Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান, ৬১ দিন পর কার অবস্থান কোথায়?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০২২, ৪:২৫ পিএম

ইউক্রেন বলছে সেদেশে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের ঠিক দুই মাস পার হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ স্থানীয় দু'জন কর্মকর্তা রাজধানী কিয়েভে যাচ্ছেন। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে এই সফর-পরিকল্পনার ব্যাপারে এখনও কোন মন্তব্য করা হয়নি।

প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে ২৪ ফেব্রুয়ারি এই অভিযান শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের এতো উচ্চ পর্যায়ের কোন কর্মকর্তার এটাই প্রথম ইউক্রেন সফর। এর আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেনসহ মার্কিন নেতারা প্রতিবেশী পোল্যান্ড সফর করেছেন। গত আট সপ্তাহের এই যুদ্ধে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহর একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ দেশ থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। দেশের ভেতরেও উদ্বাস্তু হয়েছে আরো কয়েক লাখ মানুষ।

পশ্চিমা সাহায্য: যুক্তরাষ্ট্রের এই দুই কর্মকর্তার সফরের সময় ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে কি না তা পরিষ্কার নয়। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সমর বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মাহমুদ আলী বিবিসিকে বলেন, ‘সামরিক সাহায্য দেয়া কিছুটা সহজ। কিন্তু অর্থনৈতিক সাহায্য বা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত একটি সমাজকে পুনর্গঠন করা কঠিন - যা আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া কিম্বা সিরিয়া কোথাও করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।’

তিনি মনে করেন ইউক্রেনের এই যুদ্ধে পশ্চিমা নেতারা সামরিক সাহায্য যুগিয়ে যাবেন, কূটনৈতিক সহযোগিতাও দেখাবেন কিন্তু অর্থনৈতিক সাহায্য তারা কতোটা দিতে রাজি হবেন সেবিষয়ে বলা সম্ভব নয়। এর মধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র নেড প্রাইস বিবিসিকে বলেছেন এই যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জয়লাভ করবেন। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো ভারী অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করবে কি না এই প্রশ্নের জবাবে প্রাইস বলেন, ‘রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ইউক্রেনীয়দের যা দরকার আমরা সেসবই পাঠাচ্ছি।’

কে জয়লাভ করছে: প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি শুরু থেকেই দাবি করছেন যে তারা এই যুদ্ধে জিতবেন, রাশিয়া কোনোভাবেই জিততে পারবে না। প্রেসিডেন্ট বাইডেনও একাধিকবার বলেছেন যে পুতিন এই যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারবেন না। সমরবিদ সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, ‘যুদ্ধে জয়লাভ করার ব্যাপারে তারা কী বোঝাতে চাইছেন সেটা খুব স্পষ্ট নয়।’ তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা এবিষয়ে ইউক্রেনের এক ধরনের মাপকাঠি রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আরেক ধরনের মাপকাঠি রয়েছে, যদিও এই দুটো দেশের চিন্তাধারার মধ্যে এক ধরনের সমন্বয় রয়েছে, কিন্তু তার পরেও দু'পক্ষের দু'ধরনের চিন্তাধারা রয়েছে। আর রাশিয়ার চিন্তাভাবনা একেবারেই ভিন্ন।’

আলী মনে করেন রাশিয়া যা চাইছে সেটা তারা গত দু'মাসের যুদ্ধে অর্জন করেছে বা করতে চলেছে। ‘রাশিয়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল নেটো জোটকে একথা বুঝিয়ে দেওয়া যে ইউক্রেন এই জোটে অন্তর্ভুক্ত হলে রাশিয়া তার বিরুদ্ধে সম্ভব সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। দ্বিতীয়ত এটা প্রমাণ করা যে, ইউক্রেনে রুশ-ভাষী যতো নাগরিক রয়েছেন তাদের ওপর ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে গত ছয়/সাত বছরে যে ধরনের অত্যাচার করা হয়েছে সেই চাপ রাশিয়া আর গ্রহণ করবে না।’

তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার এই লক্ষ্য, যদিও খুব ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু এই লক্ষ্য হয় অর্জিত হয়েছে কিম্বা হওয়ার পথে রয়েছে। সেদিক থেকে রাশিয়া সফল হয়েছে।’ আলী বলেন, ইউক্রেনের সরকার এবং ইউক্রেনীয়রা চাইছে তাদের দেশ যেন ভৌগলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব ফিরে পায়। অর্থাৎ ডনবাস, ক্রাইমিয়া এবং দক্ষিণের মারিউপোলসহ বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ যেন রাশিয়ার হাতে চলে না যায়।

‘এতদিন তারা যেভাবে রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করে চলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও নেটো জোটের সহযোগিতা নিয়ে তারা যেভাবে রাশিয়াকে ঠেকিয়ে রেখেছে, তাতে তারা মনে করছেন যে এধরনের সাহায্য পেতে থাকলে তারা হয়তো রাশিয়াকে পরাস্ত করতে পারে।’ কিন্তু তার মতে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার চাইতেও বেশি কিছু চাইছে যুক্তরাষ্ট্র - যেন রাশিয়া বিশ্ব ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে কোনদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে।

এর মধ্যেই রাশিয়া তার অভিযানের প্রথম পর্বের সফল সমাপ্তি ঘোষণা করে দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই পর্বে রুশ বাহিনী জোর দিচ্ছে ইউক্রেনের পূর্ব দিকের ডনবাস অঞ্চল দখলের ওপর। এই লক্ষ্যে তারা ডনবাসের বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণ করতেও শুরু করেছে। তাহলে কি এই যুদ্ধ আরো অনেকদিন ধরে চলবে? সমরবিদ সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, বিভিন্ন খবরাখবর দেখে মনে হচ্ছে ৯ই মে প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করতে পারেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দিনটিতে রাশিয়ার বিজয় হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়।

তিনি মনে করেন মারিউপোল যদি সত্যিকার অর্থে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যায় তাহলে তাকে রাশিয়ার আঞ্চলিক বিজয় বলে মনে করা হতে পারে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে আলোচনা করেছেন, একজন উপদেষ্টা স্থানীয় ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন। জেলেনস্কি আরও মার্কিন সামরিক সহায়তার জন্য আবেদন করার জন্য বৈঠকটি ব্যবহার করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তার সর্বশেষ গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলেছে, রাশিয়া তার দখলের ন্যায্যতা প্রমাণের লক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন-এ একটি গণভোটের পরিকল্পনা করছে। ‘ক্রীমিয়াতে একটি স্থল সেতু স্থাপন এবং দক্ষিণ ইউক্রেনে আধিপত্য বিস্তারের রাশিয়ার উদ্দেশ্যের জন্য শহরটি গুরুত্বপূর্ণ,’ মন্ত্রণালয় বলেছে।

জেলেনস্কির শীর্ষ কূটনৈতিক উপদেষ্টা ইগর জোভকভা, ভ্লাদিমির পুতিন এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সাথে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আসন্ন বৈঠকের সমালোচনা করেছেন, বলেছেন যে, ইউক্রেনের পক্ষে কথা বলার ক্ষমতা গুতেরেসের ‘সত্যিই নেই’।

এদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোয়াগা এবং জেলেনস্কি টেলিফোনে মারিউপোলের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তুরস্ক ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে আলোচনার সময় সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত, তুরস্কের প্রেসিডেন্সি রোববার বলেছে। জাতিসংঘ মারিউপোলে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ‘অবিলম্বে’ আহ্বান জানিয়েছে যাতে শহরে আটকে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়া যায়। সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ