চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ইসলাম শান্তির ধর্ম : ইসলাম শান্তির ধর্ম এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইসলাম যখন দুনিয়াতে আসে অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইসলাম নিয়ে দুনিয়াতে আগমন করেন। তখন পৃথিবীর সর্বত্র ছিল অশান্তি, অরাজগতা, জোর -জুলুম, অত্যাচার নির্যাতন। গোত্রে গোত্রে ছিল দ্বন্দ্ব ও বাড়াবাড়ি। মানুষের মন মানসিকতা ছিল পাষাণ ও নির্দয়। আপন কণ্যা সন্তানকে জীবন্ত নিজ হাতে মাটি চাপা দেয়ার মতো নিকৃষ্ট কাজও তারা করে ফেলতো অনায়াসে।
ইসলাম এসব দ্বন্দ্ব নিরসন করে সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে। গোত্রীয় বিবাদ নি:শেষ করে দ্বিপক্ষীয় শত্রুদের পারস্পরিক সৌহার্দ সৃষ্টি করেছে। একে অন্যের বুকে বুক মিলিয়েছে। অন্তরের হিংসা ও লেশ দূর করে সবার মনে ভালবাসার সৌধ স্থাপন করেছে।
মানুষ ও মানবতার শান্তির ব্যপারে ইসলাম : উত্তর : এ প্রশ্নের জবাবকে আমরা কয়েকটা ভাগে বিভক্ত করতে পারি। এক. মানুষ ও মানবতার মর্যাদা। দুই. ব্যক্তির নিরাপত্তা। তিন. পারিবারিক নিরাপত্তা। চার. সামাজিক নিরাপত্তা। পাঁচ. রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা। ইত্যাদি। উল্লেখিত প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ইসলাম পরিপূর্ণ নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছে।
এক. মানুষের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব : পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন- ‘আমি মানব জাতিকে সর্বোচ্চ সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছি। (সুরা বনী ইসরাঈল-আয়াত-৭০) এ আয়াত প্রমাণ করছে, ইসলাম মানুষকে সকল সৃষ্টি জগতের সর্ব সেরা জাতির মর্যাদা দান করেছে। এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর সব মাখলুককে মানুষের অধীন বানিয়েছেন। (সুরা জাসিয়াহ-১৩) অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন- আমি মানুষকে সর্বোন্নত অবয়বে সৃষ্টি করেছি। (সুরা ত্বীন- আয়াত-০৪) এ আয়াত প্রমাণ করছে, ইসলামের রব মানুষকে সকল মাখলূকের মধ্যে সর্ব সেরা আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।
দুই. ব্যক্তি জীবনে মানুষকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া হয়নি। (সুরা বাকারা-২৮৬) মানুষ পারবেনা বা করতে কষ্ট হবে, এমন কোনো কাজ তাদের জিম্মায় আল্লাহ দেননি। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- তোমার শরীর তোমার উপর হক রাখে, শরীরকে তার হক দাও। আল-হাদীস-- অর্থাৎ শরীরের উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেয়া। না খেয়ে, না ঘুমিয়ে শরীরকে কষ্ট দেয়া। শরীরের অঙ্গহানী বা আত্মহত্মা করা, ইত্যাদি হারাম, কবীরা গুনাহ।
তিন. পারিবারিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইসলামের ব্যাপাক দিক নির্দেশনা রয়েছে। মা-বাবার মর্যাদা, মা-বাবার সাথে অসদ্ব্যবহারের শাস্তি, সন্তানের হক, স্বামীর মূল্যায়ন, স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা প্রদর্শন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব, ইত্যাদি সবই পারিবারিক শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়।
চার. সামাজিকভাবেও মানুষ শান্তি ও নিরাপদ জীবন কাটাবে। এটা ইসলামের জোরালো নির্দেশনা। আল্লাহ তাআলা বলেন- মু‘মিনরা একে অন্যের ভাই। তাদের মাঝে মিমাংশা করে দাও। (সুরা হুযুরাত- ১০) অর্থাৎ দ্বন্দ্ব না বাড়িয়ে, ফ্যাসাদ সৃষ্টি না করে তাদের মাঝে মিলমিশ করে দাও। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- প্রকৃত মুসলমান সে, যার হাত ও মুখ হতে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। (বুখারী-মুসলিম, মেশকাত- ১২) অন্য হাদীসে নবীজী ইরশাদ করেন- আল্লাহর কসম! ঐ ব্যক্তি মু‘মিন নয়, যার অনষ্টি থেকে তার প্রতিবেশি নিরাপদ নয়। (বুখারী-মুসলিম, মেশকাত- ১২) এভাবে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে আরো অনেক হাদীস রয়েছে।
পাঁচ. মানুষের রাষ্ট্রীয় জীবন ব্যবস্থায় ইসলাম সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বিধানের নির্দেশ দিয়েছে। দেশে অশান্তি ও উসৃংখলতা সৃষ্টিকারীদের শাস্তির নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আর যমীনে বিশৃংখলা ছড়িয়ে বেড়ায় তাদের শাস্তি হলো- তাদেরকে হত্যা করা হবে বা তাদেরকে ক্রুশবিদ্ধ করা হবে। অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত-পা কেটে ফেলা হবে। অথবা তাদেরকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। এ হলো তাদের জন্য দুনিয়াতে লাঞ্ছনা, আর তাদের জন্য রয়েছে আখেরাতে মহা শাস্তি। (সুরা মায়িদাহ- আয়াত-৩৩)
এ আয়াত স্পষ্ট প্রমাণ করছে যে, জগতে শান্তি নিরাপত্তার সাথে মানুষ বসবাস করবে। যারাই শান্তি বিনষ্ট করবে, তাদের উপর কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
তাছাড়া ইসলামের প্রতিটি বিধান মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে নাযিল করা হয়েছে। যেমন- কেসাস, অন্যায়ভাবে হত্যা রোধ করার জন্য, ব্যাভিচারের শাস্তি, নারী জাতির সম্ভ্রম রক্ষার জন্য, চোরের হাত কর্তন, মানুষের সম্পদের হেফাজতের জন্য। ইত্যাদি।
অমুসলিমদের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে ইসলাম : উত্তর : শুধু অমুসলিম নয়, সমস্ত সৃষ্টির নিরাপত্তার ব্যাপারে ইসলামের দিক নির্দেশনা রয়েছে। হাদীস শরীফে বর্ণিত, রাসূল সা. ইরশাদ করেন- সমস্ত মাখলূক হলো আল্লাহর পরিবার। যারা আল্লাহর পরিবারের সাথে যত বেশি সদাচরণ করে, আল্লাহ তাদেরকে তত বেশি ভালোবাসেন। (মু‘জামুল কাবীর- ১০/৮৬) অন্য হাদীসে বর্ণিত, তোমরা জগতবাসির প্রতি সদয় হও, আসমানের মালিক তোমাদের প্রতি সদয় হবেন। (তিরমিযী-) বুখারী শরীফের বর্ণনায় রয়েছে, একজন বাজারে মহিলা একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে জান্নাত বাসি করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ।
তাছাড়া মুসলমানদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোনো কাফেরকে যদি কেউ হত্যা করে, নবীজী বলেন- সে জান্নাত পাবেনা, জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। (নাসায়ী- ২/২৮৪) এসব হাদীস থেকে বুঝা যায়, দুনিয়ার সব মাখলূক নিরাপদ। তাদের নিরাপত্তা বিধান করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক।
ইসলামে জিহাদের বিধান কেন : অনেকে প্রশ্ন করে, ইসলাম শান্তির ধর্ম হলে জিহাদের বিধান রাখা হয়েছে কেন? যাতে কাফেরদেরকে হত্যা করার কথা স্পষ্ট বলা আছে? এ প্রশ্নের দুই জবাব। এক. জিহাদের বিধান কাউকে হত্যা করার জন্য নয়। বরং দেশে অশান্তি সৃষ্টিকারীদের কালো হাতকে দমন করে শান্তি শৃংখলা বহাল রাখা বা সু-প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। জিহাদ অর্থ যাকে যেখানে পাওয়া যাবে তাকে সেখানে মেরে ফেলতে হবে, এমন নয়। বরং যারা অহংকারে স্ফীত হয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হয়, তাদের অহংকারকে গুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার জন্য।
দুই. জিহাদের বিধান আল্লাহর পক্ষ হতে এক বিশেষ রহমত। কারণ পৃথিবীর ইতিহাসে বহু অত্যাচারী ও সীমালঙ্ঘনকারী জাতি ধ্বংস হয়েছে। আসমানী গজব তাদেরকে শেষ করে দিয়েছে। তখন কিছু লোকের অপরাধের কারণে নিরপরাধরাও ধ্বংস হয়েছে। ইসলাম কিছু লোকের অপরাধের কারণে নিরপরাধদেরকে ধ্বংস না করার জন্য জিহাদের বিধান নাজিল করেছে। জিহাদ শান্তিপ্রিয়দের বিরুদ্ধে নয়, অশান্তি ও অপরাধপ্রিয়দেরকে সায়েস্তা করে দেশে শান্তি অব্যাহত রাখার জন্য জিহাদের বিধান দেয়া হয়েছে। জিহাদের মাধ্যমে গুটি কিছু লোককে সায়েস্তা করে আল্লাহ তা‘আলা দেশের বাকি সব মানুষকে নিশ্চিত ধ্বংস হওয়া থেকে হেফাজত করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।