পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যৌথ কমিশনের বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন-অগ্রগতি পর্যালোচনা হয়েছে। তাতে বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। ২০ মে জারি করা ইইউ কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উভয় পক্ষের মধ্যে অত্যন্ত প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনায় গণতন্ত্র, আইনের শাসন তথা সুশাসন নিশ্চিত করার বিষয়ে কথা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ এবং ইইউ উভয়েই সংখ্যালঘুদের অধিকারের অগ্রগতি, নারী ও শিশু অধিকার এবং বহুপাক্ষিক ফোরামে মানবাধিকার প্রশ্নে নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তারিত তুলে ধরে। বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানানোর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে ইইউ। একটি সক্রিয় নাগরিক সমাজ গণতন্ত্রের জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা সবিস্তারে বৈঠকে তুলে ধরে ইউরোপের ২৭ রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী ওই কমিশন।
বৈঠকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করা হয়। বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি তথা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার তাগিদ দেয় ইইউ। নাগরিকদের অনলাইন এবং অফলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিশেষত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) নিবর্তনমূলক ধারাগুলোর এখনো বিলুপ্তি বা সংশোধন না হওয়ার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।
যে কোনো ডিজিটাল অপরাধের লাগাম টানার ক্ষেত্রেও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতা থাকার বিষয়টি স্মরণ করে বলা হয়, চূড়ান্ত পদক্ষেপও মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখা তথা সঙ্গতিপূর্ণ আচরণ জরুরি।
ইইউ মনে করে জাতি, বয়স, লিঙ্গ পরিচয়, যৌন অভিমুখিতা, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক সম্বন্ধ, অক্ষমতা বা আর্থ-সামাজিক পটভূমি নির্বিশেষে মানুষ হিসেবে মানুষের মানবাধিকারের সুরক্ষা, স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ক্রমাগত উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী বছর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বৈশ্বিক রিভিউ হওয়ার কথা জানিয়ে (২০২৩ সালের আগেই ইউপিআর রিপোর্ট দাখিল হবে) বলা হয়, আন্তর্জাতিক সেই আয়োজনের প্রেক্ষিতে সর্বজনীন মানবাধিকার পরিস্থিতির অগ্রগতি দৃশ্যমান করার যে কোনো পদক্ষেপে সরকারকে বর্ধিত সহযোগিতায় প্রস্তুত রয়েছে ইইউ।
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা খোলাসা করেই বলেন- দেশের সংবিধানই সার্বজনীন মানবাধিকারের রক্ষাকবচ, আর সরকার এটির সুরক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। সন্ত্রাস এবং সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কথা রয়েছে জানিয়ে বৈঠকে ঢাকার প্রতিনিধিরা বলেন, এ নীতির কারণে জননিরাপত্তায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ দশকের দীর্ঘ অংশীদারিত্বের মূল্যায়ন এবং বস্তুনিষ্ঠ ও গঠনমূলক পর্যবেক্ষণের প্রশংসা করা হয় বৈঠকে। যৌথ কমিশনের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন আর ইইউ টিমের নেতৃত্বে ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মিজ পাওলা প্যাম্পোলোনি।
উল্লেখ্য, ১৮ এবং ১৯ মে দুই দিনে ৩ সাবগ্রুপে অনুষ্ঠিত যৌথ কমিশনের ১০ম বৈঠকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ছাড়াও রোহিঙ্গা সঙ্কট, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা, অভিবাসন, আবহাওয়া পরিবর্তন, শিক্ষা, উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়ে কথা হয়। তাতে ইবিএ বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যের সর্বোচ্চ সুফলভোগী হিসেবে বাংলাদেশের অব্যাহত সাফল্যের প্রশংসা করা হয়। আলোচনায় বলা হয়, ইবিএ অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার সুরক্ষার মতো শর্ত যুক্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সনদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ সরকারের জন্য শ্রমমানের সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ।
তবে শ্রম খাতের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ এবং এর প্রকাশকে স্বাগত জানায় ইইউ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি নিয়মিতভাবে এর পর্যালোচনা এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার সংশ্লিষ্ট শ্রম আইন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর তাগিদ দেয় তারা। বাংলাদেশ এ সময় তৈরি পোশাকশিল্পগুলোকে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব করতে গিয়ে যে বিনিয়োগ হয়েছে, সে প্রসঙ্গটি সামনে এনে পণ্যের ন্যায়সঙ্গত মূল্য নিশ্চিতের দাবি জানায়। সেই আলোচনার প্রেক্ষাপটে আগামী মাসে ঢাকায় প্রথম ইইউ-বাংলাদেশ রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠানের দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে যৌথ কমিশনের বৈঠকের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।