Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কর্তৃত্ববাদ ও পরিবারতন্ত্রের পরিণতি আজকের শ্রীলঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০২২, ৬:৫৩ পিএম

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জোগাড়ে দিশেহারা মানুষ। খাদ্যপণ্য, ওষুধ ও জ্বালানির অভাব দেশজুড়ে। অর্থনৈতিক এই বিপর্যয়ের কারণে বিক্ষোভে ফুঁসছে জনগণ। বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষ। তারপরও বিক্ষোভ-সহিংসতা থামেনি। কারফিউ দিয়ে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে দেশটির পুলিশ ও সেনাবাহিনী।

শ্রীলঙ্কায় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দেশটির প্রতিবাদী মানুষের বড় এক বিজয়। কিন্তু পাশাপাশি সেখানে কারফিউ জারি হয়েছে। কারফিউর অন্তত একটা মানে প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ে সেখানে মানুষ যথেষ্ট সন্তুষ্ট নয়। মানুষের চাওয়া আরও বড় কিছু, আরও বেশি কিছু। ক্ষমতা থেকে রাজাপক্ষের বংশের যে কারও বিদায় শ্রীলঙ্কায় বহুজনের জন্য আনন্দদায়ক অগ্রগতি। কিন্তু মাহিন্দা রাজাপক্ষে বাড়ি ফিরে গেলেও সঙ্কটের সামান্যই জট খুলবে।

দেশটির বর্তমান সঙ্কটের বড় এক উৎস নির্বাহী প্রধান ‘প্রেসিডেন্ট’। তার হাতে যাবতীয় ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন ঘটে আছে সাংবিধানিকভাবে। এর সংস্কার বিষয়ে এখনো কোনো জাতীয় ঐকমত্য হয়নি। প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করতে আগ্রহী ননযদিও তিনি কৌশলগতভাবে নমনীয় অবস্থান নিয়ে আছেন। তার পেছনে সামরিক আমলাতন্ত্রের মদদ আছে। সামরিক বাহিনীতে তার ব্যক্তিগত প্রভাবও আছে।

মাহিন্দা রাজাপক্ষের পদত্যাগের পর বিরোধী দলকে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। তবে তারা প্রেসিডেন্ট নিজেও পদত্যাগ না করলে সরকার গঠনে রাজি নয়। শ্রীলঙ্কা্‌ এ অবস্থার জন্য দায়ী মূলত কর্তৃত্ববাদ ও পরিবারতান্ত্রীক শাষন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, করোনা মহামারির সময় নির্বাহী ক্ষমতার মাধ্যমে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট। আর এসবের মাধ্যমে দেশটির বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছেন গোটাবায়া। দেশটিতে বৈদেশিক রিজার্ভ নেই, ডিজেল, বিদ্যুৎ আমদানির জন্য সরকারের কাছে অর্থ নেই। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সঙ্কটের কারণে জনগণকে দিনের অর্ধেকের বেশি সময় থাকতে হচ্ছে অন্ধকারে। রাস্তায় চলছে না বাস, গাড়ি।

মহামারি করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দেশটির অর্থনৈতিক সঙ্কটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তবে এই সঙ্কট এক দিনে তৈরি হয়নি। এর পেছনে রয়েছে একাধিক ভুল সিদ্ধান্ত। উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতি কাঁধে নিয়ে ২০১৯ সালে দায়িত্ব নেন প্রেডিডেন্ট গোটাবায়া। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্রুতই কাজে নেমে পড়েন তিনি। কিন্তু সন্ত্রাসী হামলা ও রাজনৈতিক সঙ্কট দেশটিকে মারাত্মক বির্পযয়ে ফেলে। রাজধানী কলম্বোতে গির্জা ও হোটেলে ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলায় ২৯০ জন নিহত হন। পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বৈদেশিক মুদ্রার মূল উৎসে ভাটা পড়ায় গোটাবায়া অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে দেওয়া প্রতিশূতি রাখতে পারেননি।

এছাড়া, করোনা মহামারির সময় তার সরকার বিভিন্ন খাতে কর ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি বাজারে নগদ অর্থ ছাড়তে শুরু করে। এতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। কমে যায় কর আদায়। বেড়ে যায় বাজেট ঘাটতি। নজিরবিহীন এই আর্থিক সঙ্কটের পেছনে বৈদেশিক ঋণ নেওয়াকেও দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে চীনের কাছ থেকে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ঋণ নিয়ে অবকাঠামো খাতে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকে বিপর্যয়ের মুল কারণ বলা হচ্ছে। এই প্রকল্প থেকে আয় হয়েছে সামান্য। বিপরীতে এই ঋণ গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া, শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি কর কমানের সিদ্ধান্ত এই সঙ্কটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সূত্র: বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স।

 


 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শ্রীলঙ্কা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ