Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আজ ভোটাররা নির্ধারণ করবে নগর অভিভাবক

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে শিক্ষা শিল্প-সংস্কৃতির জেলা কুমিল্লায় আজ নগর অভিভাবক নির্ধারণের দিন। ১৮ দিনের প্রচারণায় নাগরিক ভোগান্তি দূর করার পাশাপাশি নগরবাসীকে একটি পরিকল্পিত সিটি উপহার দেয়ার যে অঙ্গিকার মেয়র প্রার্থীরা করেছেন, এর পক্ষে রায় দিয়ে দু’লক্ষাধিক ভোটার নির্ধারণ করবেন তাদের নগর অভিভাবক। আর তাই আজ সবার দৃষ্টি কুমিল্লার দিকে।

কুমিল্লা নগরবাসীর কাছে আজকের দিনটি উৎসবের। কেননা নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি সিটিতে। আর তাই আজকের দিনটিতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

আজ বুধবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোট গ্রহণ হবে। প্রায় দু’লক্ষাধিক ভোটার আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাদের ‘নগর অভিভাবক’ বেছে নিতে ভোট দেবেন। নগরীর ২৭ ওয়ার্ডের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। আর তাই কাঙ্খিত ফলাফলে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের জয়ের খবর পেতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না কুমিল্লাবাসীকে।

পরিবর্তনের সেøাগান নিয়ে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার নাকী আরেকবার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় থাকা সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে বেছে নেবেন ভোটাররা- এমন সিদ্ধান্তের জন্য এখন শুধুই অপেক্ষা আজকের সন্ধ্যারাত পর্যন্ত।
এদিকে ভোটার ও সাধারণ মানুষ বলছেন, নগর অভিভাবক যিনিই হবেন তাকে ত্রিমুখি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেই জিততে হবে। এবারে প্রচারণার মাঠে নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভোটের লড়াইয়ে এ গণজোয়ারের প্রতিফলন ঘটাতে ২৭টি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দেওয়া হয়েছে দিক-নির্দেশনা। অপরদিকে তৃতীয়বার জয়ের আশায় ভোটের লড়াইয়ে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু তার প্রচারণার শেষের দিকে অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারের রাজনৈতিক ধারার কৌশলি বক্তব্যের কাছে অনেকটাই ধরাশায়ী হয়েছেন। তরুণ এই প্রার্থীর কারণে সাক্কু নগরীর পূর্বাঞ্চল ছাড়া বাকি তিন দিকেই ভোটের লড়াইয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। এদিকে অপর দুই মেয়র প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা) ও নাগরিক ফোরাম থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান বাবুল (হরিণ) সাক্কু ও কায়সারের ভোটে ভাগ বসাবে।

কুমিল্লার রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন রয়ে গেছে। পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এমনকি অনেক স্থানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হওয়ার বহরও কম নয়। বিগত কমিশনের অধীনে বেশির ভাগ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, এমন অভিযোগও শোনা গেছে মিডিয়ায়। তবে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের ভোট গ্রহণের যাত্রা শুরু। তাই শুরুটা ভালো হবে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কুমিল্লা জেলা সভাপতি আলহাজ শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান বলেন, কুমিল্লা সিটিতে এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ ভালো। তফসিল ঘোষণা ও প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে কুমিল্লা একটা উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। ভীতিকর কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি না হওয়ায় ভোটের ব্যাপারে সবার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আর নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রথম নির্বাচন হওয়ায় সবার দৃষ্টি কুমিল্লার দিকে পড়েছে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২ জন। ৭১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে। ৫ মেয়র প্রার্থীসহ মোট ১৪৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। সিটির ৫নং এবং ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সৈয়দ রায়হান আহমেদ এবং মনজুর কাদের মনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ১০৫টি কেন্দ্রের ৮৯টি ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে নতুন প্রায় ২২ হাজার ভোটার ভোট দেবেন। নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে এই নতুন ভোটারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে বলে মনে করছেন প্রার্থীরা।

নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ : নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার কুমিল্লা জিলা স্কুলের শহীদ আবু জাহিদ মিলনায়তন থেকে ইভিএম বিতরণ করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে ট্রাকে করে এই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। সিটি নির্বাচনে ২ লাখের বেশি ভোটার ১০৫ কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ১০৫টি ভোটকেন্দ্রে বুথ রয়েছে ৬৪০টি। ইভিএম পাঠানোর কাজের তদারকি করছেন কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা সুষ্ঠু ভোট করার জন্য বদ্ধপরিকর। পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্কুলার অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেকটি কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, আনসার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশের কর্মকর্তারা সবাই সজাগ থাকবেন। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় চেকপয়েন্ট করা হয়েছে যাতে কোনো ধরণের অপ্রীতিকার ঘটনা না ঘটে। আমি আশাবাদী, একটি ভালো নির্বাচন হবে।

কায়সারের সংবাদ সম্মেলন : গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় নগরীর ধর্মসাগরপাড়স্থ নির্বাচনী কার্যালয়ে ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ এবং সরকারিভাবে সিটি করপোরেশন এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ইপিজেড ও সরকারি, আধাসরকারি অফিস আদালত, ব্যাংক-বীমা খোলা থাকলে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হবে। এসব চাকরিজীবীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হবেন। এছাড়াও নির্বাচনের মাঠে বহিরাগতদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে কায়সার বলেন, নির্বাচন কমিশন এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারেননি। তাই নির্বাচনের দিন যেন নির্বাচন সচিবালয় থেকে দুজন নির্বাচন কমিশনার আসেন। তারা আসলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাড়ে তিন হাজার সদস্য : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপিসহ বিভিন্ন বাহিনীর ৩৬০৮ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজিবির ১২ প্লাটুন সদস্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনী এলাকায় থাকছে ৭৫টি চেকপোস্ট, ১০৫টি মোবাইল টিম এবং ৩০টি র‌্যাবের টিম। এছাড়াও অর্ধশতাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ