পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। হক্কানি আলেম উলামাদের ওয়াজ নসিহতের মধ্যেই সমাজের মানুষ শান্তি খুঁজে পায়। একটি স্বার্থান্বেষী ক্ষুদ্র মহল সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। স্থিতিশীল পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে কথিত গণকমিশন অসত্য, মিথ্যা বানোয়াট শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। কথিত গণকমিশনের শ্বেতপত্র নিতান্তই অনধিকারচর্চা। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর মসজিদগুলোতে জুমার নামাজে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
ঢাকার মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম । ইসলাম মানুষকে সভ্য ভদ্র ও আদর্শের শিক্ষা দেয়। আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদর্শের মূর্তপ্রতিক। তাইতো আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। স্বাভাবিকই তারা শান্তির ধারক-বাহক নবী রাসূল, আলেম উলামা, কোরআন সুন্নাহ ও মসজিদ মাদরাসাভক্ত। কারণ মসজিদ মাদরাসায় আলেমগণ সর্বশ্রেণি পেশার মানুষদেরকে আদর্শ ও শান্তির বাণী শেখান। বারবার প্রমাণিত হয়েছে মসজিদ মাদরাসায় উশৃঙ্খলতা হঠকারিতা সন্ত্রাসী রাহাজানি, মারামারি শিক্ষা দেয়া হয় না। আলেমদের ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে বেনামাজী নামাজী হয়, পথহারা বিপথগামী মানুষ সঠিক পথের দিশা পায়। সন্ত্রাসীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। এ সব আলেম উলামাদের ওয়াজ নসিহতের মধ্যেই সমাজের মানুষ শান্তি খুঁজে পায়।
খতিব বলেন, ইসলামের এই শান্তি-শৃঙ্খলা ও সমাজের স্থিতিশীলতার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি স্বার্থান্বেষী অকল্যাণকামী ক্ষুদ্র মহল দেশের মান-মর্যাদা, শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। স্থিতিশীল পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে দেশের সনামধন্য উলামায়ে কেরাম মাদরাসা মসজিদ, ওয়াজ নসিহত নিয়ে তথাকথিত অসত্য, মিথ্যা বানোয়াট শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। যা নিতান্তই অনধিকার চর্চা। ইসলামে এ ধরনের অনধিকার চর্চা সম্পূর্ণ হারাম ও চরম অপরাধ। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিরোধী। ঢাকার লালমাটিয়াস্থ মসজিদে বায়তুল হারামের খতিব মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, ওয়ারাসাতুল আম্বীয়াদের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করে তারা আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) দুশমন। কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন যে, তোমরা আল্লাহর ও আল্লাহর রাসূলের এবং উলিল আমর তথা ওয়ারাসাতুল আম্বীয়াদের আনুগত্য করো। রাসূল (সা.) বলেছেন, যারা আল্লাহর বন্ধুদের সাথে দুশমনি করে তারা প্রকারন্তরে আল্লাহর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এছাড়াও ইরশাদ হয়েছে আল্লাহ তায়ালাকে আলেমগণই অধিক ভয় করেন। রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, একজন আলেমের মৃত্যুতে একটি জগতের মৃত্যু হয়ে যায়। অর্থাৎ একটি জগতের ক্ষতি হয়ে যায়। এছাড়া আলেম সমাজ ও দ্বীনী ইলমের প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ মাদরাসা যদি না থাকে তাহলে আল্লাহর দ্বীনের আলোও নিবে যাবে। আল্লাহ বলেন, ইসলামের দুশমনরা মুখের ফুৎকার দিয়ে আল্লাহর দ্বীনের বাতি নিভিয়ে দিতে চায় কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সেটাকে আরো শক্তিশালী করে পূর্ণ করে দেন। যদিও তাতে বাতিলদের গাত্রদাহ হয়। এজন্যই আল্লাহ দ্বীনের দুশমনদের কটাক্ষ করে বলেছেন ‘তোমরা (আল্লাহর দুশমনরা) তোমাদের গাত্রদাহ নিয়েই মৃত্যুবরণ করো। এছাড়া তাদের অন্য কোনো উপায় নেই। সুতরাং ইসলাম, আলেম সমাজ ও মাদরাসার বিরোধিতাকারীরাই ইহকাল ও পরকালে ধ্বঃস হবে। কিন্তু ইসলাম ও আলেম সমাজ এবং মাদরাসা টিকে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার ঐতিহাসিক ২০১ গম্বুজ মসজিদের অতিথি খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, বৃহত্তর সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে অসহায় মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। এমতাবস্থায় সমাজের বিত্তবান ও মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের দায়িত্ব হচ্ছে, বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানো। বন্যা উপদ্রুত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসি মানুষ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার অভাবে অর্ধাহারে-অনাহারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে দিন যাপন করছে। অসহায় বনী আদমকে খাদ্য বস্ত্র দিয়ে সাহায্যের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করলে আল্লাহ তায়াালা তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো তৃষ্ণার্ত মুসলমানকে পানি পান করালে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানীয় পান করাবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ)।
আল কোরআনের ‘সূরা কসাস’ এর ৭৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা মানুষের প্রতি তেমন অনুগ্রহ কর (সাদক্বাহ বা যে কোনো উপায়ে) যেমন আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন, আমীন।
গুলিস্তানস্থ ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব আল্লামা মুহিউদ্দীন রাব্বানী জুমার খুৎবায় বলেন, আলেম উলামাদের ওয়াজ নসিহত বা উপদেশ দ্বীনী দাওয়াতের অন্যতম একটি অংশ। এটি মানব সমাজের উন্নতি ও সংশোধনের অতুলনীয় পন্থা। ইসলামের শুরু থেকেই এর পবিত্র ধারা অদ্যাবধি চলে আসছে। কিয়ামত পর্যন্ত তা’অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
খতিব বলেন, মহান আল্লাহ হলেন, প্রথম ওয়ায়েজ বা ওয়াজকারী। প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ সকল নবী রাসূল ছিলেন ওয়ায়েজ। এই সূত্রে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উত্তরাধিকারীরা ওয়ায়েজিন। এই উম্মতের দাওয়াতি কাজ পরিচালনা করবেন ওয়ারেসাতুল আম্বিয়া তথা নবীদের উত্তরাধিকারী উলামায়ে কেরাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করো হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়।’ (সূরা নাহল : ১২৫)। আল্লাহ সকল দ্বীনের দাঈকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমীন।
ঢাকার কামরাঙ্গীরচর রহমতিয়া জামে মসজিদের খতিব মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন জুমার বয়ানে তিনি বলেছেন, আলেমগণ দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আল্লাহ তায়ালা আলেমদের শান ও মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন। সত্যিকারের আলেমদেরকে নবীদের উত্তরাধিকারী হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলেমদের মর্যাদা সম্পর্কে ইরশাদ করেন, ‘আলেমরা নবীদের উত্তরাধিকারী। নবীজী (সা.) আরো বলেন, ‘ওই ব্যক্তি আমার আদর্শের ওপর নেই, যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের আলেমদের প্রাপ্য মর্যাদা প্রদান করে না।’
তিনি আরো বলেন, যারা ভিত্তিহীন বানোয়াট শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং দুদকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমদের মানহানি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের উচিত দুনিয়া ও আখেরাতে ভয়াবহ পরিণতি হতে রক্ষা পেতে হলে অনতিবিলম্বে আলেমদের কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং আল্লাহর কাছে খালেছ তাওবা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত নসিব করুন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।