Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কিয়েভে হামলা বাড়ানোর হুমকি রাশিয়ার : শোনা গেছে বিস্ফোরণের শব্দ

ইউক্রেনের মিসাইল ফ্যাক্টরি গুঁড়িয়ে দিল রাশিয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

এবার ইউক্রেনের মিসাইল কারখানা গুঁড়িয়ে দিল রাশিয়া। কিয়েভের অদূরে ঝুলিয়ানস্কি মেশিন বিল্ডিং প্লান্টে আছড়ে পড়ে একর পর এক রুশ ক্ষেপণাস্ত্র। আর রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা হলে কিয়েভে প্রচণ্ড বোমাবর্ষণ করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের মিসাইল ফ্যাক্টরিতে সমুদ্র থেকে দূরপাল্লার ‘কালিবার’ মিসাইল ছোঁড়া হয়। কিয়েভের অদূরে ঝুলিয়ানস্কি মেশিন বিল্ডিং প্লান্টটিতে ইউক্রেনীয় ফৌজের জন্য অ্যান্টি এয়ারক্রাফ্ট মিসাইল সিস্টেম তৈরি এবং মেরামত করা হত। এ হামলার পর জেলেনস্কি বাহিনীর মিসাইল তৈরি ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। শুধু তাই নয়, এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, ‘কিয়েভের জাতীয়তাবাদী সরকার যদি রুশ ভূখণ্ডে কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলা চালায় তাহলে কিয়েভে আক্রমণের ঝাঁজ আরও বাড়িয়ে তোলা হবে’।
ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া। সম্প্রতি ইউক্রেনের বুচা গণহত্যা ও বরোদিয়াঙ্কা শহরের ছবি দেখে শিউরে উঠেছে গোটা বিশ্ব। এমন পরিস্থিতিতে এবার পালটা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিককে নিশানা করার অভিযোগ তুলেছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার মস্কো অভিযোগ জানিয়েছে, ইউক্রেন সীমান্তের কাছে ব্রিয়ানস্ক অঞ্চলে সাধারণ মানুষকে নিশানা করে জেলেনস্কি বাহিনী। তারপরই ইউক্রেনীয় ফৌজের একটি এমআই-৮ হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছে রুশ এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম।
বলে রাখা ভাল, প্রায় ৫০ দিনের যুদ্ধে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেন। রাজধানী কিয়েভ ও খারকভ দেখলে মনে হয় জাদুবলে যেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ফিরে গিয়েছে শহরগুলি। মূহুর্মূহু গোলবর্ষণ ও যুদ্ধবিমানের কানফাটানো আওয়াজের মধ্যে মরিয়া হয়ে লড়াই চালাচ্ছে ইউক্রেনের সেনা।
এদিকে ‘রাশিয়া ওয়ান’ নামে রাশিয়ার একটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলের একজন সঞ্চালক ‘ঘোষণা’ করেছেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধে তাদের যুদ্ধ জাহাজ মস্কভা ডুবে যাওয়ার পর ইতোমধ্যেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এর আগে রাশিয়া দাবি করেছিল, গোলাবারুদে বিস্ফোরণের ফলে আগুন লাগার পরে জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বন্দরে ফিরিয়ে আনার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। অন্যদিকে, ইউক্রেন দাবি করেছে, তাদের নেপচুন ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগরীয় রণতরী বহরের প্রধান জাহাজ মস্কভা ধ্বংস হয়েছে।
কিন্তু জাহাজটি ডুবে যাওয়ার ফলে ক্রেমলিনের প্রধান প্রচারণা মুখপত্র রাশিয়া ওয়ান টিভিতে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ওলগা স্কাবেয়েভা নামে চ্যানেলটির একজন সঞ্চালক একটি হাড়হিম করা বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এর ফলে যা ঘটেছে তাকে নিরাপদে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলা যেতে পারে’ এবং তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ‘এটি সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত’।
স্কাবেয়েভা আরো বলেন, ‘এখন আমরা অবশ্যই ন্যাটো অবকাঠামোর বিরুদ্ধে লড়াই করছি, যদিও ন্যাটো নিজে যুদ্ধক্ষেত্র উপস্থিত নেই। কিন্তু আমাদের তা বুঝে নিতে হবে’।
ওদিকে ইউক্রেনে অস্ত্র না পাঠানোর হুশিয়ারি দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি পাঠিয়েছে রাশিয়া। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছে, যেন তারা ইউক্রেনে আর অস্ত্র না পাঠায়। চিঠিতে রাশিয়া হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যদি অস্ত্র পাঠানো অব্যহত রাখেন তাহলে ভাবতেও পারবেন না এর পরবর্তী পরিণতি কী হবে।
রাশিয়া গত সপ্তাহের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চিঠিটি পাঠায়। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে ৮০ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা পাঠানোর ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। খবরটি প্রথম প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। তবে রাশিয়ার এমন হুমকির পরও যুক্তরাষ্ট্র পিছপা হয়নি। তারা ইউক্রেনে অস্ত্র সহায়তা অব্যহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো ইউক্রেনকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১১টি এমআই-১৭ হেলিক্প্টার, ১৮টি ১৫৫ মিলিমিটার কামান ও ৩০০টি ড্রোন।
এরকম উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহ আগেও দোটানায় ছিল জো বাইডেন প্রশাসন। কারণ তাদের ধারণা ছিল এগুলো রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরো কঠিন করে দেবে।
বিপুল শক্তিধর রাশিয়ার মোকাবিলায় ইউক্রেনকে নানা ধরনের অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো। ইউক্রেন যত বেশি বিদেশি অস্ত্র সাহায্য পাচ্ছে, পাল্লা দিয়ে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে রাশিয়া। এই দুইয়েরই যোগফল- দিনে দিনে যুদ্ধ আরো রক্তক্ষয়ী, আরও ধ্বংসাত্মক হচ্ছে। তবে লাভ বাড়ছে অন্তত একটি গোষ্ঠীর! কাদের? অস্ত্র ব্যবসায়ীদের।
যুদ্ধের অবশ্যম্ভাবী প্রভাব, গোটা বিশ্ব জুড়ে মূল্যবৃদ্ধি আকাশ ছোঁয়ার দশা, গরিব মানুষের আরও গরিব, মধ্যবিত্তের প্রান্তিক হওয়ার প্রক্রিয়া তেল দেওয়া মেশিনের মতো এগোচ্ছে দিগন্তের পথে। হাজারো ধ্বংসের মধ্যেও ফুলেফেঁপে উঠছে দুনিয়ার তাবড় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। সাধারণত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে অস্ত্র তৈরি পুরোপুরি বেসরকারি হাতে। তারা যখন অন্য কোনও দেশকে অস্ত্র সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয়, তখন আখেরে লাভ হয় সেই অস্ত্র তৈরি সংস্থাগুলোরই। সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট, রয়টার্স, এপি।



 

Show all comments
  • Abdul Ali ১৬ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২৭ এএম says : 0
    আমরা যুদ্ধ চাই না। তবে, এ যুদ্ধের জন্য জেলেনিস্কি দায়ী।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Delwar Hossain ১৬ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২৭ এএম says : 0
    জেলেনিস্কি যতক্ষন আমেরিকার গোলামি করবে ততক্ষণই রাশিয়ার মিসাইল হামলা চলবে
    Total Reply(0) Reply
  • Haider Ali Ali ১৬ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২৮ এএম says : 0
    সব কিছুর জন্য ইউক্রেন সরকারের পদত্যাগ করা উচিত কারণ এমেরিকা জেমনে নাচায় তেমনি নাচে তাই আজ এই অবস্থা
    Total Reply(0) Reply
  • Mehedi Sheikh ১৬ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২৮ এএম says : 0
    Good Russia
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ