পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের শতকরা ৯৭ ভাগ মানুষ হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে এক সমীক্ষায় জানা গেছে। বর্তমানে প্রায় ২ কোটি মানুষ কিডনী রোগে আক্রান্ত এবং ২০ লক্ষাধিক মানুষ ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছে। প্রধান এ তিনটি রোগ ছাড়াও আরো বেশকিছু স্বাস্থ্য জটিল রোগে ভুগছে কোটি কোটি মানুষ। এসব স্বাস্থ্য সমস্যার মূলে রয়েছে পরিবেশগত দূষণ এবং খাদ্যে ভেজাল। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পানিদূষণ, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ যেমন জনস্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব ফেলছে, খাদ্যের ভেজাল তার চেয়েও ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। একদিকে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিসহ করে তুলেছে, অন্যদিকে ভেজাল খাদ্য কিনে মানুষ প্রতারিত ও জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। নিত্যপণ্যের মাননিয়ন্ত্রণে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এই পবিত্র রমজান মাসে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ সারাদিন রোজা রেখে বাজার থেকে যেসব ইফতার সামগ্রী কিনে খাচ্ছে তার বেশিরভাগই কোনো না কোনোভাবে ভেজাল ও মানহীন। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, মাসের পর মাস ধরে ব্যবহৃত পোড়াতেল এবং কোথাও কোথাও মবিল দিয়ে ভাজা দৃষ্টিনন্দন ইফতার সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট ও মৌসুমী ইফতারির দোকানগুলোতে।
বিশ্বের দেশে দেশে রমজান মাস ও ঈদ উপলক্ষে নিত্যপণ্যের মূল্য কমানো হলেও আমাদের দেশে দেখা যায় উল্টো চিত্র। মূল্যস্ফীতি ও ভেজাল খাদ্যের কারণে রমজান মাসে অসংখ্য মানুষ পুষ্টিহীনতা এবং নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়। শহরজুড়ে জমজমাট ইফতারির বাজারে যেসব লোভনীয় খাদ্য প্রদর্শন ও বিক্রি হয় তার বেশিরভাগই ভাজাপোড়া। এগুলোর প্রধান উপাদান হচ্ছে ভোজ্য তেল। সম্প্রতি ভোজ্য তেলের অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি দেশের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠে। গত একবছরে ভোজ্যতেলের মূল্য ৫০ ভাগের বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার ভোজ্য তেলে ভেজালের মাত্রাও আগের চেয়ে বেড়েছে। ভোজ্য তেলে সাবান তৈরীর পাম ওয়েল, হোয়াইট অয়েল, পশুর চর্বি এবং বস্ত্রকলের জন্য আমদানিকৃত কেমিক্যাল মেশানোর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এসব ভেজাল মিশ্রিত তেলে ভাজা ইফতার সামগ্রী খেয়ে কিডনি, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ নানাবিধ জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, ইফতার সামগ্রী মচমচে রাখার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে পোড়া মোবিল, যা বিষাক্ত। বেশ কয়েক বছর ধরেই ফাস্টফুডের দোকানের খাবারে মবিল ব্যবহারের কথা শোনা যাচ্ছে। বড় বড় ফাস্টফুডের দোকানে তা ধরাও পড়েছে। পোড়া মোবিল ব্যবহার করে মূলত চিকেন ফ্রাই, ফ্র্যান্সফ্রাই জাতীয় খাবার মচমচে রাখার জন্য। অথচ এই মোবিল স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর। ভেজাল খাদ্যের কারণে জনস্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হয় তা পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর যেমন চাপ পড়ে তেমনি অসংখ্য পরিবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। রমজান উপলক্ষে বাজারগুলো ভেজাল খাদ্যে সয়লাব হয়ে গেছে। অনেক অভিজাত ইফতারির দোকানে এখন নানা ধরনের কেমিক্যালের পাশাপাশি মোবিল ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব ভেজাল ও মারাত্মক ক্ষতিকর খাদ্য প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে জনস্বাস্থ্যের জন্য তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। ভেজাল বিরোধী কার্যক্রম ও অভিযানের কথা গণমাধ্যমে উঠে আসলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। এটি অনেকটা লোক দেখানোতে পরিনত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া তথ্য অনুসারে, খাদ্যের ভেজালের কারণে প্রতিবছর সারাবিশ্বে প্রায় ৬০ কোটি মানুষ অসুস্থ হয়। বিশ্বে এ হার শতকরা ১০ ভাগের কাছাকাছি হলেও আমাদের দেশে তা কয়েকগুণ বেশি। খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় খাদ্যের ভেজাল প্রতিরোধ রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদÐের বিধান থাকলেও বছরের পর বছর ধরে খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে দুষ্টচক্র পার পেয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ ও পদক্ষেপ লক্ষ্যণীয় নয়। আইন থাকলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় খাদ্যে ভেজাল, প্রতারণা ও পরিবেশগত দূষণের ভয়াবহতা রোধ করা যাচ্ছে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৎপর হলে ভেজাল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কয়েক বছর আগে রাজধানীতে কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিচালিত ভেজালবিরোধী অভিযান যথেষ্ট ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছিল। ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা বাড়িয়ে ভেজাল ও দূষণবিরোধী অভিযান জোরদার ও অব্যাহত রাখা হলে ভেজাল ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব নয়। জাতীয় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট কয়েক বছর আগে নামি-দামি কর্পোরেট ব্র্যান্ডিং কোম্পানিসহ শত শত পণ্যের মান পরীক্ষা করে প্রায় অর্ধশত খাদ্য পণ্যে ভেজাল চিহ্নিত করেছিল। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে এ বিষয়ে আরো সোচ্চার ভূমিকা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। শুধু রমজান মাসেই নয়, খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান সারাবছর বলবৎ রাখতে হবে। সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন, বাজার কমিটিসহ জনসাধারণের সামাজিক সচেতনতা ও আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে খাদ্যের ভেজাল প্রতিরোধ ও নিরাপদ খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।