পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জৈষ্ঠ আসলেই দিনাজপুরের লাল টসটসে লিচুর স্বাদ গ্রহণের আগ্রহ সৃষ্টি হয় রসালো পিপাসুদের। কিন্তু স্বাদের মধ্যে সাধ্য যেন ব্যারিকেড সৃষ্টি করেছে। এর একমাত্র কারণ কাঙ্খিত ফলন নেই লিচুর। সবথেকে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে মূল্যের দিক থেকে সাধারণ মানুষের নাগালে থাকা মাদ্রাজী জাতের লিচু’র ফলন প্রায় শুণ্যের কোঠায়। কিছুটা ফলন হয়েছে বোম্বে, বেদেনা, চায়না থ্রি ও কাঠালি জাতের লিচুর। বৃষ্টি অভাবে লাগাতার তাপদাহে এসব লিচুর দানাও বড় হতে পারেনি।
এর মধ্যে দফায় দফায় শিলা বৃষ্টির আঘাতে গাছেই লিচু ফেটে গেছে। লিচু ফলন না হওয়ায় বছর ভিত্তিক বাগান ক্রয় করা অনেক ফড়িয়া এবার বাগান ছেড়ে চলে গেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই লিচু’র দাম অত্যন্ত চড়া। গত বছরের তুলনায় মানভেদে এবার লিচুর দাম প্রায় দ্বিগুণ হাঁকা হচ্ছে। তবে ভিআইপি খ্যাত বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু এখনও পুরোপুরি বাজারে উঠেনি। নিম্নচাপজনিত কারণে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি’র কারণে কৃষক অপেক্ষা করছে শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য। আবহাওয়া শুষ্ক হলেই পুরোদমে এসব লিচু পাড়া হবে গাছ থেকে।
আশা করা হচ্ছে আগামী তিন-চারদিনের মধ্যে লিচু পুরোদমে পাড়া শুরু হবে। আর এবার ফলন কম হওয়ায় দশ থেকে পনের দিনের মধ্যেই লিচু শেষ হয়ে যাবে বলে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। করোনার কারনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মূল বাজার থেকে স্থানান্তর করে খোলা মাঠ গোর এ শহীদ মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে লিচুর বাজার বসানো হেেছ। খুচরা ক্রেতারা বাজার থেকে লিচু সংগ্রহ করছে। বাগান থেকে সরাসরি ট্রাকে করে খাচা ভর্তি লিচু যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বর্তমানে দিনাজপুরে বেদেনা লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতি হাজার পাঁচ থেকে ৬ হাজার টাকা। তাও দানা অত্যন্ত ছোট। একটু বড় দানা লিচু প্রতি হাজার ৭ হাজার টাকায় লুফে নিয়ে যাচ্ছে ভিআইপি ক্রেতারা। চায়না থ্রি লিচু এখনও বাজারে না উঠলেও গতকাল বুধবার দিনাজপুর গোর এ শহীদ মাঠে তিন হাজারের মত লিচু উঠেছিল বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার টাকা দরে। তবে বেদেনা ও চায়না থ্রি’র দানা আরও বড় হবে আগামী তিন-চারদিনের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। তবে এবার লিচু আগামী দশ থেকে পনের দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মাধববাটি এলাকায় কয়েকটি লিচু’র বাগান ঘুরে দেখা গেল অধিকাংশ গাছে নতুন পাতা শোভা পাচ্ছে। স্থানীয় কৃষক আবদুল করিম জানান, তার নিজের তিনটি বাগানে প্রায় দুই হাজার গাছ রয়েছে। এর মধ্যে মাদ্রাজী জাতের গাছ রয়েছে প্রায় ৮শ’ টি। যার ৮০ ভাগ গাছেই একটি লিচুও হয়নি। বোম্বে বেদেনা ও চায়না থ্রি গাছে তুলনামূলকভাবে কম লিচু এসেছে। তিনি জানান, তার বড় তিনটি বাগানের ফল তিন বছরের জন্য আগাম বিক্রি করে দিয়েছে। লিচু না থাকায় দুটি বাগান ফড়িয়ারা পরিচর্যাই করেনি। একটি বাগান যেখানে বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু রয়েছে সেই বাগানের লিচু তিনি বিক্রি করেছেন। তার মতে লিচু পাড়তে শুরু করলে দশ দিনও থাকবে না এই লিচু। লিচুর জন্য বিখ্যাত বিরল উপজেলাসহ বীরগঞ্জ, সদর কাহারোল উপজেলায় লিচু চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। তবে সেই তুলনায় আমের ফলন ভাল হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফড়িয়া জানান, সে দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩০ টি বাগান কিনে রেখেছে। কোনটি দুই আবার কোনটি তিন বছরের জন্য। কিনে রাখা বাগানগুলো থেকে তিন বছরের ফল বিক্রি করবে তারা। প্রতি বছর কৃষি বিভাগের পরামর্শ এবং নিজেদের অভিজ্ঞতায় আগে ভাগে গাছের গোড়ায় পানি দেয়া সার দেয়ার কাজ করে থাকি।
এবার করোনার কারণে কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। গাছের অবস্থা দেখে স্প্রে করা হয়। কিন্তু এবার আগে-ভাগেই গাছে নতুন পাতা দেখে প্রথম থেকেই গাছের গোড়ায় পানি বা সার দেইনি। এখন দেখতে পাচ্ছি পানি ও সার দিলে আরো অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পরতাম। তার মতে এবার ৩০ টি বাগানের মধ্যে মাত্র ১৪টি বাগানের লিচু নিতে পারবো। কিছু কিছু বাগানে যে পরিমাণ লিচু এসেছে তা রক্ষণাবেক্ষণে লিচুর দামের তুলনায় খরচ বেশী হবে বিধায় ঐ সব বাগানের ফল ছেড়ে দিয়েছি বাগানের মালিকের হাতেই। বেদেনা লিচুর জন্য বিখ্যাত সদর উপজেলার মাশিমপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেল একমাত্র বেদেনা চায়না থ্রি ও কাঠালি জাতের গাছে কিছু ফলন থাকলেও সারি সারি গাছের নতুন পাতা শোভা পাচ্ছে।
লিচুর ফলন বিপর্যয়ের কারন সম্পর্কে দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক প্রদ্যুত কুমার বললেন, ফলন বিপর্যয়ের মূল কারন উৎঘাটনে তারা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে তিনি পরিচর্যাকেই দায়ী করেছেন। তার মতে দিনাজপুর অঞ্চলে একরের পর একর জমির উপর বাগান সৃষ্টিকারী মালিকেরা অর্থশালী কিন্তু কৃষক নয়। গাছ লাগানোর তিন থেকে পাঁচ বছরের মাথায় ফলন আসতে শুরু করা মাত্রই তারা বাগান বিক্রি করে দেয়। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাগান নয় ফল ক্রয় করা ফড়িয়ারা বাড়তি ফলন পাওয়ার জন্য অধিক মাত্রায় সার ভিটামিন ও বিষ প্রয়োগ করে থাকেন। ফল পাড়ার পর ছোট ছোট ডালসহ পাতা পেড়ে নেন লিচুর খাঁচায় ব্যবহারের জন্য। এই ডাল নিয়মমাফিক না ভাঙ্গার কারণে গাছগুলিতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আর ক্ষত দিয়েই পুরো গাছ ক্ষতিকর ছত্রাক জাতীয় রোগে আক্রান্ত হয়ে ফলন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এক্ষেত্রে তিনি বাগান মালিকদের ফল বিক্রি করলেও বাগানের তথা গাছের প্রতি যত্ন নেয়ার আহবান জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।