Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশে দাঁড়াতে হবে

প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৬, ৯:৪০ পিএম | আপডেট : ১২:৩১ এএম, ২০ নভেম্বর, ২০১৬

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর দেশটির সেনাবাহিনী ও উগ্রবাদীদের নিপীড়ন, নির্যাতন, খুন, নারী-শিশু ধর্ষণ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির সেনাবাহিনী ঘোষণা দিয়ে হেলিকপ্টার ও অ্যাম্বুসের মাধ্যমে গুলি করে নিরীহ রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে। ইতোমধ্যে ৭০ জনের মতো রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। প্রকৃত অর্থে সেখানে নির্বিচারে গণহত্যা চলছে। খবর সংগ্রহের জন্য সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে রোহিঙ্গা গণহত্যা যে ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। জাতিসংঘ বলেছে, ইতোমধ্যে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য টেকনাফ সীমান্তে অবস্থান করছে। গত শুক্রবার বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ৮২ রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষকে পুশব্যাক করেছে বলে জানা যায়। জাতিসংঘের হাইকমিশনার ফর রিফিউজিস (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করেছে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের বর্ডার খোলা রাখতে, যাতে রোহিঙ্গারা নিরাপদ আশ্রয় লাভ করে। তারা মিয়ানমার সরকারের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে, রোহিঙ্গা এলাকায় মানবাধিকার কর্মীদের প্রবেশ করতে দিয়ে রোহিঙ্গাদের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করার জন্য। রাখাইনে গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশের ইসলামী সংগঠনগুলোও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। তারা বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার সরকারের নির্বিচার হামলা ও নিষ্ঠুরতা সভ্যতাকে হার মানিয়েছে। নিজ দেশের একটি জাতি গোষ্ঠীকে এভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার প্রক্রিয়া বিশ্বে বিরল। রোহিঙ্গারা দেশের নাগরিক নয় বলে সরকার সুদীর্ঘকাল ধরেই তাদের উপর হামলা, নির্যাতন ও বিতাড়ন করে আসছে। প্রাণ হারানোর ভয়ে ইতোমধ্যে লাখ লাখ রোহিঙ্গা স্থল ও সমুদ্রপথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশেই রয়েছে প্রায় পাঁচ লাখের উপর। এদের আশ্রয় এবং ভরণ-পোষণের অনেকাংশ বাংলাদেশ সরকারকে করতে হচ্ছে। অথচ ইতিহাস বলে, রোহিঙ্গারা আদিকাল থেকেই মিয়ানমারের রাখাইনে বসবাস করে আসছে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও উগ্রবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষুরা রোহিঙ্গাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সবকিছু উপেক্ষা এবং তাদের সকল প্রকার অধিকার অস্বীকার করে হত্যা ও বিতাড়নের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। অং সান সূচির নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার পর আশা করা গিয়েছিল, রোহিঙ্গাদের ন্যায্য ও নাগরিক অধিকার সুসংহত হবে। দুঃখের বিষয়, তার সময়ে এসে রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন আরও অধিকমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সেনাবাহিনী ও অস্ত্রধারী উগ্রবাদীরা রীতিমতো গণহত্যা চালাচ্ছে। জাতিসংঘসহ বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রগুলো রোহিঙ্গাদের রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপের পরিবর্তে কেবল লিপ সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। আরব লীগ, ওআইসি’র মতো সংস্থাগুলো নীরব ভূমিকা পালন করছে। তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষার্থে টুঁ শব্দ পর্যন্ত করছে না। তাদের এই নীরবতায় মিয়ানমার সরকার আস্কারা পেয়ে রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ ও উচ্ছেদ কার্যক্রম অবলীলায় চালিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবী থেকে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার এমন প্রক্রিয়া নজির বিহীন। রোহিঙ্গারা এখন না পারছে ঘরে থাকতে না পারছে বাইরে যেতে। পৃথিবীতে তাদের মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁই নেই। ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরের জনগণ নিপীড়ন-নির্যাতন এবং হত্যার শিকার হলেও, তারা নিজভূমে থেকে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তাদের অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই রয়েছে। এর বিপরীতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য এ পৃথিবীতে কোনো ভূখ- নেই। তারা ভূখ-হীন মানুষ। কেউই তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। উল্টো প্রাণ ভয়ে পালিয়ে কোথাও আশ্রয় নিলে তাদের জঞ্জাল মনে করা হচ্ছে। মানবতার এমন চরম বিপর্যয় দেখেও বিশ্বের নিয়ন্ত্রক দেশগুলোর কোনো প্রতিক্রিয়া হচ্ছে না। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এবং গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করা অং সান সূচি নিজ দেশের একটি জাতি-গোষ্ঠীর উপর এমন দলন-দমন ও নির্যাতন চালিয়ে মানবিক বিপর্যয় ও অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। এখানে তার মানবতা রুদ্ধ হয়ে আছে।
নিজ আবাসস্থলে বসবাস করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে। পৃথিবী থেকে তাদের উচ্ছেদ ও নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার অধিকার কারো নেই। রোহিঙ্গারা একটি জাতি এবং মিয়ানমার তাদের দেশ। শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ায় তাদের সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, সারা বিশ্বে মুসলমানরা মার খেলেও বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর কোনোটিই কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে না। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিই এমন বিশ্ব থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করতে পারলেই যেন বাঁচে। একই দৃষ্টিভঙ্গি মিয়ানমার সরকার পোষণ করে চলেছে। রোহিঙ্গারা দেশের নাগরিক হলেও শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ার কারণে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ভয়াবহ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে চলেছে। অথচ মানবতা ও মানবিক গুণাবলী কখনো জাত-পাত ও ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটা সবার জন্যই প্রযোজ্য। আমরা দেখছি, বিশ্বে প্রভাবশালী দেশগুলো কেবল তাদের সুবিধানুযায়ী মানবতার কথা বলে বেড়াচ্ছে। ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিনসহ যেখানেই মুসলমানরা মার খাচ্ছে, সেখানে তাদের এ মানবতার কোনো বালাই দেখা যায় না। মিয়ানমারে যে মুসলমান নিধন চলছে এবং মানবতা ভূলুন্ঠিত হচ্ছে, এ ব্যাপারে তাদের কোনো উচ্চবাচ্য নেই। আমরা মনে করি, মানবতার ক্ষেত্রে সকল মানুষের প্রতি একই আচরণ করা উচিত। রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে এ ব্যাপারে সকলের সোচ্চার হওয়া একান্ত প্রয়োজন। এই হত্যা, নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমারের উপর  জাতিসংঘসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে অবিলম্বে কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। আরব লীগ এবং ওআইসিকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের পক্ষে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নিজ ভূমিতে শান্তিতে বসবাসের সুযোগ করে দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।







 

Show all comments
  • Sujon Islam ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৪৩ এএম says : 0
    শুধু জরুরি না এখনেই দারিয়ে যান
    Total Reply(0) Reply
  • ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:২৯ পিএম says : 0
    Amader sarkarer ocid rohinga moslim dar sahjjo kara
    Total Reply(0) Reply
  • সূমন আহমেদ ২১ নভেম্বর, ২০১৬, ৩:৪০ পিএম says : 0
    মায়ানমারে রোহিগ্ঙারা আজ বিপদে তবে আমার মনে হয় ওদের প্রতিবেশি হিসেব আমাদের দেশ অনেক কাছে। বর্ডার খুলে দেওয়ায় অনেক ভালো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন