মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
হাইকোর্ট বলেছেন, সাংবিধানিক আইনে সরকার বা সরকারি কর্তৃপক্ষ তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের দায়িত্বে গাফিলতির জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য সরকার। রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক কিংবা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্য বা আদেশ দ্বারা কোনো ব্যক্তি বেঁচে থাকার সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার হরণ করা হলে ওই হরণ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী বা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানগুলোর কঠিন দায় বলেও মন্তব্য করেন আদালত।
চট্টগ্রামের সন্দীপে নৌকা ডুবিতে দুই শিশুসহ ১৮ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণের পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের স্বাক্ষরিত ৫৩ পৃষ্ঠার রায় শনিবার (৩০ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, সাংবিধানিক আইনে সরকার বা সরকারি কর্তৃপক্ষ তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের দায়িত্বে গাফিলতির জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। তবে সরকার এ সমপরিমাণ টাকা দায়িত্বে গাফিলতির জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং ঠিকাদারদের কাছ থেকে আইনগত পদ্ধতিতে আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেবেন। এ নীতিটির ফলে সরকারি কোষাগার থেকে ক্ষতিপূরণ দিলেও দায়িত্বে অবহেলা যে সব কর্মকর্তা বা কর্মচারী করেছে তাদের কাছ থেকে এই টাকা আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হবে।
রায়ে বলা হয়, সংবিধানের অনুচ্ছেদ মোতাবেক প্রদত্ত মৌলিক অধিকার লঙিঘত হলে হাইকোর্ট বিভাগ ১০২ অনুচ্ছেদের আওতায় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিতে পারবেন। সাংবিধানিক আইনের ক্ষতিপূরণ প্রাইভেট আইনের ক্ষতিপূরণের দাবির অতিরিক্ত হিসেবে গণ্য হবে। আদালত বলেন, কঠিন বাস্তবতার বিষয়ে আদালত তার বাস্তব জ্ঞান ও সচেতনতার চোখ বন্ধ রাখতে পারে না। অপরাধীর শাস্তি ভিকটিমের তথা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পরিবারকে উল্লেখ করার মত সান্তনা দেয় না। প্রতিকার হিসেবে যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপূরণ আদালত কর্তৃক প্রদানেই সম্ভবত সবচেয়ে উৎকৃষ্ট এবং একমাত্র কার্যকর প্রতিবিধান। যা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির বা ভিকটিমের বা মৃত ব্যক্তির পরিবারের ক্ষতে মলম লাগানোর মতো।
রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম বলেন, এটা একটা যুগান্তকারী রায়। প্রথমবারের মতো সাংবাধিনিক ক্ষতিপূরণের সঙ্গে ব্যাংক রেট হারে ইন্টারেস্ট দেওয়ার বিধান চালু হলো। আশা করছি আপিল বিভাগে এ রায় বহাল থাকবে। ৫৩ পৃষ্ঠার রায়ে ১৮টি পরিবারের প্রতিটি পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে মোট ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যার অর্ধেক বিআইডব্লিউটিসি এবং বাকি অর্ধেক চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে হস্তান্তর করবে। মামলা দায়েরের তারিখ থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্তদের অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের টাকা জমা হওয়া পর্যন্ত প্ৰচলিত ব্যাংক রেট তথা ৮ শতাংশ হরে ইন্টারেস্ট প্রতিবাদীরা পরিশোধ করবে।
এর আগে গত বছরের ৩০ জুন চট্টগ্রামের সন্দীপে নৌকা ডুবিতে দুই শিশুসহ ১৮ জনের নিহতের ঘটনায় প্রত্যেকের পরিবারকে ১৫ লাখ করে মোট ২ কোটি ৭০ লাখ দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুই মাসের মধ্যে এ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। দুই মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ ব্যর্থ হলে সুদসহ এ টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়। বিআইডব্লিউটিসি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ সন্দীপ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে ১৮ পরিবারকে এ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ে নৌকা ডুবির ঘটনায় বিআইডব্লিউটিসি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের অবহেলাকে দায়ী করা হয়।
২০১৭ সালের ২ এপ্রিল সন্ধ্যায় বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেলে সি-ট্রাক থেকে যাত্রী নামিয়ে দেড়শ গজ দূরে গুপ্তছড়া ঘাটে পৌঁছে দেওয়ার সময় যাত্রীবাহী নৌকাটি উল্টে যায়। দুর্ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ৩০ জনকে উদ্ধার করা হয়। সি-ট্রাকে করে কয়েকশ যাত্রী চট্টগ্রামের কুমিরা ঘাট থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে যাচ্ছিলেন। সি-ট্রাক ঘাটে ভিড়তে না পারায় দেড়শ গজ দূরে নোঙর করে নৌকার মাধ্যমে যাত্রীদের পারাপার করা হয়। ওই নৌকা ডুবির ঘটনায় দুই শিশুসহ ১৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সন্দীপের বাসিন্দা মোহাম্মদ জহরুল ইসলাম বাদী হয়ে হাইকোর্টে রিটটি করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।