Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে রায়হান হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহন হয়নি আজ : হাইকোর্টে আসামীপক্ষ

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০২২, ৩:১১ পিএম

সিলেট বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে হেফাজতে রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের নির্ধারিত তারিখ ছিল আজ ( মঙ্গলবার)। এজন্য কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয় আসামিদের। তবে মহানগর দায়রা জজ আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এই মামলায় অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাওয়ার কথা জানান। তারপরও সাক্ষ্যগ্রহণের সিদ্ধান্ত দেন আদালত। কিন্তু আজ কোর্ট রেফারেন্স থাকায় পরে আর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। কোর্ট রেফারেন্স হচ্ছে কোনো আইনজীবী মারা গেলে আদালতের কার্যক্রম সীমিত বা বন্ধ থাকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার খানিক আগে রায়হান হত্যা মামলার আসামি বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়াসহ অন্যদের কারাগার থেকে নিয়ে আসা হয় আদালতে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহানগর দায়রা জজ মো. আব্দুর রহিমের আদালতে শুরু হয় এ মামলার কার্যক্রম। কিছুক্ষণ পরে মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নওশাদ আহমেদ চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আজ তিনজন সাক্ষী হাজির ছিলেন আদালতে। তারা হলেন- রায়হানের মা সালমা বেগম, স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী ও রায়হানের চাচা শ্বশুর।
তিনি বলেন, ‘সাক্ষ্য নিতে গেলে দুটি বিষয় সামনে আসে। প্রথমত, আজ আসামিদের আসতে একটু দেরি হয়েছে এবং আমাদের একজন আইনজীবী ইন্তেকাল করায় আজ কোর্ট রেফারেন্স ছিল। ইন দ্য মিন টাইম আসামিদের আইনজীবীরা আদালতে একটি দরখাস্ত দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, গত দিন (১৮ এপ্রিল) এই মামলায় যে চার্জ গঠন হয়েছিল এর বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে রিভিশনে গিয়েছেন। কিন্তু ওইটার কার্যক্রম বন্ধ বা স্থগিত এই মর্মে কোনো কিছু আনেননি। শুধু উনারা একটা লইয়ার সার্টিফিকেট দাখিল করেছেন যে আমরা গিয়েছি। পরে আদালত বলেছেন, আমি সাক্ষ্য নেব এবং আপনাদের পিটিশনটাও দেখব। পরে দেখা গেল আজ আর কিছু সম্ভব হচ্ছে না কোর্ট রেফারেন্সের কারণে। পরে আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়।’ নওশাদ চৌধুরী বলেন, এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামীকাল বুধবার ও পরশু বৃহস্পতিবার ধার্য রয়েছে তারিখ। তিনি জানান, রায়হান হত্যা মামলায় হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন তৎসহ ৩০২ দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারা ও ২০১ ধারায় গঠন করা হয়েছে অভিযোগ। কিন্তু আসামিপক্ষ শুধুমাত্র হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলাটি চালাতে চান। এজন্য অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে গেছেন তারা।

বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জানিয়েছেন, রায়হান হত্যা মামলায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুর রহিমের আদালতে ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয় রায়হান হত্যা মামলার। এরও আগে ১২ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের তারিখ থাকলেও পিছিয়ে নেওয়া হয়েছিল সেটি। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর ভোরে সিলেট শহরের আখালিয়ার এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে মারা যান তিনি। পরদিন তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানায় দায়ের করেন একটি হত্যা মামলা। মামলাটির তদন্তে প্রথমে পুলিশ ছিল। পরে সে বছরের ১৩ অক্টোবর মামলাটি স্থানান্তর করা হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে। গত বছরের ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। দাখিল করা হয় ১ হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন। যে ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়, তাদের পাঁচজনই পুলিশ সদস্য। তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটুচন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদ। অভিযুক্ত অপরজন আব্দুল্লাহ আল নোমান, যার বাড়ি কোম্পানীগঞ্জে। তার বিরুদ্ধে ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ গায়েব করার অভিযোগ রয়েছে। এই ছয়জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্য কারাগারে থাকলেও নোমান পলাতক অবস্থায় পাড়ি দিয়েছেন ইউরোপে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর আদালতের বিচারক আবুল মোমেন রায়হান হত্যা মামলার চার্জশিট গ্রহণ করেন। বাদীপক্ষ চার্জশিটের বিপক্ষে নারাজি দেয়নি। আদালত পলাতক নোমানের বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারি করেন। এদিকে, পুলিশ হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তার শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। রায়হান হত্যা ঘটনার পর পালিয়ে যান এসআই আকবর। পরে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর দুপুরে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া গ্রেফতার করে পুলিশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রায়হান হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ