Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুই দিনে প্রতি ১০০ লিচুর দাম বেড়েছে ৬০০ টাকা

দিনাজপুরে লিচুর বাগানে আগুন : চায়না-থ্রি

মাহফুজুল হক আনার, দিনাজপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

ভোজ্যতেল, চাল, আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পর এবার মৌসুমী ফল লিচুতে আগুন লেগেছে। দিনাজপুরের বেদেনা ও চায়না-থ্রি লিচু টাকা দিয়েও পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে। গতকাল বুধবার দিনাজপুরে প্রতি শ’ বেদেনা লিচুর দাম ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা আর চায়না-থ্রি লিচু ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তারপরেও ভালো মানের বেদেনা বা চায়না থ্রি লিচু বাজারে আসছে না। সরাসরি বাগান থেকেই কিনে নিচ্ছে।

পক্ষান্তরে মাদ্রাজি ও বোম্বে লিচু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩০০ টাকা হিসেবে। অথচ গত সপ্তাহে লিচু বাজারে উঠার সময় বেদেনা ৮শ’ আর চায়না-থ্রি ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাবে তা কৃষক ও ফড়িয়ারাও ভাবতে পারেননি। পরিস্থিতি এখন এমনই দাঁড়িয়েছে ফড়িয়ারা এখন বেদেনা ও চায়না-থ্রি লিচু’র খোঁজে চিরুনী অভিযান চালাচ্ছে। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে লিচুর সন্ধান পেলেই গাছের লিচু কিনে নিচ্ছেন। পরে তা ভিআইপি ক্রেতাদের কাছে আকাশচুম্বি দামে বিক্রি করছেন। উপর মহলের অনুরোধ, আদেশ-নির্দেশ পালন করতে যেয়ে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হন্যে হয়ে বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচুর পিছনে ছুটছে। দুই-তিন দিনের ব্যবধানে লিচুর প্রতি শ’তে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বেড়ে গেছে।

লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুরে সরকারিভাবে লিচু কেনা বেচা শুরু হয়েছে গত ২৩ মে। ঐদিন স্থানীয় গোর এ শহীদ ময়দানে লিচুর বাজারের উদ্বোধন করা হয়। শুরুতে একশ’ মাদ্রাজী লিচু বিক্রি হয় ২শ’ টাকা। এর কয়েকদিন পর অর্থাৎ গত ২৬ থেকে ২৭ তারিখ থেকে পরিপক্ক বেদেনা ও চায়না-থ্রি লিচু বাজারজাত হয়। মাত্র ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যেই বেদেনো ও চায়না-থ্রি লিচুর জন্য হাহাকার পড়ে যায়। বাজারে এই দুই জাতের লিচু আসা মাত্রই মানুষ ছোঁ মেরে নিতে থাকে। পরিস্থিতি আঁচ করে ফড়িয়ারা বাজার ছেড়ে বাগানের দিকে ছুটতে থাকতে। কৃষকের কাছে চুক্তিভিক্তিক নেয়া বাগান এক দুই হাত ঘুরে চলে আসতে শুরু করেছে। যে যেভাবে পারছে বেদেনা ও চায়না-থি লিচু গাছেই কিনে নিচ্ছে। ফলে বাজার থেকে ভালো মানের বেদেনা ও চায়না-থ্রি লিচু হারিয়ে গেছে। বেদেনা ও চায়না-থ্রি লিচুর হাহাকার অবস্থা নিয়ে স্থানীয় কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে বেদেনা ও চায়না-থ্রি লিচুর ফলন অপেক্ষাকৃত কম হয়েছে। তাদের মতে এবার দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় ৫ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলায় এবার ৩০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে বেদেনা ও চায়না লিচুর ফলন কম হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। কিন্তু কি কারণে এবার বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচুর ফলন বিপর্যয় হয়েছে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিছু জানাতে পারেনি। তবে কৃষকদের মতে বেদেনা ও চায়না-থ্রি’র এবার অফ-ইয়ার। অফ ইয়ার বলতে গত দুই-তিন বছর যে গাছে ভালো ফলন হয় সে সব গাছে এবার মুকুলই আসেনি। অর্থাৎ সেসব গাছে ফলন হয়নি। আর মাঝে তীব্র খরার কারণে মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বেদেনা ও চায়না-থ্রি লিচুর ফলন এবার গতবারের তুলনায় অর্ধেকের কম হয়েছে।

এদিকে বেদেনা ও চায়না-থ্রি লিচুর হাহাকার পড়ায় উপর মহলের ইচ্ছা পুরণে স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারা মরিয়া হয়ে গেছে। ভাবটা এমন যে দাম পরের কথা আগে লিচু দেন। এই অবস্থায় ফড়িয়ারা যে যেভাবে পারছে দাম নিচ্ছে। এদিকে ফলন বিপর্যয় এবং মাত্রাতিরিক্ত চাহিদার পাশাপাশি প্রচণ্ড গরমের কারণে আগামী ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে দিনাজপুরে বেদেনা ও চায়না-থ্রি লিচু শুন্য হয়ে পড়বে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান।



 

Show all comments
  • Zafar Imam ২ জুন, ২০২২, ১০:৪৩ এএম says : 0
    Very sad news
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নুরুল আমিন ২ জুন, ২০২২, ১০:৪৩ এএম says : 0
    সাধারণ মানুষ লিচু খেতে পারবে না
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লিচু

১২ জুন, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ