Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদের ছুটিতে প্রাণ গেল চারজনের

ফাঁকা ঢাকায় বেপরোয়া যানবাহন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০২২, ১২:০৫ এএম

ঈদের ছুটিতে রাজধানীর প্রায় এক কোটি মানুষ প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছেড়েছেন। যানবাহন চলাচলও অনেকটা কম ছিল। সেই সুবাদে তীব্র যানজটের শহর ফাঁকাই ছিল। জ্যামের শহর ঢাকা। যানবাহনের চলাচলও অনেকটা কম। তবে ঢাকার ফাঁকা সড়কে কতিপয় মোটরসাইকেল চালক ও গাড়ি চালকদের বেপরোয়া চলাচলে অতিষ্ঠ বিনোদনের উদ্দেশে ঘর বের হওয়া মানুষজন। শুধু যে প্রধান সড়কগুলোতেই, তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন আবাসিক এলাকার অলিগলিতেও কিছু চালকদের বেপরোয়াভাব মোটরসাইকেল চালাতে দেখা গেছে। যার কারণে রাস্তা পারাপার নিয়ে অনেকেই আতংকিত। অনেক সময় ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। ঈদের ছুটিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন চারজন।
তাদের মধ্যে গতকাল সকালে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় প্রাইভেটকার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় প্রাইভেটকার চালক বুলবুল আহমেদকে আটক করেছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। নিহতরা হলেন- অটোরিকশা চালক তৈবুর আলী ও যাত্রী তাইফুর রহমান রাতুল।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, উত্তরা পশ্চিম থানার ১৩ নম্বর সেক্টরের সিঙ্গার শোরুম মোড়ে প্রাইভেটকার ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই জন নিহত হয়েছেন। তাদের লাশ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল মর্গে আছে। এ ঘটনায় প্রাইভেটকার চালক বুলবুল আহমেদ আমাদের হেফাজতে আছে ও মামলা প্রক্রিয়াধীন।
নিহত তৈবুর আলীর ছেলে তরিকুল বলেন, খবর পেয়ে আমি ঢাকা মেডিকেলে আসি, এসে দেখি আমার বাবা আর নেই। এ ঘটনায় আমার বাবার অটোরিকশায় থাকা যাত্রী রাতুল নিহত হয়েছেন। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন বলে জানতে পেরেছি।
এর আগে গত বুধবার রাতে রাজধানীর দারুসসালামে রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রæতগামী গাড়ির ধাক্কায় মো. আবু বক্কর সিদ্দিক নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। পথচারী মোছা. অন্তরা আক্তার বলেন, দারুসসালাম টাওয়ারের সামনে দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রæতগামী এক অজ্ঞাত গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। পরে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলে তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
একই রাতে যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আইল্যান্ডের সঙ্গে ধাক্কায় মো. শিহাব নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিহাবের ছোট ভাই সোহেল বলেন, আমার ভাই এইচএসসি পাশ করে মেডিকেলে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভারের উপরে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আইল্যান্ডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের বাসা নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানায়। আমার বাবার নাম সাইফুল ইসলাম (মনির)। আমরা দুই ভাই এক বোন সে ছিল সবার বড়।
এদিকে, ফাঁকা রাস্তা পেয়ে বেশি গণ-পরিবহনেরগুলোর মধ্যেও দেখা গেছে অসম প্রতিযোগিতা। গত দুই দিন রাজধানীর শাহবাগ, পল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকা ঘুরে এমন সব চিত্র দেখা যায়। কাঁঠাল বাগান থেকে হাতিরঝিলে স্ত্রীকে নিয়ে বেরাতে এসেছেন মো. শাজাহান। মোটরসাইকেল নিয়ে হাতিরঝিলে উঠছিলেন তিনি। এ সময় বেশ কয়েকজন তরুণদের একটি দল বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে তার পাশ কাটিয়ে যায়। অল্পের জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান শাজাহান ও তার স্ত্রী।
তিনি বলেন, এফডিসি হয়ে হাতিরঝিল উঠার পরই ১৮-২০ বছরের তরুণদের একটি গ্রæপ বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাতে থাকে। তাদের বেপরোয়া ও বিশৃঙ্খল বাইক চালানোর জন্য বড় দুর্ঘটনার শিকার হতে যাচ্ছিলাম। এই বেপরোয়া তরুণদের জন্য ঈদের সময় রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হতে ভয় হয়। আর তাদের আটকাতে রাস্তায় কোনো ব্যবস্থাই নেই।
সদরঘাট থেকে উত্তরাগামী আকাশ ও ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের দুইটি বাস বেপরোয়াভাবে চালানোয় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যাত্রীরা। এদের মধ্যে শিবলি নয়ন নামে এক যাত্রী রামপুরা ব্রিজে আকাশ পরিবহনের বাসটি থেকে নামেন।
তিনি বলেন, কাকরাইল থেকে আকাশ পরিবহনের বাসটিতে উঠি। উঠার পরই দেখি বাস দুটির একটি আরেকটির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বেপরোয়াভাবে চালাচ্ছে। রামপুরা আসলে তাদের মধ্যে দুর্ঘটনার রূপ নিতে নিতে বেঁচে যায়। যাত্রীদের কথাও কানে তুলছিলেন না চালকরা। পরে রামপুরা ব্রিজে আমরা কয়েকজন যাত্রী নামার পর এই প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়।
আকাশ পরিবহনের বাসটির হেলপার মো. ইমন মিয়া বলেন, আমাগো কোনো দোষ নাই। ভিক্টর বাসের চালক ফাঁকা রাস্তায়ও সাইট দিতেছিল না। যেন আমরা যাত্রী উঠাতে না পারি। এহন আমাগোও তো যাত্রী উঠান লাগব। ঈদের সময় যদি দুইটা পয়সা আয় না হয় তাহলে কেমনে কী!
এদিকে ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্টরা। ফার্মগেট মোড়ে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঈদের সময় এই এক সমস্যা, বেপরোয়া গতি। বিশেষ করে তরুণ বয়সী বাইকাররা। মামলা দিয়ে এবং নানাভাবে বুঝিয়ে এদের থামানো যায় না। আর ফাঁকা রাস্তায় সব চেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার এরাই হন। তিনি বলেন, বাসে যাত্রী উঠানো নিয়ে বেপরোয়া গতির প্রতিযোগিতাও এ সময় বেড়ে যায়। এছাড়া ফাঁকা রাস্তায় উল্টো পথে যান চলাচলের সংখ্যাও বাড়ে।
বেপরোয়া যান চলাচল নিয়ে ঈদের আগে ডিবির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেছিলেন, ঈদের ছুটির কারণে রাজধানীতে মানুষ কমে গেছে। প্রায় নীরব হয়ে গেছে ঢাকা শহর। বেপরোয়া গতিতে যানবাহনের চলাচল ঠেকাতে ট্রাফিক বিভাগ চেকপোস্ট স্থাপন ও ব্যারিকেড দিয়েছে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানবাহন

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ