Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভারতে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে নিহত ১১৫ : আহত দেড় শতাধিক

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:৩২ পিএম | আপডেট : ১:১৩ এএম, ২১ নভেম্বর, ২০১৬

ভারতের উত্তরপ্রদেশের কানপুরে গতকাল যাত্রীবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে কমপক্ষে ১১৫ ব্যক্তি নিহত এবং দেড় শতাধিক আহত হয়েছে। উদ্ধার কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় এবং আহতদের অনেকের অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় মৃতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রেল দপ্তরের। গতকাল ভোর ৩টা নাগাদ কানপুরের দেহাট জেলার পাখুরিয়ায় লাইনচ্যুত হয় পাটনা-ইন্দোর এক্সপ্রেসের ১৪টি কামরা। ঘটনার খবর পেয়েই উদ্ধার কাজে নামে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর। কানপুর ও ঝাঁসি থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে মেডিক্যাল টিম।
জানা গেছে, এই দুর্ঘটনায় ২টি জেনারেল বগি, সবকটি এসি কোচ ও ৬টি সিøপার কোচ লাইনচ্যুত হয়। ২টি কামরায় এখনও অনেকের আটকে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তবে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। নিহত ও আহতদের পরিবারের জন্য সাড়ে ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস জানিয়েছে রেলমন্ত্রণালয়। দেয়া হচ্ছে ত্রাণ সামগ্রীয়ও। ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়ে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু একটি টুইটবার্তা করে, সেখানে তিনি দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শোকজ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রীও।
রেল দপ্তরের খবর, সকালে দুঘর্টনার পরই উদ্ধারকাজে নেমেছে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর। আশঙ্কা করা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সূত্রের খবর, কী কারণে ঘটনা ঘটেছে এখনও অজানা। তবে প্রাথমিক অনুমান, আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে রেল লাইনে ফাটল ঘটে। আর তাতেই ঘটে যায় এই মর্মান্তিক ঘটনা। ঘটনাস্থলে যেতে পারেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু।
দুমড়ে যাওয়া বগি সরিয়ে চলছে প্রাণের খোঁজ
ঘড়িতে সবে ভোর তিনটে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ইন্দোর-পাটনা এক্সপ্রেসের বেশিরভাগ যাত্রীই। হঠাৎ প্রচ- ঝাঁকুনিতে সব এলোমেলো হয়ে গেল। রেল লাইনের বাইরে ছিটকে পড়ে ট্রেনের ১৪টি কামরা। দুর্ঘটনার বেশ কয়েক ঘণ্টা পরেও ভয়াবহ ছবি যেন তাড়া করে বেড়াচ্ছে যাত্রীদের। ইন্দোর-পাটনা এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ১০৭ জন। এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু যারা বেঁচে গেছেন, মানসিক ভাবে প্রায় ভেঙে পড়েছেন তারাও। কোনওরকমে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ট্রেন থেকে প্রাণ নিয়ে বেরোতে পারলেও চোখের সামনে দুঃস্বপ্নের মতো ভাসছে রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত সহযাত্রীদের লাশ। কেউ হারিয়েছেন নিকটাত্মীয়কে, কারোর বন্ধুর খোঁজ নেই। কানে ভাসছে তাঁদের গোঙানি, আর চলছে কোনওরকম খোঁজ পাওয়ার অসহায় চেষ্টা।
‘আমি ৫ নম্বর কামরায় ছিলাম। আমার সঙ্গে আরও ৪-৫ জন ছিল। তাদের কারোর খোঁজ পাচ্ছি না। মহাকালের দয়াতেই আমি বেঁচে গিয়েছি’ -বললেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের এমনই এক যাত্রী। আরও একজনের কথায়, ‘আমরা পাটনা যাচ্ছিলাম। ট্রেনটা যে লাইন থেকে পিছলে যাচ্ছে, এটা আমি টের পেয়েছিলাম। আমার খুই আঘাত লেগেছে। কিন্তু ভীষণ চিন্তা হচ্ছে মাকে নিয়ে। সঙ্গে মা ছিলেন, তাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না’। এমনই আত্মজনের কান্নায় এখন ভারী কানপুরের পাখুরিয়া। কোনও রকমে প্রাণে বাঁচলেও খোঁজ চলছে আত্মীয়-বন্ধু-সহযাত্রীর। দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবার পিছু পাঁচ লাখ, গুরুতর আহতদের ৫০ হাজার ও স্বল্প আহতদের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব।
ট্রেনের মধ্যে আটকাপড়া অনেককেই বের করা যায়নি
ভারতীয় রেলের ইন্দোর থেকে পাটনাগামী ১৯৩২১ এক্সপ্রেস ট্রেনটি যখন এই মারাত্মক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তখন ভিড়ে ঠাসা ট্রেনটির বেশির ভাগ যাত্রীই ছিলেন গভীর ঘুমে। পরে ঘটনাস্থলে দেখা গেছে, ওই ট্রেনের অন্তত ১৪টা কামরা একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে- আর তার প্রায় সবগুলোর ভেতরেই আটকা পড়েছেন অসংখ্য যাত্রী। তাদের অনেকেই হতাহত, কেউ কেউ প্রাণে বেঁচে গেলেও তাদের অনেককেই বের করা যাচ্ছে না।
উদ্ধারের কাজে ব্যস্ত রেলকর্মীরা অবশ্য বলছিলেন, বিধ্বস্ত কামরাগুলোর ভেতর থেকে জীবিতদের বের করাটাই তাদের এখন অগ্রাধিকার।
তারা বলছিলেন, ‘প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় এখনও পর্যন্ত পঞ্চাশের বেশি লোককে জীবিত বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। গ্যাস কাটার দিয়ে খুব সাবধানে আমাদের ট্রেনের মেটাল কাটতে হচ্ছে, যাতে ভেতরে মানুষজনদের কোনও ক্ষতি না-হয়। তবে এখনও অনেক বাচ্চা ও মহিলাদের গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে - তারা বেঁচে আছেন বোঝা যাচ্ছে এবং তাদের বের করার জন্য আমরা সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি’।
ট্রেনটি যখন উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি স্টেশন ছাড়িয়ে কানপুরের দিকে তীব্র গতিতে ছুটছে, তখনই হঠাৎ ট্রেনের প্রায় সবগুলো কামরা লাইন থেকে ছিটকে যায়। বিকেল চারটার মধ্যেই দোমড়ানো বগিগুলোর মধ্যে থেকে মোট ১০৩টি লাশ বের করা সম্ভব হয়। তবে রেল মন্ত্রণালয় ও প্রশাসন স্বীকার করছে, অন্তত দুটি কামরার ভেতর তারা এখনও প্রায় ঢুকতেই পারেননি বলা চলে- ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে।
ভারতীয় রেলের মুখপাত্র অনিল সাক্সেনা বলছিলেন, ‘কানপুরের কাছে পুখরায়া স্টেশনের পাশে রাত ৩টা ১০ মিনিট নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটে। ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু ভোররাতেই কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন- সেই অনুযায়ী প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রীদের বাঁচানোর কাজ শুরু হয়। তবে প্রথম দিকে উদ্ধারের কাজ শুরু করেন স্থানীয় গ্রামবাসীরাই’।
দুর্ঘটনার ব্যাপ্তি এতটাই বড় ছিল যে, রেল প্রশাসন এবং উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকারের পক্ষেও পরিস্থিতি পুরোপুরি সামলানো সম্ভব নয়- সেটা স্পষ্ট হয়ে যায় সকালেই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানান, সরকার ভারতের ন্যাশনাল ডিস্যাস্টার রেসপন্স ফোর্সের তিনটি ইউনিটকে ঘটনাস্থলে ছুটে যাবার নির্দেশ দেয় প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই।
তিনি বলছিলেন, ‘বারাণসী, গাজিয়াবাদ ও দিল্লি থেকে এনডিআরএফ-এর তিনটি দল সেখানে পৌঁছে গেছে। বাহিনীর মহাপরিচালককেও আমি বলেছি ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দিতে। ঘটনাটা খুবই বিরাট - নিহতদের সকলের পরিবারকে আমি সমবেদনা জানাই। এই দুর্ঘটনার তদন্ত অবশ্যই হবে - যতদূর জানি সেই নির্দেশও জারি হয়ে গেছে’। রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুও ইতিমধ্যে টুইট করে জানান, ‘এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
দুর্ঘটনার কারণ সম্বন্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার এখনও কিছু জানায়নি- তবে রেল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন, রেললাইনের কোনও ত্রুটির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এর পেছনে এখনও নাশকতারও কোনও প্রমাণ মেলেনি।
তদন্ত অবশ্য এখনও শুরু হয়নি, তবে প্রিয়জনদের হারানোর যন্ত্রণায় পুখরায়া গ্রামের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
আজমগড়ের রুবি গুপ্তা যেমন। দশদিন বাদেই বিয়ে, বাবা আর ভাই-বোনদের সঙ্গে সে জন্যই গ্রামের বাড়িতে আসছিলেন সবাই মিলে। ভাইবোনরা ছোট খাটো আঘাত পেলেও আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে গেছেন, শুধু কোনও হদিস নেই বাবা রামপ্রসাদ গুপ্তার। হাসপাতালেও নেই, উদ্ধারের তালিকাতেও নেই। বাবাকে খুঁজতে যত দেরি হচ্ছে, তত অস্থির হয়ে উঠছে রুবি ও তার ভাইবোনরা। সূত্র : বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
ইনকিলাব ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় বিপুল সংখ্যক লোকের প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। গতকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে পাঠানো এক বার্তায় তিনি এই শোক প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘ভারতের উত্তর প্রদেশে ট্রেন দুর্ঘটনায় বহু লোকের মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ এবং আমার পক্ষ থেকে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। আমরা শোকাহত পরিবারগুলোর জন্য প্রার্থনা করছি।’
প্রধানমন্ত্রী নিহতদের জন্য শান্তি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। সূত্র : বাসস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ