Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কবিতাবলী

| প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২২, ১২:০৩ এএম

নতজানু

আতাহার খান
লোকটি কেমন জানি মাথা নত করে থাকে, ভুলেও কখনো
চোখ তুলে কারো দিকে তাকায় না,
বসে থাকলেও মাথা থাকে নীচু,
দেখে মনে হয়, অস্তিত্বের দৃঢ়তা হারিয়ে
কলেজ গেটের মোড়ে ডাস্টবিনে
ঢেলে ফেলে দিচ্ছে আত্মবিশ্বাসের সকল রসদ-
আগুনে পোড়ানো ছাই হয়ে কেন ঝরে
তার প্রতিবাদ করবার সব ভাষা,
জানি না, সে কেন আজ
হতাশার পথ বেছে নিয়ে হয়ে আছে বড় বেশি নতজানু!

ব্যর্থতায় ডুবে থাকা এমন মানুষ কেন
পারে না বাসনা মেলে ধরে
নির্ভয়ে দাঁড়াতে? কেন তার এত ভয়?
সেও মাথা উঁচু করে দুই চোখ থেকে
নির্ভয়ে ছড়িয়ে দিতে পারে উজ্জ্বল গরম রোদ,
কেন জানা নেই তার
সুপারি গাছের শক্ত কাণ্ডের মতন
মেরুদণ্ড সোজা রেখে অনুভব করা যায় অবারিত স্বাধীনতা!

 

অক্ষমের ক্ষমা
জাহাঙ্গীর ফিরোজ
একে একে নিভিয়ে দিয়েছি ক্রোধের মশাল
ধীরে ধীরে মুছে ফেলিলাম আহত ক্ষতের চিহ্ন
তবু ঘৃণার শেওলায় লেগে আছে রক্তের দাগ।
সে আর ফেরেনি ঘরে,আষাঢ়ের মেঘ চলে গেছে
নদীরা শুকিয়ে গেছে বুকভাঙা হাহাকারে ;
অপেক্ষা! কী দারুণ তৃষ্ণার যন্ত্রণায় বেঁচে থাকা!!
সে-ও আজ চৈত্রের খরতাপে যেন বিশুষ্ক তৃণ!

বিচার পাইনি, বিচার পাব না এই পৃথিবীতে
অক্ষম তাই ক্ষমা করিলাম
প্রভূ, তুমিও কী ক্ষমা করে দিবে?

 

মেঘলা দুপুর
কামার ফরিদ
বারুদের গন্ধসহ একতারে বেঁধে নিয়ে দীপকের সুর
বন্যা সে এসেছিল, কাঁধে নিয়ে পৃথিবীর মেঘলা দুপুর
পলাশের রং মেখে একদিন গড়েছিল শহীদ মিনার
বানের জলের সাথে খরকুটো পেয়েছিল কুলের কিনার।

একুশের পথ ধরে বন্যা সে গিয়েছিল আসাদ নগর
আসাদ নগরে বসে গুনেছিল বুলেটের প্রতিটি প্রহর
কষ্টকে কাঁধে নিয়ে অবিরাম হেঁটে চলে চৈত্র দুপুর
দৃষ্টিতে ছিল তার ঝরে পড়া পাতাদের পায়ের নূপূর।

যুদ্ধটা শুরু হলে আসি বলে চলে গেল জননীর সুখ
আকাশের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে তরতাজা ছেলেটার মুখ
স্বাধীন পতাকা হাতে ফিরে এলো মহেন্দ্র সকাল
ফিরলো না সেইজন- মানীষার প্রিয়মুখ বুনো হরিয়াল।


ভোর
মাহবুব হাসান
বৃষ্টির ফোটার মতো ভোর
আমাকে তুলে নেয় সালাতের জন্য
প্রতিদিন আমাকে নতুন করে তোলে শ্বাসের মতো,
প্রশ্বাসের আনন্দ তুমি কী অনুভব করো হে আমার বন্ধু,
আজ সকালটি ঠা-ঠার ঠমকে
নাচতে শেখায়---
জৈষ্ঠের আমের বাগান যেমন বাতাসের সোহাগী আদরে
বাগানিকে ডেকে তোলে, আজ আমি
সেই শয্যা থেকে উঠি---

ছায়াচ্ছন্ন ভোর আমার সঙ্গে হাঁটে
তারপর আলোর দিগন্ত ফাটে যেন বেদনার কোমল লাল
আমার চৌদিকে
নাচতে থাকে আলোর সংসার।
হে বৃষ্টি তুমি তো আনন্দাশ্রু মহাকাশের---
তুমি তো আমাদের শশ্মষা
ধুলিবালিময় পৃথিবীর কাব্য।

 

মর্মজ্বালার প্রতিশব্দ
হাসান হাফিজ
নদী কী আর নদী আছে?
দুঃখ হয়ে গেছে।
হাহাকারের প্রতিশব্দ বলতে পারো ওকে।
লোলচর্ম বৃদ্ধা নারী
রজঃস্বলা হবে না কক্ষনো।
নদী কী আর নদী আছে?
মানুষ নামের দস্যু সকল
খুন করেছে, নদীর রক্তে হাত রাঙিয়ে
আত্মপ্রসাদ পাচ্ছে তারা
এই মুনাফা ভয়ঙ্করী আত্মঘাতী
সেইটে বোঝার গুণ ক্ষমতা
লুপ্ত হলো লুপ্ত হলো, এমনভাবে
স্বৈরাচারী মানুষগুলো
ঘাতক হয়ে শাস্তি পেল
কিন্তু বোঝার উপলব্ধির
বোধটুকুও নেই যে তাদের
অভিসম্পাত আর করুণা
প্রাপ্য ওদের প্রাপ্য ওদের।

 

ইজদানীর হাঁসগুলা
আবদুল হাই শিকদার
হাইঞ্জাবেলায় বিলের কান্দায় খাড়াইয়া
রওশন ইজদানীর হাঁসগুলারে ডাকি
তই তই তই-
তহনও বুঝবার খানিকটা বাকি
হাঁস তো বহুত দূর
নাই একটাও পাখি

পানি শুন্য খাঁ খাঁ বিলে কেবলই
ভূত প্রেত আর খাকি
তাহাদের অট্টহাসি নাকি
কেরদানী করিয়া বেড়ায়
আর মাইয়া গারমেন্টসে
হাঁস আনার কামকাইজ ফাঁকি

এই হাইঞ্জায় আমি হই ইজদানীর হাঁস
আবার বিলের কান্দায় হোক সেই সর্বনাশ

হাঁস আমি কই পামু
কারে নিয়া ঘরে যামু
কানে প্রাণে কও কোনো মামু।

 

কুঠারের আঘাত
মাহমুদ শফিক
হতে চেয়েছিলাম সুদর্শনার চোখ,
মেঘমল্লিকা, পাহাড়ের ওপর চাঁদের
মতো কাঠের প্রাসাদ।
হতে চেয়েছিলাম স্বচ্ছ হ্রদ,
বসন্তের শুরুতে কুঁড়ির ভেতরে
আধফোটা ফুলের রক্তাক্ত সকাল,
ঝাউ গাছের মাথার ওপর ঝাঁপিয়ে
পড়া মেঘ, বৃষ্টির ঝাপটা।
হতে চয়েছিলাম পথের ওপর
পড়ে থাকা সোনার মোহর,
রাষ্ট্রের ভেতরে ঝরনা।
ইতিহাসের পুরনো পথে যেতে যেতে
চোখের সামনে একে একে খুলে গেছে
ভারি পৃষ্ঠা, অধিকার হারানোর
গল্প পড়তে পড়তে ভিজে গেছে চোখের
পাতা, তাতে পাবার কোনো গল্প নেই,
স্বপ্ন নেই,
তবু ফলের ভেতরে পোকার মতো
পেতে চেয়েছিলাম জীবনের মিষ্টি স্বাদ।
হতে চেয়েছিলাম তৃণের দুঃখ নিয়ে বেঁচে থাকা
ভীরু খরগোশ, শামুকের মতো খোলের
ভেতরে লুকিয়ে থাকা লাজুক স্বভাবের মানুষ।
ধারণ করেছি আমি বৃক্ষের জীবন, কুঠারে
আঘাত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কবিতাবলী

১৭ জুন, ২০২২
৪ জুন, ২০২২
আরও পড়ুন