বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভের সহজ ও সুন্দরতম মাধ্যম হলো কোরআন মাজীদ। অধিক পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত করা, অন্যের তিলাওয়াত শোনা, আয়াতের অর্থ, ভাব ও মর্ম নিয়ে চিন্তা ফিকির করা- এসবই বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়তা করে। আল্লাহর পরিচয় লাভ ও তাঁর প্রতি আপনত্ব অনুভবে সাহায্য করে। কারণ, কোরআন আল্লাহর কালাম। তাঁর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি প্রেরিত বার্তা। যেখানে তিনি পরম মমতায় বান্দাকে সম্বোধন করেছেন। উপদেশ দিয়েছেন। কল্যাণের পথ নির্দেশ করেছেন।
মন্দ ও ক্ষতিকর বিষয়ে সতর্ক করেছেন। নবী ও রাসূলদের গল্প বলেছেন। সাহাবায়ে কেরামের ঘটনা উল্লেখ করেছেন। পূর্বের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর কর্ম-পরিণতি ও উত্থান-পতনের ইতিবৃত্ত জানিয়েছেন। সর্বোপরি ইহ-পরকালীন জীবনে সফলতা লাভের পথ ও পন্থা বলে দিয়েছেন। এসব এত সহজ ও সাবলীলভাবে পেশ করেছেন যে, সবাই বুঝতে পারে। এত চমৎকার শব্দ, বাক্য ও শৈলী ব্যবহার করেছেন যে, সবাই তার মাধুর্য অনুভব করতে পারে।
কোরআনের বহু জায়গায় আল্লাহ তাআলা নিজের পরিচয় দিয়েছেন। এরপর বলেছেন, হে বান্দা, ইনি ‘তোমার’ রব। অর্থাৎ এই মহামহিম অত্যুচ্চ গুণাবলির অধিকারী সত্তার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক বড় গভীর ও মজবুত। তিনি তোমার স্রষ্টা। তোমার প্রতিপালক। তোমার অতি আপন। এভাবে বান্দাকে তার আসল পরিচয়ের সূত্র ধরিয়ে দিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের রহস্য। এরপর নানাভাবে তাকে উৎসাহিত করেছেন কোরআন পড়তে। উদ্বুদ্ধ করেছেন কোরআনের বিভিন্ন আয়াত নিয়ে ভাবতে।
কোরআনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে। কোরআনকে বুকে ধারণ করে লাভবান হতে। যেমন সূরা শূরার এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন : এভাবেই আমি ওহীর মাধ্যমে আপনার প্রতি নাযিল করেছি এক ‘রূহ’ আমার নির্দেশে। এর আগে আপনি জানতেন না- কিতাব কী, ঈমান কী। কিন্তু আমি একে বানিয়েছি এক নূর, যার মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চাই হেদায়েত দান করি। (সূরা শূরা : ৫২)।
এখানে আল্লাহ তাআলা কোরআনকে মানব জাতির ‘রূহ’ বা প্রাণ বলেছেন। বুঝিয়েছেন, কোরআনহীন মানব জীবন প্রাণহীন মানুষের মতো, মৃত। এ প্রসঙ্গে নবী (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তির বুকে কোরআনের কোনো অংশ নেই, সে যেন বিরান ঘর। (জামে তিরমিযী : ২৯১৬)।
অর্থাৎ অপরিচ্ছন্ন, আবর্জনাময়, ভীতিকর মানব সে। আলো বাতাসহীন, বসতিহীন, কীট পতঙ্গের আবাস তার বুক। কিন্তু এই বুকে যখন কোরআন প্রবেশ করে, বুক আলোকিত হয়। জীবন উজ্জ্বল ও ঝলমলে হয়। সজীব সতেজ হয়। জীবন্ত ও প্রাণবন্ত হয়। আর বিরান মৃত জীবনের সঙ্গে তো প্রাণবন্ত জীবনের কোনো তুলনা হতে পারে না। একথাও আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজীদে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন : যে ব্যক্তি ছিল মৃত এরপর আমি তাকে জীবন দিয়েছি, তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করেছি, যার সাহায্যে সে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে, সে কি ওই ব্যক্তির মতো হতে পারে, যে অন্ধকারে পরিবেষ্টিত, যা থেকে সে বের হতে পারে না? (সূরা আনআম : ১২২)।
পৃথিবীতে আরো অনেক নবী-রাসূল এসেছেন। তাঁদের প্রতি আল্লাহ তাআলা অনেক কিতাবও নাযিল করেছেন। কিন্তু সেইসব কিতাব স্বরূপে সংরক্ষিত থাকেনি। নানা ব্যক্তি গোষ্ঠী ও ফেতনার কবলে পড়ে বিকৃত হয়েছে। মানুষের মনগড়া কথাবার্তা দিয়ে পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু কোরআনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো : কোনো মিথ্যা এর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। না এর সম্মুখ থেকে না পেছন থেকে। (সূরা হা মীম সাজদাহ : ৪২)।
মূলত আল্লাহ তাআলা নিজেই কোরআন হেফাযত ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। এর মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্কের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বলেছেন : তোমরা আল্লাহর রজ্জু (অর্থাৎ এই কোরআন) মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো। বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এই আয়াতের তাফসীরে বলেন : নিশ্চয় এই পথ বিপদসংকুল। তাতে দাঁড়িয়ে আছে শয়তান। ডাকছে, হে আল্লাহর বান্দা, এদিকে এসো। পথ এদিকে। মূলত ওরা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করতে চায়। সুতরাং তোমরা আল্লাহর রজ্জু মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো। নিশ্চয় আল্লাহর রজ্জু হলো তাঁর কিতাব। (তাফসীরে তাবারী : ৫/৬৪৫)।
অতএব এই কোরআন যারা আঁকড়ে ধরবে, ধারণ করবে, গ্রহণ করবে তারা দুনিয়া-আখেরাতে সফল হবে এবং সকল অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকবে। যারা এই কোরআন থেকে বিমুখ হবে, তাদের জন্য থাকবে মহা সঙ্কটময় জীবন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।