পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকী। এখনো নৌরুটে নেই তেমন কোনো ঈদের প্রস্তুতি। দীর্ঘ দিনের পুরাতন ভাঙ্গাচোরা জোড়া তালি দেয়া তিনটি ফেরি দিয়ে চালু রাখা হয়েছে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের সার্ভিস। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটেও ফেরি সঙ্কটে যাত্রী ও চালকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শিমুলিয়ায় দাবি উঠেছে ফেরি সংখ্যা বাড়ানোর। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে খবর বিস্তারিত:
শাহাজাহান বিশ্বাস, আরিচা থেকে জানান, ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকী। এখনো আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে নেই কোন ঈদের প্রস্তুতি। দীর্ঘ দিনের পুরাতন ভাঙ্গাচোরা জোড়া তালি দেয়া তিনটি ফেরি দিয়ে চালু রাখা হয়েছে ফেরি সার্ভিস। এসব ফেরি ১৪ কিলোমিটার দুরত্বের আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে যাতায়াতে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা করে সময় লাগছে। এতে ছোট গাড়িগুলোকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে আর পণ্যবাহী ট্রাকগুলোর একদিন করে সময় লাগছে ফেরি পারাপার হতে।
গতকাল সোমবার সকালেও আরিচা ঘাট থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র অফিস পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উপর পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। ওপারেও পাবনার কাজিরহাটে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যানবাহন শ্রমিকদেরকে। ফেরি না বাড়ালে ঈদের আগে এ নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রীদেরকে চরম দুর্ভোগে হবে।
জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর থেকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পাবনা, নাটোর, রাজশাহীসহ ২৪টি জেলার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার এক নবদিগন্তের সুচনা হয়। ওই অঞ্চলের মানুষ বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মধ্যে বেশ দ্রুত, অতি সহজেই যাতায়াত করতে থাকে। এরপর ওই সড়কে দিন দিন বাড়তে থাকে যানবাহনের চাপ। তবে উক্ত মহাসড়কে প্রতিদিন যাত্রীবাহী দুরপাল্লার কোচ, বাসসহ হাজার হাজার যানাবাহন যাতায়াত করছে । দিন যাচ্ছে আর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। সেই সাথে মাঝে মধ্যেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ও বঙ্গবন্ধু সেতুর দু’পাশে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট এবং চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। বিগত দিনে দেখা গেছে, ঈদ-পার্বণ ও লম্বা সরকারী ছুটি হলেই যানজটের ভোগান্তি বেড়ে যায়। বিশেষ করে ঈদের আগে এবং পড়ে এমনও দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দীর্ঘ ২০/২৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের বিস্তৃতি লাভ করেছে এবং ১২/১৪ ঘন্টা করে আটকে থাকতে হচ্ছে ওই যানজটে পড়ে। এভাবে একটানা দীর্ঘ সময় বাসের মধ্যে বসে থাকতে থাকতে দুর্বিসহ হয়ে উঠে যাত্রীদের জীবন। ঈদের সব আনন্দ বিলীন হয়ে যায় রাস্তাতেই। আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট ব্যবহার করে এসকল ভোগান্তি থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন এ নৌরুটে যাতায়াতকারী পরিবহণ শ্রমিকরা।
বিআইডব্লিউটিসি সুত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পুর্বে এক সময় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের এক মাত্র যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর উক্ত নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বিশেষ করে পাবনা, ঈশ্বরদিসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়তের সুবিধার্থে নৌ-পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী’র একান্ত প্রচেষ্টায় ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী মাত্র ২টি ফেরি দিয়ে দীর্ঘ ২২ বছর পর নতুন করে পুনরায় চালু করা হয় আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি সার্ভিস। এক বছরেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ নৌরুটটি। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মটরসাইকেল ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ প্রতিদিন গড়ে দুই পার মিলে প্রায় সাড়ে ৩শ’ যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। এছাড়া এ নৌরুটে হাজার হাজার যাত্রী যাতয়াত করছে ফেরিতে। পারাপারে যেমন নিরাপদ টাকাও তেমন সাশ্রয়। ১৪ কিলোমিটার দুরত্বের এ পথের জনপ্রতি ফেরিতে ভাড়া দিতে হয় মাত্র ২৫টাকা। যেখানে লঞ্চের ভাড়া ৫০ টাকা এবং স্পিডবোটের ভাড়া ২০০ টাকা। এছাড়া ফেরিতে ঝড়-বৃষ্টির কোন ভয় নেই। সবমিলিয়ে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে নতুন করে আরো ৩/৪টি ফেরি যুক্ত করে ফেরি সার্ভিসের উন্নতি করলে সুফল পাবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। পাশাপাশি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথেও যানবাহনের চাপ অনেকটা কমে যাবে। বিশেষ করে পাটুরিয়া ঘাটে যানজট থাকলে কুষ্টিয়া, ভেড়ামারার গাড়িগুলো উক্ত নৌপথ ব্যবহার করে থাকে।
বিআইডব্লিউটিসি’র ডিজিএম শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, আমাদের যে প্রস্তুতি একেবারে নেই তা নয়। ঈদ উপলক্ষে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। তবে ২৬ তারিখ থেকে ঈদ উপলক্ষে ঘাটে আমাদের কার্যক্রম জোরালোভাবে চলতে থাকবে। এদিকে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সংকট অব্যাহত রয়েছে। এ নৌরুটে ১৯টি ফেরির মধ্যে ১৬টি চলাচল করছে। রো রো (বড়) ফেরি এনায়েতপুরী নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। রুহুল আমিন ও শাহ জালাল নামের দু’টি ফেরি মেরামতের জন্য পাটুরিয়া ভাসমান কারখানায় নোঙর করে রাখা রয়েছে। দুই পাড়ে ৯শ’র অধিক যানবাহন ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
এছাড়া ঈদের ৫ দিন আগে ও ৫ দিন পরে উক্ত নৌরুটগুলোতে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি। তবে জরুরী পণ্যবাহী ট্রাক এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার খ্যাত দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি সঙ্কটে যাত্রী ও চালকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এবং বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নদীপার হতে আসা পণ্যবাহী ট্রাক ও গণপরিবহনের ৬ কি: মি: জুড়ে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট হতে ঢাকা খুলনা মহাসড়কে গোয়ালন্দ বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার জুড়ে অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ও গণপরিবহনের দীর্ঘ সারি রয়েছে। ঘাটের সংযোগ সড়ক ও পল্টুনের উপর যানবাহনের জ্যাম থাকায় ফেরি থেকে যানবাহন লোড অনলোড করতে সময় লাগছে দ্বিগুন। যার ফলে যানবাহনের দীর্য লাইনের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পর মহাসড়কে লম্বা সারিতে আটকে থেকে তাদের সময়মত খাবার গোসল ও পায়খানা পস্রাবসহ এবং প্রচন্ড রোদে পুড়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের এই গরমে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তারা পরিবহন থেকে নেমে রাস্তার পাশে থাকা গাছের নিচে ছায়াতে বসে বাচ্চাদের খাবার খাওয়াছেন। দীর্ঘ সময় মহাসড়কে আটকে থাকার কারণে মাঝে মধ্যেই ঘটছে ছিনতাইয়ের মত ঘটনা।
বিআইডাব্লিউটিসি র ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সিহাব উদ্দিন বলেন, আমাদের ৭টি ফেরি ঘাটের মধ্যে ৪টি ঘাট সচল রয়েছে। এই নৌরুটে ছোট বড় ১৭টি ফেরি চলাচল করছে এবং পরিবহন ও কাঁচামালবাহী ট্রাককে অগ্রধিকারের ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে।
মো. শওকত হোসেন, লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) থেকে জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রবেশদ্বার খ্যাত মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার এবং মাঝিরকান্দি নৌপথে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ঈদ ঘনিয়ে আসায় যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। গত বছর ১৭/১৮টি ফেরি ছিলো। এবছর চালু আছে মাত্র ৭টি ফেরি। এমন পরিস্থিতিতে এবার ঈদে বাড়তি যানবাহনের চাপে চরম ভোগান্তির আশঙ্কা করছে এই পথের যাতায়াতকারীরা। তাই ফেরি সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন এই নৌপথে যাতায়াতকারী যাত্রী ও যানবাহন চালকেরা।
বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ জানান, ঈদ ঘনিয়ে আসায় ঘাট এলাকায় বেড়েছে যাত্রী ও ছোট বড় বিভিন্ন যানবাহনের চাপ। তাই যাত্রীদের ভোগান্তি এড়াতে এ নৌরুটে মানুষ ও হালকা যানবাহন পারাপারে আরও ৪টি ফেরি সংখ্যা বাড়ানোর হবে।
গতকাল সোমবার ভোর থেকে শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ লক্ষ্য করা গেছে। ঘাটে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ আরো বাড়তে থাকে। ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে ব্যক্তিগত যান ও পণ্যবাহী মিনি ট্রাকসহ ছোট বড় দেড় শতাধিক যানবাহন। শিমুলিয়া ঘাটে ৭টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তবে ফেরি সঙ্কটের কারণে লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাতায়াত বেশি করছেন যাত্রীরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসির) শিমুলিয়াঘাটের ব্যবস্থাপক (বানিজ্য) ফয়সাল আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এ নৌরুটে সকাল থেকে ১ টি মিনি রো-রো ফেরি, ২ টি মিডিয়াম ও ২ টি ডাম্প ফেরিসহ সর্বমোট ৭ টি ফেরি চলাচল করছে। সকাল থেকেই যাত্রী ও যানবাহনের বেশ কিছুটা চাপ রয়েছে। শিমুলিয়া ঘাটে যানবাহন ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় শতাধিক ছোট বড় গাড়ি।
বিআইডব্লিউটিএ’র শিমুলিয়া ঘাটের পরিবহন পরিদর্শক মো. সোলেমান জানান, এ নৌরুটে ফেরিতে যাত্রীরা পারাপার না করে লঞ্চে ও স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন। ভোর থেকে এই নৌপথে ১৫৩টি স্পিডবোট ও ৮৩টি লঞ্চ চলাচল করছে। ফেরির সংখ্যা কম থাকায় লঞ্চেই বেশি যাত্রী পারাপার হচ্ছে। স্পিডবোট চলাচল করছে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এবং লঞ্চ চলাচল করছে সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।