Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আলেমরা জাতির বাতিস্বরূপ

মাওলানা মুহাম্মদ রুহুল আমিন | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২২, ১২:১০ এএম

এটাতো এমনিতেই জঘন্য অপরাধ। আলেম তো দূরের কথা, কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া, বিদ্বেষী মনোভাব ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা নাজায়েজ ও ফাসেকি কাজ। আর কোনো আলেমের বিরোধিতা করা বা গালিগালাজ করা কুফুরির পর্যায়ে। আল্লামা জাইনুদ্দিন ইবনে নুজাইম মিসরি (র.) বলেন, ‘যদি কেউ কোনো আলেম বা ফকিহকে ব্যক্তিগত কোনো কারণ ছাড়া (আলেম হওয়ার কারণে) গালি দেয়, তাহলে সে কুফরী পর্যায়ের কাজ করেছে।’ (আল-বাহরুর রায়েক ঃ ৫/১৩২)
আলেমদের জীবনের মূখ্য উদ্দেশ্য হলো দ্বীন প্রচার করা ও দ্বীনের শিক্ষা দেয়া। কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার চে’ায় নিয়োজিত তাঁরা। আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক তৈরির সহজ পথ দেখিয়ে দেন আলেমগণ। মানুষদেরকে আল্লাহর বিধি-বিধান সমুহ শিক্ষা দেন। হালাল-হারাম স্প’ করে শিক্ষা দেন। আল্লাহর নির্দেশ রয়েছে যে আলেমগণ মানুষকে পাপকর্ম ও হারাম ভক্ষণ থেকে কঠোরভাবে বাঁধা দিবে। আল্লাহ বলেন, ’ তাদেরকে আল্লাহওয়ালা এবং আলিমগণ পাপের বাক্য হতে এবং হারাম ভক্ষণ করা হতে কেন নিষেধ করছেনা? তাদের এ অভ্যাস নিন্দনীয়।’(সুরা মায়িদা, আয়াত-৬৩)। তাই আলেমগণ সকল মানুষকে পাপপঙ্খিলতা পুর্ণ অসংখ্য বাঁকাপথ পরিহার করে সরল পথের দিকে ফিরে আসতে আহবান করেন। তাদের সংস্পর্শে এসে অন্ধকার জগতের মানুষ আলোকিত জীবনের সন্ধান পায়। হাসান বসরি (র.) বলেন, ‘আলেমরা না থাকলে মানুষ গবাদিপশুর তুল্য হয়ে যেত।’ আলেম তারাই যারা দ্বীনের আলো বহন করেন। কথা বলেন কুরআন-সুন্নাহর আলোকে। রক্ষা করতে প্রাণপণ চে’া করেন ইসলামের পবিত্রতা। দূরে রাখেন তার থেকে সব কদর্যতা। লক্ষ্য রাখেন আপামর সকল জনগণের দিকে। সহজভাবে শিক্ষা দেন মুর্খজাতিকে। আল্লাহ তা’য়ালাকে বান্দা যেনো ভুলে না যান সে ব্যাপারে আলেমরাই চে’া করেন। ফাসাদ-বরবাদ, বিশৃঙ্খলতা, উশৃঙ্খলতা চিহ্নিত করে দূরীভূত করেন নিকোষকালো অন্ধকার। এক বর্ণনায় এসেছে, ‘জমিনে আলেমদের অবস্থান আসমানের নক্ষত্রতুল্য। যখন মানুষ তা দেখে, পথ চলে। যখন তা অদৃশ্য হয়ে যায়, অস্থির হয়ে পড়ে।’ (বায়হাকি ঃ ১/৩৫৪)।
আলেমদের কাছে দ্বীন ইসলাম সকল কিছুর উর্ধে। দ্বীনের অতন্দ্র প্রহরী তাঁরা। ইসলাম তথা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী সব ধরনের ষড়ষন্ত্রের মোকাবিলায় তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। আল্লাহর দ্বীন কায়েমের কাজে নিজের জানের পরোয়া করেন না তাঁরা। সকল বাঁধা উপেক্ষা করে বাতিলের সামনে হক কথা বলেন আলেমরা। হক্ব প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের জান-মাল কুরবান করাটা মহান গৌরবের মনে করেন। বাতিলের মুখোশ উন্মোচন এবং দ্বীনের শত্রুদের দমন করতে কালক্ষেপণ করেন না। তাঁরা দুনিয়ার কাউকে ভয় করেন না। একমাত্র আল্লাহকে ভয় করেন তাঁরা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল আলেমগণই আল্লাহকে ভয় করে।’ (সুরা ফাতির, আয়াত-২৮)।
আমাদের সমাজে অনেকেই বুঝে, না বুঝে বা ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় আলেমদের সমালোচনা করে থাকেন। আবার অনেকেই দুনিয়াবি কোনো স্বার্থে আলেমদের বিরোধিতা বা গালিগালাজ করে থাকেন। সাবধান! কোনো অবস্থাতেই এমনটি করা যাবে না। ভুলক্রমে যাদের দ্বারা এমনটি হয়ে গেছে তাদের এখনই উচিত তওবা করা। আলেমগণ পৃথিবীতে এতোই মর্যাদাবান এবং গুরুত্বপূর্ণ যে, তাঁদের জন্য আসমান-জমিনের সবকিছুই দোয়া করতে থাকে। আল্লাহর হাবীব(সাঃ)বলেন, যে ব্যক্তি ইলমের অন্বেষণে পথ ধরে অগ্রসর হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথকে সহজ করে দেন। আর ইলম অন্বেষণকারী যা (কিছু ক’-ক্লেশ ও শ্রম বরদাস্ত) করে, তাতে ফেরেশতাকুল খুশি হয়ে তার জন্য অবশ্যই তাদের পালকগুলোকে বিছিয়ে দেয়। নিশ্চই আলেমের জন্য আসমানসমূহে যারা আছে এবং জামিনে যারা আছে, এমনকী পানির মাছ পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। আর বে-আলেমের ওপরে আলেমের ফজিলত হলো, যেমন তারকারাজির ওপরে চাঁদের ফজিলত। নিশ্চই আলেমরা হলো নবীগণের উত্তরাধিকারী। আর অবশ্যই নবীগণ দিনার ও দিরহামের উত্তরাধিকারী বানিয়ে যান না; বরং তাঁরা উত্তরাধিকারী বানান কেবলমাত্র ইলমের। কাজেই যে ব্যক্তি তা আঁকড়ে ধরলো, সে বিরাট ভাগ্যের জিনিস আঁকড়ে ধরলো।’ (সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং-২৬৮২)
কিয়ামতের ময়দানেও ভয়াবহ দৃশ্যের সময় আল্লাহ পাকের ভালোবাসার চাদরে আলেমগণ জড়িয়ে থাকবেন। যার প্রমাণ হলো ঐ সময় আল্লাহ হবেন কাহহার তিনি কারো কথা শুনবেননা। কেও কথা বলতে সাহস পাবেনা। আল্লাহ পাক শুধু কথা শুনবেন তাদের যাদের প্রতি তিনি রাজি। এমনকি তিনি বিপদের মুহুর্তে সুপারিশ করার জন্য তাদের কেই অনুমতি দিবেন। আল্লাহ পাক বলেন, ’সেদিন কারো সুপারিশ কার্যকর হবেনা । তবে যদি করুনাময় কাওকে অনুমতি দেন এবং তার কথা শুনতে পছন্দ করেন কিংবা রাজি থাকেন।’(সুরা ত্ব-হা আয়াত-১০৯)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা কার প্রতি খুশি কার কথা শুনতে পছন্দ করেন সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন কালামে পাকে, ’ যার সুপারিশ শুনতে আল্লাহ সম্মত তাদের পক্ষে ছাড়া আর কারো সুপারিশ গ্রহন করেননা, তারা তাঁর ভয়ে ভীত।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত-২৮)। আর আগেও তো সুরা ফাতিরের ২৮ নং আয়াত থেকে জানা গেছে, আল্লাহ কে তো আলেমরাই বেশি ভয় করেন। কথা তো সকলেই বলেন, কিন্ত কার কথা উত্তম সেটা কী আমরা ভেবে দেখেছি? মহাগ্রন্থ আল কুরআন আমাদের কে জানিয়ে দিয়েছেন, ’সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হবে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, সৎকাজ করলো এবং ঘোষনা করলো আমি মুসলমান।’(সুরা ফুসসিলাত, আয়াত-৩৩) আল্লাহর পথে তো আলেমগণই মানুষ কে আহবান জানান সুতরাং আলেমদের কথাই সবথেকে উত্তম। কুরআন ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী স্প’ হলো যে, নবীগণের পরেই আলেমদের স্থান। সাধারণ মানুষের তুলনায় আলেমদের মর্যাদা অনেক ওপরে। সুতরাং আমরা যারা আলেম হতে পারিনি, আমাদের ঈমানী দায়িত্ব হলো আলেমদের যথাযথ সম্মান করা। তাঁদেরকে অন্তর থেকে মুহাব্বত করা। নবী কারীম(সাঃ) বলেছেন, (সম্ভব হলে) তুমি আলেম হও কিংবা ইলম অর্জনকারী হও। অথবা (ইলম) শ্রবণকারী হও কিংবা (আলেম ও ইলম অন্বেষণকারীর প্রতি) মুহাব্বাতকারী হও। তবে পঞ্চম কেউ হয়ো না তাহলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।’ (মুসনাদে বাযযার, হাদিস নং-৩৬২৬, ত্বাহাবী শরিফ, হাদিস নং-৬১১৬)। আল্লাহর ক্রোধে নিপতিত হওয়া থেকে নিজেদের কে হেফাজত করি। আলেমদের প্রাপ্য মর্যাদা দান করি। জাতির প্রজ্জলিত বাতি আলেমগণ যেনো কোন ভাবেই ক’ না পায় সেব্যাপারে সতর্ক থাকি। আরবীতে অতি পরিচিত প্রবাদ আছে, ’মাওতুল আলিম মউতুল আলম’- একজন আলেমের মৃত্যু মানে একটি পৃথিবীর মৃত্যু। আলেমরা হলেন সমাজের আলোকবার্তিকা। জাতির বাতি বলতে আলেম সমাজকেই বুঝায়। আলেম না থাকলে জাতি জাহালিয়াতের নিকষকালো অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে । আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে হেফাজত করুন। আমীন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আলেমরা জাতির বাতিস্বরূপ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ