মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পশ্চিমের বিপরীতে রাশিয়ান জনগণ কখনই দেশ, বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের প্রতি তাদের ভালবাসা ছেড়ে দেবে না। গতকাল সোমবার রাজধানী মস্কোর রেড স্কয়ারে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একথা বলেছেন।
‘আমরা কখনই দেশ, বিশ্বাস, ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ, পূর্বপুরুষের রীতিনীতি এবং সমস্ত মানুষ ও সংস্কৃতির প্রতি আমাদের ভালবাসা ছেড়ে দেব না। পশ্চিমাদের জন্য, তারা এই সহস্রাব্দ পুরনো মূল্যবোধগুলো বাতিল করতে বদ্ধপরিকর বলে মনে হচ্ছে’ তিনি উল্লেখ করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসি বাহিনীর পরাজয়ের ৭৭তম বার্ষিকীতে স্থানীয় সময় সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ সময় তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতোই এবারও জয় আমাদের হবে।
পুতিন বলেন, ‘আজ আমাদের সৈন্যরা তাদের পূর্বপুরুষদের মতো তাদের জন্মভূমিকে নাৎসিদের কলুষ থেকে মুক্ত করার জন্য লড়াই করছে। তাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে ১৯৪৫ সালের মতো বিজয় আমাদেরই হবে। নাৎসিবাদের পুনর্জন্ম রোধ করা আমাদের সাধারণ কর্তব্য যা বিভিন্ন দেশের জনগণকে এত কষ্ট দিয়েছে।’ পুতিন নাৎসিবিরোধী যুদ্ধে হতাহত বেসামরিক ব্যক্তিদের কথাও এ সময় স্মরণ করেন। পুতিন বলেন, ‘দুঃখের বিষয় আজ নাৎসিবাদ আরও একবার মাথা তুলছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যারা পরাজিত হয়েছিল তাদের আদর্শিক উত্তরসূরিদের আটকে রাখাই আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।’ ভাষণে ইউক্রেনের বাসিন্দাদের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ এবং ন্যায্য ভবিষ্যৎ কামনা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
গতকাল রাষ্ট্রীয় আচারের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাশিয়ার ৭৭তম বিজয় দিবসের সামরিক কুচকাওয়াজ। ঐতিহ্যবাহী সমরাস্ত্র টি-৩৪ মডেলের ট্যাংক প্রদর্শন করা হয় প্যারেডে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে এই ট্যাংক ব্যবহার করে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনা বহর। ছিল সেসময়ের পতাকাও। সামরিক প্যারেডে অত্যাধুনিক সব সমরাস্ত্র প্রদর্শন করা হয়। ছিল অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র, সামরিক যান, ড্রোন, ট্যাংক। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকায় বাতিল করা হয় বিমান বাহিনীর প্রদর্শনী।
অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় শুরুতেই দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে নিহত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনা সদস্যদের স্মরণ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। এরপরই তার বক্তব্য উঠে আসে ইউক্রেন প্রসঙ্গ। পুতিন বলেন, বলেন, রাশিয়ার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থেই ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালাতে বাধ্য হয়েছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, পশ্চিমারা ক্রিমিয়াসহ আমাদের দেশে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমরা বারবার নিরাপত্তার কথা জানিয়েছি, কিন্তু তারা শুনতে চায়নি। ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে যারা লড়াই করছে তারা তাদের মাতৃভূমির জন্য লড়াই করছে। আমাদের সেনারা যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের জন্য আমরা ব্যথিত।
পুতিনের বক্তব্যের পরপরই রুশ সেনারা জোরালো কণ্ঠে তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। নানা কারণেই এবারের বিজয় দিবস রুশবাসী তথা বিশ্ববাসীর কাছে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। গেল কয়েকদিন ধরেই পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, এবারের বিজয় দিবসের প্যারেডেই ইউক্রেনে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধের ঘোষণা দেবেন পুতিন। আসতে পারে ইউক্রেনের কোনো একটি অঞ্চলে বিজয় অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও। যদিও বক্তব্যে এমন কিছু বলতে শোনা যায়নি পুতিনকে।
চলতি বছর মোট ১১ হাজার সেনা ও সামরিক স্কুলের শিক্ষার্থী, ১৩১টি স্থল সামরিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম এবং ৭৭টি বিমানের সমন্বয়ে গঠিত বিমান দল রেড স্কয়ারে সমবেত হয়। রাশিয়া-জুড়ে মস্কো, সেন্ট পিটার্সবুর্গ, ইয়েকাতেরিনবার্গ, ভলগোগ্রাদ এবং ভøাদিভোস্তকসহ মোট ২৮টি শহরে বিজয় দিবসের সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।
আটকা পড়া যোদ্ধাদের পরিত্যাগ করেছে ইউক্রেন : ইউক্রেনীয় বাহিনী ধ্বংস হওয়া শহর মারিউপোলের একটি স্টিল প্ল্যান্টে শেষ অবস্থান নিয়েছে। তারা রোববার তাদের পরিত্যাগ করার জন্য কিয়েভ সরকারকে অভিযুক্ত করেছে। তারা আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের উদ্ধার না করা পর্যন্ত লড়াই করার অঙ্গীকার করেছে।
উপকূলীয় শহরের কাছে একটি স্টিল প্ল্যান্টে আটকা পড়া ইউক্রেনের আজভ রেজিমেন্টের দুই কমান্ডার বলেছেন, কয়েক সপ্তাহের ভারী রুশ বোমাবর্ষণের পরে হাজার হাজার বেসামরিক লোক মারা গেছে। রাশিয়া জানিয়েছে, তারা শুধুমাত্র সামরিক ঘাঁটিগুলিতে হামলা করছে। ইউক্রেন বারবারই তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাভাষণের অভিযোগ আনছে।
শনিবার মারিউপোলের আজভস্টল কারখানা থেকে সকল সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু সেই দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কারখানায় আটকে থাকা ইউক্রেনীয় বাহিনী। রোববার তারা মাটির নীচে বাঙ্কার থেকেই অনলাইনে সাংবাদিক বৈঠক করেন। তাতে ডেপুটি কমান্ডার ক্যাপ্টেন শ্ব্যাতোসøাভ কালিনা পালামার জানান, এখনও একনাগাড়ে গোলাবর্ষণ করে চলেছে রুশ বাহিনী। কারখানাটিকে গুঁড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বৈঠকে কথা বলেন পালামার ও ইলিয়া সামোলেঙ্কো। দু’জনেরই এক মুখ দাড়ি। চোখেমুখে যুদ্ধের ক্লান্তি স্পষ্ট। সামোলেঙ্কা বলেন, ‘আত্মসমর্পণের প্রশ্নই নেই। ধরা দেওয়া মানে মৃত্যু। শত্রুদের এত বড় উপহার দিতে পারব না।’ আহত সেনাদের উদ্ধার করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন দু’জনেই। তবে একই সঙ্গে সামোলেঙ্কো এ-ও বলেন, ‘সরকার আমাদের পরিত্যাগ করেছে। আমরা আসলে মরেই গিয়েছি। আমরাও সেটা জানি।’
এর আগে শনিবার ইউক্রেন এবং রাশিয়া মারিউপোলের অবরুদ্ধ আজভস্টাল স্টিলওয়ার্ক থেকে সমস্ত বয়স্ক মানুষ, মহিলা এবং শিশুদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে ঘোষণা করেছে। অপারেশনটি এক সপ্তাহ আগে শুরু হয়েছিল, জাতিসংঘ এবং রেড ক্রস দ্বারা সমন্বিত, যারা খবরটি নিশ্চিত করেনি।
কিয়েভ সফরে মার্কিন ফার্স্ট লেডি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী : ঘোষণা না করেই রোববার যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে গেলেন আমেরিকার ‘ফার্স্ট লেডি’ জিল বাইডেন। তিনি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর উঝহোরোদে সফর করেন। সেখানে তিনি একটি স্কুলে যান, যা বর্তমানে বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের অস্থায়ী আবাস। এ দিন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুৃডোও অঘোষিত ইউক্রেন সফর করেছেন।
জিল বাইডেন সেখানে দেখা করেন ইউক্রেনের ‘ফার্স্ট লেডি’ ওলেনা জেলেনস্কির সঙ্গে। ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যাকে আর দেখা যায়নি। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বেশ খানিকক্ষণ দু’জনের মধ্যে কথা হয়। তবে কী বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি। জিল হলেন আমেরিকার প্রথম হাই প্রোফাইল মহিলা যিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে গেলেন। তার এই হঠাৎ সফরের কারণ হিসাবে আমেরিকার ‘ফার্স্ট লেডি’ বলেন, ‘আমি মাতৃ দিবসে এসেছিলাম। ইউক্রেনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম।’
জিল এবং ওলেনা দু’জনে স্কুলের একটি বেঞ্চে বসে কথা বলেন। এই স্কুলটি বর্তমানে ৪৮ জন শিশুসহ বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের অস্থায়ী আবাসস্থল। জিল বলেন, ‘আমরা মনে করি ইউক্রেনের মানুষকেও বোঝানো প্রয়োজন এই যুদ্ধ বন্ধ হওয়া দরকার। এই যুদ্ধ নৃশংস! আমেরিকা ইউক্রেনবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে।’ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই জিলকে চিঠি লেখেন ওলেনা। যুদ্ধ চলাকালীনও একাধিক চিঠি লিখেছেন তিনি। সেই চিঠিতে সাড়া দিয়েই হঠাৎ ইউক্রেন সফরে জিল বাইডেন। অন্য দিকে ইউক্রেনের স্থানীয় মেয়রের সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমের দাবি, একই দিনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও অঘোষিত ইউক্রেন সফর করেছেন। তিনি ইউক্রেনকে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন।
মার্কিন অস্ত্র সরবরাহে হামলা রাশিয়ার : রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার বলেছে যে, তারা ইউক্রেনের সোলেদার শহরের কাছে একটি রেলস্টেশনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলির সরবরাহ করা অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করেছে, রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ বলেছেন, রাশিয়ার বিমান বাহিনী হামলায় ‘উচ্চ-নির্ভুল বায়ুচালিত ক্ষেপণাস্ত্র’ ব্যবহার করেছে। তিনি আরও বলেন, হামলায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর রিজার্ভ ইউনিটও নিহত হয়েছে। মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু গত সপ্তাহে বলেছিলেন যে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে অস্ত্র বহনকারী ন্যাটো পরিবহনকে ধ্বংস করার বৈধ লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করবে। শনিবার, রাশিয়ান সেনাবাহিনী বলেছে যে, তারা খারকিভ অঞ্চলের বোহোদুখিভ রেলওয়ে স্টেশনের কাছে মার্কিন ও ইউরোপীয় দেশগুলির সামরিক সরঞ্জামের একটি বড় মজুত ধ্বংস করেছে। সূত্র : তাস, ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল, বিবিসি, এএফপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।