বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সিলেটে রায়হান হত্যা মামলার চার্জশীট প্রদানে ২য় দফা সময় বাড়িয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আদালত প্রদত্ত সময়সীমার মধ্যে চার্জশীট প্রদানে আশাবাদী সংস্থাটিও। স্পর্শকাতর এ মামলাটির তদন্ত নিয়ে, ব্যাপক আগ্রহ সর্বমহলে। রাজপথ কাঁপিয়ে, রায়হান হত্যার বিচার চেয়ে ঝড় উঠেছিল দেশ-বিদেশে। গ্রহনযোগ্য ও প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছিল গণমাধ্যমও। মানুষের প্রতিবাদ ও গণমাধ্যম কর্মীদের অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশে ব্যর্থ হয়ে যায় রায়হান হত্যা ধামাচাপার চেষ্টা। কিন্ত র্দীঘ ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও গ্রেফতার হয়নি হত্যা ঘটনার আলামত নষ্টকারী আব্দুল্লাহ আল নোমান। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় নোমান গ্রেফতার না হলেও শেষ পর্যায়ে চলে এসেছিল তদন্ত কার্যক্রম। তবে পলাতক নোমানের সহযোগী এস আই হাসান আলীকে গ্রেফতার পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রাপ্তিতে নতুন মোড় নেয় এ মামলার তদন্ত। এছাড়া প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে পালাতে সহায়তা করেছিলেন এসআই হাসান আলী। এ অবস্থায় নোমানের সহযোগী এসআই হাসান আলীকে গত ২৯ জানুয়ারি গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয় পিবিআই। জিজ্ঞাসাবাদে হাসান আলী জানায়, নগরীর গ্যালারিয়া শপিং সিটির একটি দোকান থেকে ১২শ’ টাকায় ৫শ’ গিগাবাইটের হার্ডডিস্ক কিনে নির্যাতন-হত্যার ভিডিও রেকর্ড হওয়া ফাঁড়ির হার্ডডিস্কটি বদলে ফেলেছিলেন নোমান। ঘটনার আগে-পরে ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৫৯ বার মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে হাসান ও নোমানের মধ্যে। এমনকি প্রথমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আকবর পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও গোপন করেছিলেন এসআই হাসান। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ও পিবিআই সিলেটের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন জানিয়েছিলেন, হাসানকে গ্রেফতারের পর একদিনের রিমান্ডে এনে করা হয় জিজ্ঞাসাবাদ। পরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে তাকে। এ অবস্থায় মধ্যে দিয়ে বহুল প্রত্যাশিত রায়হান হত্যা মামলার তদন্ত এগিয়ে যায় বহুদুর। তারপর তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই এ মামলা তদন্তের সময় বৃদ্ধির জন্য গত ১০ ফেব্রুয়ারি সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল মুমিনের আদালতে আবেদন করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি আবেদনের শুনানির পর ৩০ কার্যদিবস সময় বৃদ্ধিও করেন আদালত। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে চুড়ান্ত হয়নি অভিযোগপত্র। পুনরায় ২য় দফার সময় বৃদ্ধির গত ২৮ মার্চ আবেদন করেন তদন্ত সংস্থা পিবিআই। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবার ২য় দফায় ৩০ দিনের সময় বাড়িয়েছেন আদালত। পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদ উজ জামান বলেন, আদালত ২য় দফা সময় বাড়িয়েছেন, তদন্ত কার্যক্রম এগিয়েছে, অনেকটা প্রস্তত চার্জশীটও। তবে চার্জশীটে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ (বরখাস্ত) এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, বরখাস্ত হওয়া টুআইসি এসআই হাসান আলী সহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হচ্ছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। চার্জশিটে আর কাদের আসামি করা হচ্ছে এ ব্যাপারে এখনই মুখ খুলতে রাজি নয় পিবিআই।
সূত্র আরও জানায়, রায়হান হত্যাকান্ডের ঘটনার পর বন্দরবাজার ফাঁড়ির ৬ পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। অভিযুক্ত ৬জন এখন কারাগারে রয়েছেন। তারা হচ্ছেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া ও কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস। চার্জশিটে এই ৬ জনকে আসামি করা হবে কি-না তা স্পষ্ট করেননি পিবিআই সংশ্লিষ্টরা। রায়হান হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পরিবর্তন ও প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে পালাতে সহায়তাকারী কোম্পানীগঞ্জের আবদুল্লাহ আল নোমানকে আসামী করা হবে কি-না এ বিষয়টিও পরিষ্কার নয় এখনো।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে রহস্যজনক কারণে এ মামলায় ৬ মাসেও গ্রেফতার হয়নি বন্দরবাজার পুলিশের কর্মরত তৎকালীন এএসআই কুতুবউদ্দিন। অথচ হত্যা ঘটনার রাত ৩ টায় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির রাত্রিকালীন টহলরত পৃথক ২টি ডিউটি পার্টির ইনচার্জ ছিলেন এএসআই কুতুবউদ্দিন ও এএসআই আশেক এলাহি। এই ২টি টিম নগরীর কাষ্টঘরের সুলাইলালের ঘর থেকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে রায়হানকে। এএসআই কুতুব উদ্দিনের ভূমিকা বা সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি এখনো অন্ধকারে। মামলায় যেমন গ্রেফতার হননি কুতুব উদ্দিন, তেমনি এখনো নিরাপদ অবস্থানে রয়েছেন তিনি। সেকারনে চার্জশীটে অর্ন্তভূক্ত হচ্ছে না তার নাম, এমনটিই নিশ্চিত।
অন্যদিকে, আলোচিত কনেস্টবল তৌহিদ মিয়াকে রক্ষায়ও চেষ্টা চলছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। অথচ কনেস্টবল তৌহিদ মিয়ার ফোন থেকে ফোন করে ১০ হাজার টাকা আনতে বলা হয়েছিলো মর্মে তথ্যও প্রকাশ পেয়েছিল। খুবই কৌশলে কুতুব উদ্দিনকে যেমন আড়াল করা হয়েছে তেমনি কনেস্টবল তৌহিদকে গ্রেফতার দেখানো হলেও বাদ পড়তে পারে মামলার চার্জশীটে। পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা কনেস্টবল তৌহিদের আতœীয়, সেই জোরে তাকে শেষ রক্ষার ছক সাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। সেকারনে এএসআই কুতুবের ভাগ্যে কনেস্টবল তৌহিদও পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদ উজ জামান বলেন, তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে এখনো কিছু ডিসক্লোজ ( প্রকাশ )করা যাচ্ছে না। তবে তদন্তে যাদেরই সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে আসামী করা হবে তাদেরকে। চার্জশিট প্রন্তুত জানিয়ে পুলিশ সুপার খালেদ উজ জামান বলেন, অভিযোগপত্র জমা করা হবে আদালত প্রদত্ত ২য় দফা সময় সীমার মধ্যে। অথাৎ এ মাসের শেষে দিকেই আদালতে জমা হচ্ছে অভিযোগপত্র। তবে চার্জশিট দাখিলের আগে সংবাদ সম্মেলন ডেকে পুরো তদন্ত কার্যক্রম ও আসামিদের ব্যাপারে অবগত করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, নগরীর আখালিয়ার নেহারীপাড়ার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে গত বছরের ১১ অক্টোবর দিবাগত রাতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে যায় বন্দর বাজার পুলিশ সদস্যরা। এরপর ঘুষের টাকার দাবিতে রাতভর ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় তাকে। ভোর সাড়ে ৬টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয় তাকে। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যায় রায়হান। এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলা দায়ের করেন কোতোয়ালী মডেল থানায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।