পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর পর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাÑ ডব্লিউটিও’র সদর দফতরে বসেছে এর মন্ত্রী পর্যায়ের ১২তম বৈঠক। বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিশ্বকে সঙ্কটে ফেলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই সঙ্কট সমাধান এখন একটি বা দুটি দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। দেশে দেশে মানুষকে প্রায় দুর্ভিক্ষ অবস্থা থেকে বাঁচাতে হলে ছোট-বড় সব দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে একতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যথায় বিশ্ব আবার এক দুর্ভিক্ষের মুখে পড়বে। এমনিতে প্রতিবারই এই বৈঠক নিষ্ফল আলোচনায় শেষ হয়। তার ওপর এবার করোনার কারণে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের বৈঠকটি পিছিয়ে যখন শুরু হলো, তখনও চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধ, মহামারি আর বাণিজ্যিক কৌশল নির্ধারণে সদস্যÑ দেশগুলোর মতপার্থক্য এই তিন কারণে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডব্লিউটিওর সম্মেলনে বিষাদের ছায়া। তাই বিশ্বে সংঘাত এড়াতে উন্নত দেশগুলোর একগুঁয়েমি ত্যাগ করার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় শুরু হয় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের এই বৈঠক। এদিকে এলডিসিভুক্ত দেশ যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে, বাংলাদেশ এ তালিকা থেকে বের হওয়ার পরও যেন সেটা কয়েকবছর (৬-৯ বছর) অব্যাহত রাখা হয়, সে দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া আগাম ঘোষণা ছাড়া খাদ্যপণ্য রফতানিকারক দেশগুলোর রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন চায় বাংলাদেশ। সম্প্রতি ভারতসহ কয়েকটি দেশের এমন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে বিশ্বকে। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে বিষয়টিতে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি দেয়ার ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে জিএসপি সুবিধা, মেধাস্বত্ব, মৎস্য খাতে ভর্তুকি নিয়ে বাংলাদেশ নিজের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হলে নানামুখী প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে বাংলাদেশ। তাই রফতানির ধারাবাহিকতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশের আরও বেশি সময় শুল্ক সুবিধা পাওয়া জরুরি। বিশেষ করে জিএসপি সুবিধা ও মেধাস্বত্ব। এসব বিষয়ে সম্মেলনে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বৈঠক শুরুর দিনে গত রোববার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় উদ্বোধনী সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার মহাপরিচালক এনগোজি ওকানজো-আইওয়ালা রাখঢাক ছাড়াই তাই বলে ফেললেন, ক্ষমতাধর দেশগুলো যেন জেদ করে সবাইকে হতাশায় ডুবিয়ে না দেয়, কেননা, দুনিয়াব্যাপী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এখন বড় মাথাব্যথা। বিশ্ব এক কঠিন সময় পার করছে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, মানুষ বাঁচানোকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাণিজ্য নীতি আর কৌশল বাস্তবায়নে সদস্য দেশগুলোর রাজনৈতিক বিরোধ কষ্ট দিচ্ছে তাকে।
আইওয়ালা বলেন, বিশ্ব বর্তমানে করোনা মহামারি, খাদ্য ঘাটতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আঞ্চলিক সংঘাতের মতো একাধিক সঙ্কটের মুখোমুখি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বকে সে সঙ্কটে ফেলেছে তার সমাধান করা এক বা দুটি দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। দেশে দেশে মানুষকে প্রায় দুর্ভিক্ষ অবস্থা থেকে বাঁচাতে হলে ছোট বড় সব দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে যে দুর্ভিক্ষের অবস্থা হয়েছে, তা থেকে বাঁচতে বিশ্ব একতা দরকার। এই পরিস্থিতিতে কোনো সদস্য একা থাকতে পারে না।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রধান হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে যে খাদ্যসঙ্কট শুরু হয়েছে হস্তক্ষেপ করা না হলে তা কয়েক বছর থাকতে পারে। গম ও সার সঙ্কটে বিশেষভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশগুলো।
এদিকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে গেছে বাংলাদেশ। বাণিজ্য ও বিনিয়োগে কিছু সুবিধা হারানোর শঙ্কার সাথে সাথে পশ্চিমা দেশের বাজারে রফতানি সুবিধা, কৃষি বিশেষ করে মৎস্য খাতে ভর্তুকি দেয়া, উন্নত দেশ থেকে কম খরচে ওষুধ উৎপাদনে সহযোগিতা পাওয়া অগ্রাধিকার বাংলাদেশের জন্য।
এসব বিষয়কে সামনে রেখেই এবারের সম্মেলনে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশও। উন্নয়নশীল কাতারে পৌঁছে যাওয়া বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা নিয়েই যত চিন্তা সরকারের। এ জন্য ডব্লিউটিও’র কাছে দাবি করা হয়েছে অবাধ ও শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা বহাল রাখার।
প্রথম দিনের বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বাংলাদেশসহ অন্যান্য এলডিসিভুক্ত দেশ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে, সেটা আরও কয়েকবছর অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) অব্যাহত বাজার সুবিধা চায় বাংলাদেশ।
২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের বের হওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর বাংলাদেশ আর শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাবে না। তাই এলডিসির পক্ষ থেকে ডব্লিউটিওতে দেয়া শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধার প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, মৎস্য খাতে ভর্তুকি প্রদানের সুযোগ চায় বাংলাদেশ। একই সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশের মৎস্য খাতের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এ খাতে ভর্তুকি দেয়াটা জরুরি। অনেক উন্নয়নশীল দেশের বিপুল সংখ্যক গরিব মানুষ তাদের জীবিকার জন্য মৎস্য খাতে জড়িত। তাই স্বল্পোন্নত দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবিকা টিকিয়ে রাখার জন্য মৎস্য খাতে ভর্তুকি প্রদানের সুযোগ রাখার প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি হ্রাসে এলডিসিভুক্ত দেশকে সরকারি পর্যায়ে বড় আকারে খাদ্য মজুত করার মতো সুযোগ রাখা প্রয়োজন। কৃষিসহ ডব্লিউটিও’র অন্যান্য যে কোনো সংস্কার বাংলাদেশ সমর্থন করবে। সংস্কার অব্যশই অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বচ্ছ হতে হবে, যেখানে সবার মতামত দেয়ার সুযোগ থাকবে। প্রতিটি সদস্যের উদ্বেগকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের ওপর হঠাৎ করে রফতানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ ঠিক হবে না। রফতানি বন্ধ করতে হলে আমদানিকারক দেশকে অবশ্যই নির্দিষ্ট একটা সময়ের আগে তা জানাতে হবে। হঠাৎ করে খাদ্যজাত পণ্য রফতানি বন্ধ করার কারণে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট এড়াতে তিনি বিশ্বনেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সম্মেলনে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেয়া বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ২০২৬ সালের পর যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, সেটি আমাদের মূল দাবি ছিল। এরপর এখন করোনা-পরবর্তী বিশ্বে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের (এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন) পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (৬-৯ বছর) উন্নত দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিতে সম্মেলনে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
আর্থিক খাতের বিশ্লেষক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ইনকিলাবকে বলেছেন, ডব্লিউটিও হচ্ছে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেন-দরবারের প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশ ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে কোনো দেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর আন্তর্জাতিক বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার ও সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। আর উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবে। বাংলাদেশের রফতানির ধারাবাহিকতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য এ সম্মেলনে জিএসপি সুবিধা ও মেধাস্বত্বসহ অন্যান্য দাবিগুলো নিশ্চিতে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে দেন-দরবার করতে হবে।
উল্লেখ্য, চারদিনের সম্মেলনের শতাধিক সেশনে বাণিজ্য বিষয়ে বিভিন্ন দরকষাকষিতে অংশ নেবে ১৬৪ সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা। তবে সবার দৃষ্টি আমেরিকা ও চীনের দিকে। কারণে এই ধনী দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ কতটা প্রশমিত হয়, সেদিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আগামীকাল বুধবার এ সম্মেলন শেষ হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।