পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাকালীন অর্থনৈতিক সঙ্কট পেরিয়ে আমাদের রফতানিমুখী পোশাক শিল্পখাত যখন একটি নতুন সম্ভাবনার দিকে যাত্রা শুরু করেছিল ঠিক তখনি শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ আমাদের গার্মেন্টপণ্যের প্রধান ক্রেতা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চাপের মুখে পড়ায় গার্মেন্টের ক্রয়াদেশ কমে গেছে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এই সঙ্কট আরো প্রকট ও প্রলম্বিত হতে পারে। যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যয় যেমন বেড়েছে, তেমনি শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এহেন বাস্তবতাকে সামনে রেখে দেশের গার্মেন্ট শিল্পের শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা যায়। ক্রয়াদেশ কমে যাওয়া, উৎপাদনব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে রফতানিমুখী গার্মেন্ট শিল্প মালিকরা যখন যথেষ্ট চাপের সম্মুখীন, তখন গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলনে পরিবেশ অশান্ত হয়ে উঠলে এ খাতে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা ব্যহত হবে। সে রকম পরিস্থিতিতে হয়তো লোকসানের মুখে আবারো অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে অথবা অনেক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হবে। এ ধরণের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়াল ফর্মে দেয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলনে অশান্ত পরিবেশের সম্ভাব্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলেছেন, পরিবেশ অশান্ত হলে শ্রমিকদের চাকরিও চলে যেতে পারে।
গার্মেন্ট সেক্টর অশান্ত হলে পুরো শিল্পের ক্ষতি, দেশের অর্থনীতির ক্ষতি, সবেচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ খাতের হাজার হাজার শ্রমিক পরিবার। করোনাকালীন বাস্তবতায় দেশের লাখ লাখ মানুষ কর্ম হারিয়েছে। অর্থনীতিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলেও সে সময় কর্ম হারানো অনেক মানুষ এখনো চাকরি ফিরে পায়নি। দেশের কয়েক কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাওয়ার তথ্যও প্রকাশিত হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে রফতানিমুখী গার্মেন্ট সেক্টরের ক্ষতির পরিমান তুলনামূলকভাবে কম। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব না থাকলে দেশের তৈরী পোশাক খাতে নতুন সম্ভাবনাময় অগ্রযাত্রা শুরু হতে পারত। তবে সে সম্ভাবনা এখনো নি:শেষ হয়ে যায়নি। ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে আমাদের তৈরী পোশাক খাত তার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। এ ক্ষেত্রে মালিক, শ্রমিক, ক্রেতাসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিজেদের মধ্যকার সমন্বয়হীনতা, ভুল বুঝাবুঝি ও নেপথ্যের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। অতীতে শ্রমিক আন্দোলনের নামে রফতানিমুখী গার্মেন্ট খাতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। হাজার হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন নতুন বিনিয়োগাকারী এ সেক্টরের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হলেও আন্দোলন ও নাশকতার আশঙ্কা কখনো তিরোহিত হয়নি।
দেশের তৈরী পোশাক খাতের সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা এবং জীবনমান উন্নয়নের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। করোনাত্তোর ইউক্রেন যুদ্ধের বাস্তবতায় সারাবিশ্বে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা শতকরা আশি ভাগ মানুষের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে। নি¤œ আয়ের প্রতিটি পরিবারে আয়বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই। গার্মেন্ট শ্রমিকরা তার ব্যতিক্রম নয়। তবে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নামার এটি সঠিক সময় নয়। দেশের রফতানিমুখী শিল্পে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষের স্বার্থসিদ্ধি ও নাশকতার অভিযোগ কোনো নতুন বিষয় নয়। এই অভিযোগ অমূলকও নয়। রফতানিমুখী শিল্পের জন্য এখন ক্রান্তিকাল চলছে। প্রধানমন্ত্রী সে দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। বেতনবৃদ্ধির দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলন করে পরিবেশ অশান্ত করা হলে তা গার্মেন্টশিল্পে স্থিতিশীলতার উপর বড় প্রভাব ফেলবে। সে ক্ষেত্রে বিদেশিরা ক্রয়াদেশ বাতিল করলে লোকসানের মুখে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কাজেই এ মুহূর্তে সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং পারস্পরিক বেøইম গেম এবং সমন্বয়হীনতা পরিহার করতে হবে। শিল্পের সামগ্রিক অবস্থা, সম্ভাবনা ও সঙ্কটকে সামনে রেখে যথাযথ উদ্যোগ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বিজিএমইএ, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দকে এক টেবিলে বসতে হবে। বেতনবৃদ্ধির দাবি পুরণ করা সম্ভব না হলে শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তাসহ বিকল্প সহায়তার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকেও শ্রমিকদের অর্থ সহায়তা, টিসিবি থেকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। গার্মেন্ট কারখানার মালিকরা মুনাফা করছেন, অনেকে ব্যবসার পরিধি বাড়াচ্ছেন, তাদের শ্রমিকদের বেতন ও জীবনমান উন্নয়নে মনোযোগী হওয়া বাঞ্ছনীয়। মালিক-শ্রমিকের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং পারস্পরিক কল্যাণবোধ ছাড়া টেকসই অর্থনীতি এবং স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।