Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন

| প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৬, ৯:৩৯ পিএম

দেশের নানাবিধ সমস্যার মধ্যে মাদকের আগ্রাসন অন্যতম এবং এর ভয়াবহতা মারাত্মক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। মাদকের ছোবলে যুব সমাজ ধ্বংসের প্রান্তসীমায় এসে পৌঁছেছে। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত গ্রামÑ সর্বত্র মাদকের ছড়াছড়ি। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন মাদকসামগ্রী। শুধু যুবক-তরুণ নয়, শিশু-কিশোর, তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, ছাত্র-ছাত্রী, অছাত্র-অছাত্রী কেউই মাদক আগ্রাসনের বাইরে নেই। এমন কি বিভিন্ন পেশাজীবী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকদের মধ্যে পর্যন্ত মাদকাসক্তির বিস্তার ঘটেছে। মাদকাসক্ত সন্তান পিতা-মাতাকে, পিতা পুত্র-কন্যাকে, ভাই ভাইকে, ছাত্র শিক্ষককে, বন্ধু বন্ধুকে অবলীলায় খুন করছে। মাদকের অর্থ যোগাতে মাদকাসক্তরা অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রাহাজানিসহ এহেন কোনো অপরাধ নেই যা করছে না। ইভটিজিং থেকে ধর্ষণের সঙ্গেও মাদকাসক্তদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে। মাদকাসক্তির কারণে কত পরিবার যে ধ্বংস হয়েছে, কত পরিবারে যে অশান্তি দেখা দিয়েছে, ঘর ভাঙার কত ঘটনা যে ঘটেছে তার ইয়ত্তা নেই। একজন মানবাধিকার নেত্রী বলেছেন, মাদক এখন ভয়াবহ ও বিপর্যয়কর রূপ নিয়েছে। দেশের বেশীরভাগ অপরাধমূলক ঘটনার সাথেই মাদক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বিশেষ করে ইয়াবা আসক্তি এখন তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি জানিয়েছেন, নিয়ন্ত্রণহীন মাদকের হিংস্র থাবা দেশজুড়ে বিস্তার লাভ করেছে। ভয়াল মাদক তারুণ্য, মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষত্ব সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ-ভালবাসা এবং পারিবারিক বন্ধন পর্যন্ত।
বলা বাহুল্য, তাই যদি না হবে তবে মাদকাসক্তদের দ্বারা এত খুন-খারাবি, অন্যায়-অপকর্ম-অপরাধ সংঘটিত হয় কি করে? এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে নেশাখোর ছেলের হাতে  ৩৮৭ জন পিতা-মাতা খুন হয়েছে। একই সময়ে স্বামীর হাতে খুন হয়েছে ২৫৬ জন নারী। মাদক সেবন নিয়ে বিরোধ-বিতর্কের সুবাদে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে ৫ হাজার ৭৮০টি। একই কারণে প্রেমিক-প্রেমিকার হাতে খুন হয়েছে ৬৭০ জন তরুণ-তরুণী। এটা শুধুমাত্র খুনের খ-িত চিত্র। অন্যান্য অপরাধের চিত্রও কম ভয়ংকর নয়। মাদক সব ধরনের অপরাধেরই অনিবার্য অনুঘটক। প্রশ্ন হলো, পরিবার, সমাজ, নব প্রজন্ম কি এভাবেই ধ্বংস হয়ে যাবে? অপরাধ সংঘটনে মাদকের ভূমিকার রশি কি কোনোভাবেই টেনে ধরা সম্ভব হবে না ? এ দু’প্রশ্নের উত্তর নেতিবাচক হলে দেশ ও জাতির ভবিষ্যত কি হবে? ভবিষ্যত যে সম্পূর্ণ বিপন্ন হয়ে পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সঙ্গতকারণেই এ প্রশ্ন উঠবে, মাদক প্রতিরোধে আমাদের উপযুক্ত উদ্যোগ-পদক্ষেপ কই ? কোথায় আমাদের সচেতনতা? মাদক প্রতিরোধে গৃহীত কার্যব্যবস্থা যদি যথেষ্ট হতো, আমরা যদি যথার্থই সচেতন হতাম, তাহলে মাদক আগ্রাসন কোনোভাবেই এতটা সর্ববিস্তারী, সর্বগ্রাসী হয়ে উঠতে পারতো না।
জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থেই মাদক নির্মূল ও প্রতিরোধ এবং মাদকাসক্ত ও মাদককারবারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। আমাদের সকলেরই জানা মাদকের প্রধান উৎস সীমান্তের বাইরে। সীমান্ত পথে বানের পানির মতো মাদকসামগ্রী দেশে প্রবেশ করছে। দেশেও কিছু কিছু মাদক তৈরি হচ্ছে। এসব মাদক একটি গোপন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে শহর-গঞ্জ-গ্রামে। মাদকের আগ্রাসন ও ছোবল থেকে যদি আমরা সুরক্ষা পেতে চাই, তাহলে সর্বাগ্রে মাদকের অনুপ্রবেশ রহিত করতে হবে। সীমান্ত পথে মাদক আসা ডেড স্টপ করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে মাদক চলাচল, বিপণন-বিক্রী বন্ধ করতে হবে। মাদকের গডফাদার থেকে এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত সকলকে পাকড়াও করে আইন-আদালতে সোপর্দ করতে হবে যাতে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সংযুক্ত তারা আসলে জাতিঘাতক। তাদের কোনো অজুহাতেই রেহাই দেয়া যাবে না। এর পাশাপাশি মাদকাসক্তদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে মাদকের চিন্তা তাদের মাথা থেকে ছুটে যায়। মাদকাসক্তদের উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময়ের ব্যবস্থাদিও বাড়াতে হবে। সরকার বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে যথা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাদক সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। গড়ে তুলতে হবে শক্ত সামাজিক প্রতিরোধ। আমরা কোনো অবস্থাতেই আমাদের নবপ্রজন্ম, পারিবারিক-সামাজিক ব্যবস্থা এবং দেশের ভবিষ্যতকে অনিরাপদ করে রেখে যেতে পারি না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন