পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
এই মুহ‚র্তে গ্যাস কিংবা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি সরকারের জন্য চরম আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত হয়ে দেখা দিতে পারে। বরং বিকল্প উপায়ে বিদ্যমান দর বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন ক্যাব ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। ক্যাব বলেছে, গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে বরং ইউনিট প্রতি ১৬ পয়সা কমানো সম্ভব আমরা অংক করে দেখিয়ে দিয়েছি। অস্বাভাবিক সিস্টেম লসের নামে পুকুরচুরি কমানো গেলেও দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হয় না।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, সামগ্রিকভাবে ৮ শতাংশের উপর সিস্টেম লস দেখানো হচ্ছে, বিশ্বের কোথাও ২ শতাংশের উপর সিস্টেম লস নেই। দৈনিক কমবেশি ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের পাইপলাইনে দেওয়া হচ্ছে। এখান থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ২৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। অন্যদিকে স্পর্ট মার্কেট থেকে গড়ে মাত্র ৯৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে যে গ্যাস টুকুর দাম অনেক বেড়ে গেছে। আগে যে পরিমাণ গ্যাস ৫-৬ ডলারে পাওয়া যেতো এখন সেই গ্যাস কিনতে হচ্ছে ৩১ ডলার দিয়ে। চুরি যদি ৩ শতাংশ কমানো যায় তাহলেও স্পর্ট মার্কেট থেকে চড়া দামে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করতে হয় না। আর স্পর্ট মার্কেট থেকে আমদানি করতে না হলে দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গ আসে না।
সিস্টেম লস নিয়ে ক্যাবের আপত্তির সঙ্গে এক সুরেই গেয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। ২১ মার্চ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, গ্যাসের আদর্শ সিস্টেমলস ২ শতাংশের নিচে। বিশ্বের কোথাও এত বেশি সিস্টেমলস নেই। আমাদেরও যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে এভাবে চলতে পারে না। সবচেয়ে বেশি চুরি হচ্ছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে। সবচেয়ে বৃহৎ বিতরণ কোম্পানিটির নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকার ৩০ শতাংশের উপরে সিস্টেম লস ধরা পড়েছে। যদিও তারা কাগজে কলমে সামগ্রিক সিস্টেম লস ১২ শতাংশের মতো উল্লেখ করেছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল ইমাম বলেছেন, গ্যাস সেক্টর সোজা পথে না গিয়ে ভুলপথে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। যথাযথভাবে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালিত হলে আজকে এই সংকট তৈরি হতো না। সবচেয়ে ভালো হয় যদি অনুসন্ধান এবং পুরনো পরিত্যাক্ত ক‚পগুলো ওয়ার্কওভার করা যায়। সøামবার্জারের একটি সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে সামান্য কিছু কাজ ও কিছু ক‚পের ওয়ার্কওভার করে ৩ থেকে ৪শ’ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। সেদিকে যাওয়া উচিত।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ইস্যুতে পেট্রোবাংলা বারবার বলেছে তার ভর্তুকির প্রতিশ্রæত ৭ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা পায় নি। মার্চ ২০২২ পর্যন্ত মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকা পেয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলেও সাড়া মেলেনি। আর এই ৩ হাজার কোটি ভর্তুকি ধরেই আগামী বছরের অংক কষা হয়েছে। এতে বেজায় চটেছেন ক্যাব। তাদের বক্তব্য হচ্ছে এমন আপদকালীন সময়ে ভর্তুকি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। উল্টো অর্ধেকে নামিয়ে আনা হলো, কে এই সিদ্ধান্ত দিলো। সরকার কি বলেছে আর ভর্তুকি দেবে না। গণশুনানিতে ক্যাবের জেরার মুখে টিইসি (কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি) স্বীকার করেন, সরকার যেটুকু দিয়েছে সেটাই ধরে নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে আর দেবে কি, দেবে না সে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। অবশ্য গণশুনানি পরবর্তী বিইআরসি জ্বালানি বিভাগকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে সরকার ভর্তুকি কত দিবে। সেই চিঠির কোন জবাব এখন পর্যন্ত মেলেনি বলে জানিয়েছে বিইআরসি সূত্র।
করোনার ধাক্কায় অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, চাকরি হারিয়েছেন অনেকেই, অন্যদিকে বৈশ্বিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিসহ নানা কারণে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানা যাচ্ছে না। আজ ভোজ্যতেল তো পরশু পেঁয়াজ, তার পরদিন রসুন কিংবা আদা এভাবেই বাজারকে অস্থির করে রেখেছে ভোগ্যপণ্য। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস কিংবা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হলে তার প্রতিঘাত অনেক দূর পর্যন্ত গড়াবে। গ্যাসের দাম সামান্য পরিমাণে বাড়লেও মধ্যস্বত্বভোগীরা সেই সুযোগ নিতে পারেন। যা সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়তে পারে। আর সেটি হলে জনগণের ক্ষোভ গিয়ে পড়তে পারে সরকারের উপর। পেট্রোবাংলার দাবি, মিশ্রিত গ্যাসের পাইকারি ব্যয় (২০২২ সালে প্রতি ঘনমিটার) ১৫ দশমিক ৩০ টাকায় গিয়ে ঠেকবে। এ কারণে তারা ১১৭ শতাংশ দাম বৃদ্ধির আবেদন করে। তবে বিইআরসি কারিগরি মূল্যায়ণ কমিটি ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির পক্ষে মতামত দেয় গণশুনানিতে।
সবশেষ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশে (২০১৯ সালে) পাইকারি দর প্রতি ঘনমিটার ১২ দশমিক ৬০ টাকা করা হয়। ভর্তুকি দিয়ে ৯ দশমিক ৭০ টাকায় বিক্রির নির্দেশ দেয় বিইআরসি। মার্চে টানা ৪ দিনব্যাপী গ্যাসের দামবৃদ্ধির উপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেই রিপোর্ট চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে, যে কোন দিন ঘোষণা আসতে পারে।
অন্যদিকে আজ বুধবার বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য বৃদ্ধির উপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। পাইকারি পরেই স্বাভাবিকভাবে খুচরা দামবৃদ্ধির প্রসঙ্গ সামনে চলে আসবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।