Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পথশিশুদের জীবন

চিঠিপত্র

হাসনাত জাহান সিফাত | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২২, ১২:০৩ এএম

শিশু শব্দটি শুনলেই আমাদের কল্পনার দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে একঝাঁক দুরন্ত শিশুদের দুষ্টমি আর খুনসুটির নানা দৃশ্য। ভেসে ওঠে নিজেদের শৈশবের স্মৃতি। শিশু শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে একটি জাতির স্বপ্ন, আকাক্সক্ষা ও ভবিষ্যত। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যক্তিই শিশু। সাধারণত সব শিশুই এ বয়সে পরিবারের অটুট বন্ধনে থেকে মা-বাবার নিবিড় পরিচর্যায় বেড়ে উঠে। কিন্তু নির্মম বাস্তবতার জন্য সবাই মা-বাবার ছায়ার নিচে সুন্দর একটি জীবন নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে না। যে বয়সে তাদের কাঁধে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সে তারা তাদের কাঁধে একটি ধুলোমাখা বস্তা ঝুলিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। যে বয়সে তাদের পরিবার আর বন্ধুদের সাথে আনন্দে সময় কাটানোর কথা, সে বয়সে তারা পথে পথে, খোলা আকাশের নিচে প্রতিনিয়ত বাঁচার লড়াই করে। তারা বেড়ে উঠে নানা অবহেলা আর বঞ্চনার মধ্য দিয়ে। এই বয়সে ওদের পরিচয় হয় পথশিশু হিসবে। অধিকাংশ পথশিশুদের নিজস্ব কোনো পরিবার নেই। অনেক ক্ষেত্রে তারা পরিবার থেকে পালানো কিংবা মা-বাবা তাড়ানোও হয়। অনেকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সবটাই রাস্তায়। সাধারণত বিভিন্ন জনসমাগমপূর্ণ স্থান বিশেষ করে রেল স্টেশন, বাস স্টপেজ, লঞ্চ টার্মিনাল ইত্যাদি জায়গায় পথশিশুদের দেখা যায়। পথশিশুরা ঠিকমতো দু’বেলা পেট পুরে খেতে পারে না। কোনো সময় এক বেলা জুটলে আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে অভ্যস্ত এসব শিশুদেরকে ক্ষুধার তাড়নায় ডাস্টবিন থেকে উচ্ছিষ্ট খাবার কুড়িয়ে খেতেও দেখা যায়। পরিবারের স্নেহবঞ্চিত এসব শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। অবশ্য যাদের দু’টুকরো কাপড়ের বড্ড অভাব, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা; তাদের জন্য পড়াশুনা অনেকটা স্বপ্নের মতো। পথশিশুদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ দশ থেকে বার বছর বয়সেই ড্যান্ডি, সিগারেট এবং গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফেনসিডিল, হেরোইনসহ অনেক ধরনের মাদক গ্রহণেও তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ চুরি-ছিনতাইসহ নানান অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। আবার অনেক শিশু মাদক চোরাচালানের কাজও করে। তারা নিজের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এমন একটি জগতের সাথে জড়িয়ে যায় যার থেকে ফিরে আসা হয়তো কারো পক্ষে আর সম্ভব হয় না। সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন এসব শিশুকে পুনর্বাসন করতে আমাদের সবাইকে হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে। সুখী ও সমৃদ্ধ একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা সকলেই দেখি। পথশিশুদের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে কখনোই সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া যাবে না। পথশিশুদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারকে একটি বিজ্ঞানসম্মত বহুমুখী পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে এবং তার সঠিক বাস্তবায়নও করতে হবে। সঠিক পরিচর্যা পেলে পথশিশুরা আর দেশের বোঝা থাকবে না। তারা পরিণত হবে দেশের জনসম্পদে। পথশিশু নামক অভিসাপ থেকে জাতিকে মুক্তি দেয়া শুধুমাত্র সরকারের একার কাজ নয়। এজন্য সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সকল নাগরিকদের একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। মা-বাবার স্নেহ বঞ্চিত এসব শিশুদের দিকে বাড়িয়ে দিতে হবে মমতার হাত। নিজের সন্তানকে আমরা যেভাবে ভালোবাসি, তেমনি ওদেরকেও ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে হবে। আমরা যদি এ সংকট নিরসনে একসাথে কাজ করতে পারি, তাহলেই আমরা আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো।

শিক্ষার্থী, ফাজিলপুর ওয়ালিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা, ফেনী



 

Show all comments
  • jack ali ১৬ জুন, ২০২২, ১২:৩৪ পিএম says : 0
    আমাদের দেশের শাসকরা প্রায়ই বলে আমাদের দেশ নাকি আমেরিকা ইউরোপ হয়ে গেছে তাদের কি চোখ কানা তারও তো কতবার আমেরিকা-ইউরোপে গেছে ওদের দেশে কি রাস্তায় মানুষ থাকে রাস্তায় কি বাচ্চারা থাকে ওদের দেশ কত সুন্দর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কে গরিব কে বড়লোক বোঝা যায় না সবাই ভালো ভালো খাবার খায় আর আমাদের দেশ দেখলে মনে হয় এটা যেন একটা বিরাট ডাস্টবিন মানুষকে দেখলে বুঝা যায় কে গরিব কে বড়লোক গরিবদের চেহারা হয় খুব খারাপ আমাদের যারা দেশ চালায় তাদের মনের মধ্য কোন মানবতা নাই এরা মানবরূপী নরপিচাশ নরাধম
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন