তৌহিদবাদীরাই ভারতের আদিবাসী
হিন্দ অঞ্চলে যত লোক বসবাস করে তারাই হিন্দী বা হিন্দু। ফারসী ও তুর্কীতে হিন্দুস্তান। আরবীতে
দৈনিক ইনকিলাবের বিষয়ে লিখতে গেলে যেতে হবে অনেক দূরে, অর্থাৎ অনেক গভীরে। এদেশে হাতে গোনা যে কয়টি সংবাদপত্র ছিল তার প্রায় সবই ছিল সেকুলার ভাবাদর্শপূর্ণ। ইসলামের কথা, ইসলামি সংস্কৃতি, ইসলামি সমাজ ব্যবস্থার কথা পত্রিকাগুলোতে ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। আমাদের দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ দেশে ইসলামের সেবায় অনেক খেদমত করেছেন। তাঁরা হাজার হাজার মাদরাসা, খানকা প্রতিষ্ঠা করেছেন। বার্ষিক বিভিন্ন ধর্মীয় মাহফিলের মাধ্যমে জনগণকে নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা দিচ্ছেন, কিন্তু এসব সংবাদ আমাদের দেশের অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমেই অনুপস্থিত থাকতো। শত চেষ্টা করেও এসব সংবাদ প্রকাশের ব্যবস্থা যখন সম্ভব হচ্ছিল না, তখনই এই বিষয়টি অনুধাবন করলেন আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় দেশবরেণ্য আলেমে দ্বীন আলহাজ্ব মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)। মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) মাদরাসা শিক্ষকদের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের দায়িত্ব নিয়ে জমিয়াতকে সাংগঠনিক রূপে সুসংগঠিত করে মাদরাসাসহ বেসরকারি শিক্ষকদের ভাগ্য উন্নয়নে অনেক সভা সমাবেশ করেছেন, বহু চেষ্টার করেও এসকল সংবাদ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশের ক্ষেত্রে বারবার আশাহত হয়েছেন। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের কেন্দ্রীয় সভায় সিদ্ধান্ত হলো, জমিয়াতের ব্যস্থাপনায় একটি জাতীয় দৈনিক প্রকাশের। বিষয়টি নিয়ে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের জাতীয় নেতৃবৃন্দের অনেক সভা হয়েছে। মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) হজ্বের সফরেও মক্কা মুকাররামা ও মদীনা মুনাওয়ারায় পবিত্র স্থানে বসেও এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি তাঁর পরিকল্পনার কথা আমাদের শুনিয়েছেন। এবিষয়ে তিনি পবিত্র খানায়ে কাবায় আল্লাহর রহমত কামনা করেছেন। রাসূলে পাক (সা.) এর মাজার জিয়ারাতেও সকলকে নিয়ে দোয়া ও সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। বাগদাদে বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) এর দরবারেও এনিয়ে সাহায্য কামনা করেছেন। পত্রিকা প্রকাশের জন্য অফিস নির্মাণ, সাংবাদিক নিয়োগসহ আনুসাঙ্গিক খরচের তহবিল জমিয়াত ফান্ডে না থাকায় জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দ মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)কে তাঁর ব্যক্তিগত মালিকানায় পত্রিকাটি প্রকাশের অনুরোধ জানান। বিশেষ করে, সেই সময়ে পত্রিকা প্রকাশের বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন ছারছীনা দরবার শরিফের মরহুম মগফুর পীর ছহেব মাওলানা আবু জাফর মো. ছালেহ (রহ.)সহ দেশবরেণ্য প্রখ্যাত পীর-মাশায়েখ ও আলেম-ওলামা। সকলের অনুরোধে রাজি হলেন মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে পত্রিকার নাম আহ্বান করা হলো। জমা হলো অনেক নাম। বহু আলোচনা পর্যালোচনা করে নাম ঠিক করা হলো ‘দৈনিক ইনকিলাব’, যা শুধু দেশ ও জনগণের কথা বলবে, সাথে সাথে ইসলাম ও ইসলামি বিশ্বের ঐক্য, দেশের ধর্মীয় শিক্ষা, ইসলামি সমাজ ব্যবস্থার কথা গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরবে।
মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) এ মহৎ ও চ্যালেঞ্জিং কাজের দায়িত্ব দিলেন তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসুরী বড় সন্তান আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন’কে। তিনি ছিলেন একবারেই নবীন সম্পাদক। তাঁর পিতার আদর্শে ও পরামর্শে বনানীর একটি ভাড়া বাড়ি থেকে যাত্রা শুরু করেন আপোসহীনভাবে ইসলাম ও জনগণের কথা বলতে। বাছাই করা সেরা সাংবাদিক, আন্তর্জাতিক মানের কলামিস্টদের নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে অল্পদিনেই দেশ-বিদেশে একটি জনপ্রিয় সংবাদপত্র হিসেবে জায়গা করে নেয় দৈনিক ইনকিলাব।
এ পত্রিকা ১৯৮৬ সালে ৪ জুন প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিন যুগ ধরে ইসলামের সেবায় ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে। দেশের অন্যান্য পত্রিকার সাথে দৈনিক ইনকিলাবের তুলনা কখনই হবে না। এ পত্রিকা প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যই ছিল ইসলামের সেবা। জাতীয়, আন্তর্জাতিক, ব্যবসা, শিক্ষা, অর্থনীতি, সমাজনীতি, খেলাধুলা ও বিনোদনের পাশাপাশি দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, দরবার-খানকা, মাহফিল, দ্বীনি মজলিস, মাদরাসা শিক্ষা, ইসলামী মূল্যবোধ ও কালচার সম্পর্কিত সংবাদ বিশ্বের দরবারে উপস্থাপনের একমাত্র প্লাটফর্ম দৈনিক ইনকিলাব। লক্ষ করলে দেখা যায়, দৈনিক ইনকিলাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিরোনামে ইসলামিক তথ্য উপাত্ত সম্বলিত ফিচার, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কবিতা, প্রশ্নোত্তরসহ নবী-রাসূল ও আউলিয়া কেরামের জীবনী বর্ণনা করা হয়। প্রতি শুক্রবার প্রকাশিত হয় ‘ধর্ম দর্শন’ নামক সম্পূর্ণ আলাদা একটি পাতা। প্রতি শনিবারে প্রকাশিত হয় ‘ইসলামি জীবন’ নামে আরেকটি পাতা। এছাড়াও দৈনিক ইনকিলাবের অনলাইন পোর্টালে ‘ইসলামী বিশ্ব’ শিরোনামে ভিন্ন একটি পেইজ রয়েছে। এ সবই দৈনিক ইনকিলাবের ইসলাম ও মুসলিমপ্রিয়তার প্রমাণ দেয়। দেশে যখন ইন্টারনেট, ফেইসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ কিছুই ছিল না, তখন দ্বীনের কথা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যম ছিল দৈনিক ইনকিলাব। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ইনকিলাব এখন দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিশেষ করে, ইসলামী ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখায় পত্রিকাটি সর্বস্তরের জনগণের পছন্দ তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে।
পশ্চিমা দেশগুলো যখন বিশ্বব্যাপী ইসলামের আলো নিভিয়ে দেয়ার চক্রান্তে মাতোয়ারা, সকলেই ধীরে ধীরে তাঁদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কথা বলার সাহস হারিয়ে ফেলছে, ঠিক তখন ইসলামকে উজ্জীবিত ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে অকুতভয় সৈনিকের ন্যায় দৈনিক ইনকিলাব তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সাথে স্পষ্ট সংবাদ প্রকাশ করেছে। একই সাথে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য যেসকল লেখা দৈনিক ইনকিলাবের মাধ্যমে সবার সম্মুখে উপস্থাপিত হয়েছে তা সত্যিকারার্থেই বিরল।
বর্তমানে ইন্টারনেট, ফেইসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইন্সটাগ্রামসহ অন্যান্য যেসকল সোস্যাল মিডিয়া রয়েছে, সেগুলোর প্রভাবে যুবসমাজের একাংশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে। মুসলমানের সন্তানরা ইসলামের মৌলিক জ্ঞান সম্পর্কে ক্রমান্বয়ে অজ্ঞ হয়ে যাচ্ছে। ইসলামী মূল্যবোধ, কুরআন হাদিস চর্চা, মুসলমানদের অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য, ধর্মীয় অনুভূতি ভুলতে বসেছে। সেদিকে লক্ষ রেখে এবং এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করে পত্রিকাটি ইসলামী বিশ্ব, ইসলামী জীবন, ধর্ম দর্শন, শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম, ইসলামী প্রশ্নোত্তর, কুইজসহ নানাবিধ আইটেমের মাধ্যমে যুবসমাজকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করে আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে।
দেশের সার্বভৌমত্ব, শান্তি-শৃংখলা অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, সুদ-ঘুষ, ধর্ষণ, লুণ্ঠনের ভয়াবহতা ও কুরআন হাদিসের আলোকে এর পরিণতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া হয় মাদরাসাসমূহে। সেই মাদরাসাসমূহের কার্যক্রম, শিক্ষা পদ্ধতি ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে দৈনিক ইনকিলাব যুগযুগ ধরে ইসলামের সেবায় নিয়োজিত আছে। একই সাথে মহানগরী থেকে মফস্বল এলাকায় আয়োজিত মাহফিল, দ্বীনি আলোচনা, ইসলামী সভা-সেমিনার, মসজিদের খুতবাসহ ইসলামি অনুষ্ঠানসমূহের সংবাদ প্রচারের কারণে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত হচ্ছে।
ইসলামের সেবায় নিবেদিত দৈনিক ইনকিলাব দেশের ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষ করে, মাদরাসা শিক্ষার প্রচার-প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আলিয়া ও কওমি শিক্ষাধারার উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। এই শিক্ষাবান্ধব পত্রিকাটিতে মাদরাসা শিক্ষা উন্নয়নে আলেম-ওলামার শত বছরের দাবি একটি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অগনিত সংবাদ ও সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকাটিতে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন-অগ্রগতি বিশেষ করে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের দাবি দাওয়ার বিষয়ে যে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে তা এদেশের আলেম-ওলামা কোনদিনই ভুলবে না। চিরবঞ্চিত ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্দশার কথা দৈনিক ইনকিলাবই গুরুত্ব সহকারে লিখে যাচ্ছে। অপরদিকে এদেশের ইসলামি সংস্কৃতি, ইসলামি তাহজিব-তামাদ্দুন একমাত্র ইনকিলাবই লালন করে বলে আমি দৃঢ়চিত্তে বলতে পারি। মানুষের আত্মশুদ্ধির মারকাজ হচ্ছে এদেশের হক্কানী পীর-মাশায়েখের দরবার ও খানকাসমূহ। যুগযুগ ধরে দরবার ও খানকার তালিমের মাধ্যমে মানুষ যে নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা পাচ্ছে তা একমাত্র দৈনিক ইনকিলাব গুরুত্বের সাথে প্রচার করে যাচ্ছে। এককথায় বলতে পারি, ইনকিলাব প্রতিষ্ঠাই হয়েছে দেশ ও দেশের ৯২ ভাগ মুসলমানের মনের কথা প্রকাশের জন্য। এর ফলে দেশের হক্কানী দরবার, খানকা, মাদরাসা, আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ পত্রিকাটিকে অন্তরে স্থান দিয়েছেন, যার প্রমাণ দেখেছি পত্রিকাটির দুঃসময়ে ছারছীনা, ফুলতলী, মুশুরিখোলা দরবারসহ অগণিত দরবার ও আলেম-ওলামার রাজপথে মিছিলের মাধ্যমে।
বর্তমানে দেশে অগণিত সংবাদপত্র প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু ইনকিলাব ব্যতিক্রম। তদুপরি ইনকিলাবের সাহসী সম্পাদকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পত্রিকাটির ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রয়েছে। দেশ, জনগণ, মুসলিম বিশ্বের ঐক্যসহ ইসলামের সেবায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এই জাতীয় পত্রিকা। আল্লাহপাক দৈনিক ইনকিলাবের মহৎ উদ্দেশ্য, সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে কবুল করুন। আমিন।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।