Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফেনী নদী থেকে ভারতের পানি তুলে নেয়া বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে পানি তুলে নিচ্ছে ভারত। বছরের পর বছর ধরে দেশটির দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুমের ১৭টি পয়েন্টে পাম্প বসিয়ে এই পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে ফেনী নদীতে সর্বোচ্চ ২৫০ কিউসেক পানি থাকে। এ পানি থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নোম্যান্সল্যান্ডের কাছে শতাধিক কিউসেক পানি গোপনে সরিয়ে নিচ্ছে। বলা হয়েছে, এই নদীর তীরে গোপনে পাকা স্থাপনা ও টিনের বেড়া দিয়ে ভারতীয়রা ২৬টি পাম্প বসিয়েছে এবং এসব পাম্প মেশিনে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি সিআই পাইপ লাগানো হয়েছে। দু’মাস আগে রামগড় সীমান্তের ওপারে সাব্রুমে অনুষ্ঠিত বর্ডার গার্র্ড বাংলাদেশ ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর যৌথ বৈঠকে নতুন করে এ ইস্যুটি সামনে আসে। ওই বৈঠকে নোম্যান্সল্যান্ডে ভারতের অবৈধভাবে বসানো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎচালিত পাম্পমেশিন তুলে নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিএসএফকে চিঠি দেয়া বিজিবি। এব্যাপারে এখন পর্যন্ত ভারতের কোন সাড়া দেখা যায়নি। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের দিকে বাংলাদেশের তরফ থেকে ভারতের পনি উত্তোলনের ব্যাপারে বিরোধিতা করা হলে তা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছিল ভারত।
বৃহৎ প্রতিবেশি ভারতের সাথে বাংলাদেশের জীবন-মরণ যে কটি বড় ইস্যু রয়েছে তার মধ্যে পানির ইস্যু অন্যতম। ভারতের বৈরি পানি নীতির কারণে বাংলাদেশে মরুকরণ প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু হয়েছে। নদ-নদীগুলো নাব্য হারিয়ে ফেলছে। কৃষির জন্য পানির অভাব দেখা দিয়েছে। নদ-নদীর স্বাভাবিক স্রোত না থাকায় উপকূলবর্তী কোন কোন এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। জীববৈচিত্র ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। পানি নিয়ে ভারতীয় এই চ-নীতির বিরূপ প্রতিক্রিয়া এখন ভারতেও দেখা দিয়েছে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে বিহারে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ায় সেখানকার মানুষ ফারাক্কা বাঁধ তুলে দেয়ার দাবি তুলেছে। ভারতের সাথে ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীর চেয়ে ফেনী নদী ভিন্ন। এটির উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশ। সুতরাং এ নদীর পানিতে ভারতের কোন অংশ থাকার সুযোগ নেই। এখন যা করছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শুষ্ক মৌসুমে এ নদীতে যে সামান্য পানি থাকে তা থেকে চোরাই পথে পানি তুলে নেয়ার ফলে নদী শুকিয়ে বালুচরে পরিণত হচ্ছে। ফেনী ও মিরসরাইয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। সেচ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শতশত কৃষক। এ ব্যাপারে পাউবোর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, বার বার নিষেধ করার পরও ভারত নিবৃত্ত হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কার্যকর ফল পেতে হলে দিল্লীর সাথে বৈঠক করতে হবে।
ফেনী নদীর পানি তুলে নেয়া মরার উপর খাঁড়ার ঘা ছাড়া কিছুই নয়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমরা অভিন্ন নদ-নদীর ন্যায্য হিস্যা যেমন পাচ্ছি না, তেমনি নিজেদের নদীর পানিও ধরে রাখতে পারছি না। দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পরও  তিস্তার পানি নিয়ে কোন ফয়সালা করা যায়নি। গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির ব্যাপারেও কোন সুরাহা হয়নি। এমনকি বিকল্প গঙ্গাবাঁধ নির্মাণের ব্যাপারেও কার্যকর কোন সুরাহা করা যায়নি। বাংলাদেশের পানি পাবার বিষয়টির সাথে সরকারের সদিচ্ছা ও দৃঢ়তার প্রশ্ন জড়িত। আমরা ভারতকে কেবল দিয়েই যাচ্ছি। বিনিময়ে কিছুই পাচ্ছি না। দুর্বল পররাষ্ট্র নীতিই যে এর মূল কারণ, তা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। ভারত সেই সুযোগই নিচ্ছে। এ সুযোগেই ভারত এখন আমাদের নিজস্ব নদী থেকে পানি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তা বন্ধে সরকারের তরফে তেমন কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ভারতের পানি ছিনতাই রোধে আমরা আশা করি, অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন