মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মঙ্গলবার লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের (এলপিআর) রাষ্ট্রদূত বলেছেন, রাশিয়ান সৈন্য সমর্থিত ডনবাস বাহিনী সেভেরোডোনেৎস্ক এলাকা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করেছে। এবার তারা লিসিচানস্ক মুক্ত করার জন্য শহরতলিতে লড়াই করছে।
শহরটি আর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয় বলে কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রাষ্ট্রদূত রডিয়ন মিরোশনিক একটি টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছেন, ‘সেভেরোডোনেৎস্ক এবং এর আবাসিক এলাকাগুলি মিত্র বাহিনী দ্বারা মুক্ত করা হয়েছে এবং সেখান থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের মুছে ফেলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনীয় বাহিনীকে শহরের শিল্প এলাকা থেকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিতাড়িত করা হয়েছে এবং জোরপূর্বক আজট রাসায়নিক কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ মিরোশনিকের মতে, সেভেরোডোনেৎস্ক উপকণ্ঠে সিরোটিনো গ্রামটি একটি ‘ধূসর অঞ্চল’। মেটেলকিনো গ্রামটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে ডনবাস এবং রাশিয়ান সৈন্যদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ইউক্রেনীয়রা সেভেরোডোনেৎস্কের দক্ষিণ-পূর্বে বিমানবন্দরে খনন করেছে। ‘তারা বেশ কয়েকটি ভবন দখল করেছে এবং পূর্ব দিকে আর্টিলারি শেল নিক্ষেপ করছে। মিত্র বাহিনী বোরোভস্কির কাছাকাছি অবস্থান থেকে প্রতিদান দিচ্ছে,’ কূটনীতিক বলেছেন।
লিসিচানস্কের কাছে ভারী গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। শহরের উপকণ্ঠ এবং কেন্দ্র আগুনে আচ্ছন্ন, তিনি বলেন। মিরোশনিকের মতে, ইউক্রেনীয়রা শহর রক্ষার জন্য কারাগার থেকে দাগী আসামি ও অপরাধীদের যুদ্ধে পাঠিয়েছে। কূটনীতিক বলেন, সেভেরোডোনেৎস্ক এবং লিসিচানস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর প্রিভোলিতে মারাত্মক লড়াই শুরু হয়েছে।
সেভেরোডোনেৎস্ক পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়, স্বীকার জেলেনস্কির : পূর্ব ইউক্রেনীয় শহর সেভেরোডোনেৎস্ক রাশিয়ান বাহিনীর হাতে পড়লে তা পুনরুদ্ধার করতে অনেক সরঞ্জাম এবং সৈন্য ব্যয় করতে হবে। এ মন্তব্যের মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কার্যত স্বীকার করে নিলেন যে, সেভেরোডোনেৎস্ক উদ্ধার করা তাদের পক্ষে আর সম্ভব নয়। সোমবার জেলেনস্কি সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেছেন যখন রাশিয়ান বাহিনী ভারী লড়াইয়ের মধ্যে শহরটি দখল করতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে, ইউক্রেনীয় প্রাভদা রিপোর্ট করেছে। রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের পূর্ব লুহানস্ক অঞ্চলে সংঘাতের আগের পর্যায়ে অগ্রসর হওয়ার সময় এ স্বীকারোক্তি আসে।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন লুহানস্কের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন, সেইসাথে দক্ষিণ-পশ্চিমে ডোনেৎস্ক অঞ্চল, যেখানে ক্রেমলিন-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্ত বরাবর বিচ্ছিন্ন প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেছে। উপরন্তু, ইউক্রেনের পূর্ব ডনবাস অঞ্চলে রাশিয়ান সৈন্যদের পুনরায় মোতায়েন করার ইঙ্গিত রয়েছে।
ক্রমবর্ধমান রাশিয়া-প্রীতির কারণে অস্বস্তিতে ইউরোপ : ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্ব মস্কোর বিরুদ্ধে একের পর এক কড়া পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে। ইইউ-পদপ্রার্থী দেশগুলিও মোটামুটি সেই নীতি মেনে চলছে। কিন্তু সোমবারের একটি ঘটনা সেই ঐক্যের মধ্যে চিড় আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে। উত্তর ম্যাসিডোনিয়া, বুলগেরিয়া ও মন্টেনেগ্রো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়ায় তিনি সার্বিয়া সফর বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন। বলা বাহুল্য, মস্কো এমন বিঘ্নের কারণে ইইউ ও ন্যাটোর কিছু দেশের নীতি সম্পর্কে প্রবল ক্ষোভ জানিয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সত্ত্বেও লাভরভকে আদৌ স্বাগত জানাতে সার্বিয়ার ভূমিকা নিয়ে আরও বড় প্রশ্ন উঠছে। উল্লেখ্য, পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় লাভরভের নামও রয়েছে।
মস্কোয় লাভরভ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, পশ্চিমা বিশ্ব বলকান অঞ্চলকে নিজেদের বলে ভাবছে, ঠিক যেমন রাশিয়া ইউক্রেনকে নিজের মনে করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার সবকিছুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। লাভরভের মতে, সার্বিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার বিশেষ সম্পর্ক কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। তিনি শীঘ্র মস্কোয় সার্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলা সেলাকোভিচের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানিয়েছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের প্রার্থী হিসেবে সার্বিয়া ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার নিন্দায় ব্রাসেলসের সঙ্গে সুর মেলালেও মস্কোর উপর কোনো রকম নিষেধাজ্ঞা চাপায় নি। বরং রাশিয়া থেকে আরও বেশি গ্যাস আমদানি করার পথ বেছে নিয়েছে বেলগ্রেডের সরকার। রাশিয়াও আরও সস্তায় গ্যাস সরবরাহের আশ্বাস দিচ্ছে। সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিচ সোমবার রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে লাভরভের সফর বাতিল হবার কথা জানতে পারেন। তিনি এই সফল বাতিলের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তার মতে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সার্বিয়া স্বাধীন মনোভাব রক্ষা করে চলবে।
বলা বাহুল্য, ইইউ সার্বিয়ার এমন আচরণ মোটেই ভালো চোখে দেখছে না। ভবিষ্যতে এই রাষ্ট্রজোটের সদস্য হতে হলে জোটের নীতি ও পদক্ষেপের সঙ্গে আরও সমন্বয়ের প্রয়োজন হবে বলে সার্বিয়াকে পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ইউক্রেনের উপর হামলার পর রাশিয়ার সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখা অথবা আরও নিবিড় করা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। চলতি সপ্তাহে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের বেলগ্রেড সফরের সময় সেই বার্তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে সার্বিয়ার ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের প্রক্রিয়া সম্পর্কে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক, জাতিগত ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ইউরোপীয় মূল্যবোধের পথে অন্তরায় হলে শেষ পর্যন্ত ব্রাসেলস কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা স্পষ্ট নয়। তাছাড়া ইউক্রেন সঙ্কটের জের ধরে সার্বিয়ায় রাশিয়ার পক্ষে ও ইইউ-র বিপক্ষে জনমত আরও বাড়তে থাকায় অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে। মুসলিম-প্রধান কসোভো অঞ্চলের সংকটের সময় রাশিয়া সার্বিয়ার পাশে দাঁড়ানোর ফলে সেই সমর্থন আরও জোরালো হয়েছে। কসোভোর স্বাধীনতার প্রতি শুরু থেকেই ইইউর সমর্থন সার্বিয়ায় অনেকে ক্ষোভের কারণ। এমন অবস্থায় সে দেশের সরকারের পক্ষে ইইউ-তে যোগদানের প্রচেষ্টা বাধার মুখে পড়তে পারে। সূত্র : ডয়চে ভেলে, নিউজউইক, তাস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।