ প্রয়োগ ও ব্যবহার করা এবং আল্লাহর শিখিয়ে দেয়া এই দোয়া বেশি বেশি পাঠ করা ‘রব্বি যিদনী ইলমা’ অর্থাৎ হে প্রভু! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন। (সুরা ত্বোহা : ১১৪)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।