পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পেশাদার অপরাধীদের মত নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়া পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সদস্যদের নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছে পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা। বলা হয়েছে, অপরাধের ধরণ অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও থামছে না তাদের অপরাধ। অন্য খবরে বলা হয়েছে, পুলিশের সাজার ৯৪ শতাংশই লঘু। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই জমা পড়ছে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ঘুষ, ডাকাতি, নারী কেলেঙ্কারি, নির্যাতন, প্রতারণাসহ নানা অভিযোগ। এসব অভিযোগের তদন্ত করে পুলিশ সদর দপ্তর। কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সাজা প্রদান করে সরাসরি সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার। পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সাজা প্রদান করে মহাপরিদর্শক। সহকারী পুলিশ সুপার থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাজার বিষয়টি দেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়াও অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করতে পারে পুলিশ সদর দফতর। বলা বাহুল্য, পুলিশ যখন কোন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তখন শীর্ষ ব্যক্তিরা বলে থাকেন, ব্যক্তির অপরাধের দায় বাহিনী নেবে না। অথচ অভিযুক্ত ‘ব্যক্তির’ অপরাধের তদন্ত পুলিশ বাহিনীই করে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত পুলিশের হাতে থাকার ফলে নানাভাবে চাপ দিয়ে শেষ পর্যন্ত তদন্ত পুলিশের পক্ষেই নিয়ে যাওয়া হয়।
দুষ্টের দমন, শিষ্টের লালন পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলেও এর ব্যত্যয় চরম আকার ধারণ করেছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে ঘিরে যেসব গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ করছে তার সাথে একশ্রেণীর পুলিশের সম্পৃক্ততা কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এর বাইরেও সামাজিক অপরাধের সাথেও একশ্রেণীর পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ততা প্রায় প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে। চাঁদা না পেয়ে ক্রসফায়ারে দেয়ার অভিযোগে কিছুদিন আগে কুষ্টিয়ার আদালত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীদের গুরুতর অভিযোগে যুক্ত করার ভয় দেখিয়ে ঘুষ গ্রহণের সচিত্র প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। রাজপথ থেকে তুলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। পরকীয়ার কারণে স্বামী হত্যার অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে। গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেল মোড়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়ার সময়ে হাতেনাতে ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটছে। ছিনতাইয়ে জড়িত থাকায় আরেক কনস্টেবলকে উত্তরা থেকে আটক করা হয়েছে। প্রকাশিত খবরানুযায়ী গত ৬ বছরে ৭৬ হাজার ৪২৬ জন পুলিশ সদস্যকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেয়া হয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এতেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এক শ্রেণীর পুলিশের এই অপরাধ প্রবণতা নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি, আলোচনা-সমালোচনা সত্ত্বেও অনেক পুলিশ সদস্যকে অপরাধ প্রবণতা থেকে নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকার রাজনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়নে পুলিশকে ব্যবহারের ফলে পুলিশকে যে ব্যাপক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, এক শ্রেণীর পুলিশ তারই অপব্যবহার করছে। অন্যদিকে পুলিশে দলীয়করণের বিষয়টিকেও দুর্নীতির কারণ হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে।
বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা নতুন কিছু নয়। তবে পুলিশ প্রশাসনে যা ঘটছে তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত অথবা ন্যায়বিচার না হওয়া বা হতে না পারার কারণেই অপরাধ দমনে কার্যকর উন্নতি হচ্ছে না। পুলিশের অপরাধ পুলিশ তদন্ত করে বিধায় এক ধরনের দুর্বলতা থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। ইতোপূর্বে পুলিশের অপরাধ তদন্তের জন্য বিকল্প চিন্তার কথা সুধিমহল থেকে বলা হয়েছে। আলোচ্য প্রেক্ষিতে বিষয়টি অধিকতর বিবেচনার দাবি রাখে। আমরা মনে করি, পুলিশের এ অপরাধ প্রবণতা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। পুলিশের মধ্যে চেইন অফ কমান্ড বজায় রেখে পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। পুলিশ অপরাধ করলে, তাকে অপরাধী হিসেবে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনুকম্পা দেখানো বাঞ্ছনীয় নয়। যারা অপরাধ দমন করবে, তাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়া কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।