Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমজান মাসে দেশে-দেশে মূল্যছাড়

ড. মো. কামরুজ্জামান | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০১ এএম

রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস মাহে রমজান। আত্মগঠন ও আত্মশুদ্ধির মাস হলো রমজান। আল্লাহর নৈকট্য লাভের বার্তা নিয়ে প্রতিবছর ফিরে আসে এই মাহে রমজান। এ মাসকে আত্মত্যাগের মাসও বলা হয়ে থাকে। তাই বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিম আত্মত্যাগের মাধ্যমে এ মাসে পুণ্য অর্জনে ব্যস্ত থাকে। মুমিন বান্দার প্রতিটি ভালো কাজ ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় মানুষের জীবনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও মুমিন বান্দাদের ইবাদতের মানসিকতা তাই বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আর এ ইবাদতের মাধ্যমে তারা পুণ্য অর্জনে সচেষ্ট থাকে। পুণ্য অর্জনের আশায় প্রতিটি রমজানে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড়ো বড়ো শপিং মল পণ্য বিক্রয়ে বিশেষ মূল্যছাড় দিয়ে থাকে। বড় বড় শপিংমলেই শুধু নয়, ছোটো ছোটো দোকানগুলোতেও পণ্য বিক্রয়ে মূল্যছাড় দিতে দেখা যায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, বাজারে যেন পণ্যে মূল্যছাড়ের প্রতিযোগিতা চলছে। মূল্যছাড়ের এ প্রতিযোগিতার সর্বনিম্ন রেট থাকে ৫০ শতাংশ। কখনও কখনও এটা ৭০ শতাংশেও উন্নীত হয়ে থাকে। উদ্দেশ্য থাকে রোজা এবং রোজাদারের প্রতি সম্মান ও জনগণের ক্রয়ক্ষমতা নাগালের ভিতরে রাখা। তবে পণ্যের এ মূল্যছাড়ের মাধ্যমে তাদের পুণ্য অর্জনের উদ্দেশ্য থাকে মুখ্য। এ লক্ষ্যে দোকানদারেরা পণ্যের মূল্য কমানোর ঘোষণা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সম্বলিত তালিকা দোকানের সামনে ঝুলিয়ে রাখে। এদিক থেকে সর্বপ্রথম সৌদি আরবের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। রমজান মাস আগমনের আগেই সে দেশে শুরু হয়ে যায় পণ্যের মূল্য কমানোর প্রতিযোগিতা। সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ বড় বড় কয়েকটি শপিংমল হলো, সেন্টার পয়েন্ট, আল মদিনা, লুলু হাইপার মার্কেট, পান্ডা, তামিমি ও ওথাইম। এসব মার্কেট রমজান আসার অনেক আগেই পণ্যমূল্যের ছাড় ঘোষণা করে। পণ্যমূল্যে ছাড়ের ঘোষণা দিয়েই মার্কেটগুলো বসে থাকে না। এ ঘোষণা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে তারা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। সোশ্যাল মিডিয়া ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত দিয়ে থাকে। তারা রং-বেরঙের লিফলেট ও হ্যান্ডবিল প্রচার করে। শুধু পণ্যে মূল্যছাড় দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না দেশটি। বরং রমজান মাসে রাষ্ট্রের কর্মচারীদের কর্মঘণ্টাও সংক্ষিপ্ত করে। শ্রমিকদের কর্মঘণ্টাতেও যথেষ্ট পরিমাণ ছাড় দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সরকার বেতনে কোনো ছাড় দেয় না। সরকারই শুধু নয়, সেদেশের বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি রমজান উপলক্ষে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে থাকে। প্রতিটি রমজানে সে দেশের বড় বড় মার্কেটে পণ্যের উপর বিশেষ ছাড় দিয়ে প্যাকেজ ঘোষণা করে। পণ্যমূল্যের বিশেষ ছাড় সম্বলিত নানা ধরনের ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড বাজারে ছড়িয়ে দেয়। এ কার্ডগুলোতে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা থাকে। আর এ কার্ডের মাধ্যমে ক্রেতারা পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। এসব প্যাকেজে মাছ, গোশত, মিষ্টি, বাদাম, খেজুরসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর মূল্য উল্লেখ থাকে। অনেকে এসব কার্ড দরিদ্র পরিবারের নিকট পৌঁছে দেয়। ফলে এসব গরিব তাদের প্রয়োজনে অল্পমূল্যে সহজেই খাবার সংগ্রহ করতে পারে।

রমজান আসার সাথে সাথেই কাতারে শুরু হয়ে যায় মূল্যছাড়ের হিড়িক। এ বছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রমজান আগমনের আগেই কাতার এ বছর সাত শতাধিক ভোগ্য-অভোগ্য পণ্যমূল্য ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে। রমজান সাধারণত দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় মূল্যছাড়ের এ ঘোষণা দিয়ে থাকে। রমজান আসার ১০ দিন আগেই কাতারের বাজারগুলোতে এ আদেশ কার্যকর শুরু হয়ে যায়। রমজান মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত সাধারণ নাগরিকরা মূল্য ছাড়ের এ সুবিধা ভোগ করতে পারে। দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা দিয়ে শুধু বসেই থাকেনি। নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে। আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিও ঘোষণা করেছে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ দায়ের করার ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে। এছাড়া প্রশাসনকে অবহিত করতে ৯৯৯ এর মতো দ্রুত কল দেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। দেশটিতে ইতোমধ্যে নিম্নোক্ত পণ্যসমূহে মূল্যছাড় দেয়া হয়েছে: মুরগির গোশত, গরুর গোশত, ডিম, পোল্ট্রিজাত দ্রব্য, হিমায়িত শাকসবজি, চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, লবণ, চা, ঘি, ফলের রস, পনির, মিষ্টি, মধু, ময়দা, মিনারেল ওয়াটার, খেজুর, কফি, কফিজাত দ্রব্য, চা, দুধ, চিনি ইত্যাদি

মূল্যছাড়ের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। রমজানের এক মাস পূর্বেই দেশটি পণ্যমূল্যে ছাড় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আর রমজানের ঠিক ১০ দিন আগে থেকেই সেটা কার্যকর শুরু হয়েছে। দেশটি পণ্যের মূল্যের উপর ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রয় শুরু করেছে। নুনু, আমাজন, দানিয়ুব হোমস, প্যান এমিরেটস, শারজা কুব, মায়া সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন বড় বড় মার্কেট ৭০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়ের ঘোষণা বাস্তবায়ন করেছে। ৭০ শতাংশ ছাড় পাওয়া এসব পণ্যের নাম হলো: সবজি, ফল, টিনজাত দ্রব্য, মুরগি ইত্যাদি। ভোগ্যপণ্যের বাইরেও দেশটি দৈনন্দিন ব্যবহার্য বিভিন্ন অভোগ্য পণ্যের উপরও মূল্যছাড় দিয়েছে। এসব অভোগ্যপণ্য দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে: স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ফ্রিজ, ওভেন, মাইক্রোওয়েভ টেলিভিশন ইত্যাদি

মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্ব পূর্ণ আরেক দেশ হলো ওমান। তাদের কাছে রমজান মানেই ভিন্ন রকম আয়োজন-উৎসব। এ উপলক্ষে ওমানবাসীদের মধ্যে শুরু হয় পুরো বছরের খাদ্য মজুদের আয়োজন। ওমানবাসী রমজান মাসের আগমনের প্রহর গুণতে থাকে। কারণ, রমজান আসার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই দেশটির শপিংমলগুলো পণ্যের উপর মূল্যছাড় দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে। প্রতি বছর রমজান এলেই ওমান সরকার এ উদ্যোগ গ্রহণ করে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি কোম্পানিগুলোও পণ্যমূল্যে ছাড় দেয়। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরাও এবছর পণ্যমূল্য ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হারে ছাড় দিয়েছে। কোনো ব্যবসায়ী যাতে এ আদেশ অমান্য করতে না পারে সেজন্য সরকার বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া খাদ্যসামগ্রীর গুণগতমান নিশ্চিত ও স্টোরেজ সুবিধা নিশ্চিত করতে বাজার পরিদর্শন ও নজরদারির ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে রোজা শুরু হয়েছে ২ এপ্রিল। কিন্তু ২৫ মার্চ মিশর রমজান উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী এক খাদ্যমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়। রমজানে দ্রব্যমূল্য ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতেই মিশর এ মেলার আয়োজন করে। ‘রমজানুল কারিম’ সম্বলিত সুসজ্জিত ব্যানার দিয়ে সাজানো হয় মেলার চতুর্দিক। উক্ত মেলাতে কয়েক শত খাদ্য কোম্পানিও খাদ্যসামগ্রীসহ অংশগ্রহণ করে। মেলায় চাউল, চিনি, তেল, গোশত, শাকসবজি, খেজুর, বাদাম ইত্যাদি পণ্য মূল্যছাড়ে বিক্রি হচ্ছে। মিশরের প্রধান প্রধান খাদ্য কোম্পানি বৈচিত্র্যময় অফার সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। করোনার প্রভাব কাটিয়ে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা সহনীয় রাখতেই মিসর সরকার এ ব্যবস্থা করেছে। ‘ওয়েলকাম রমজান ফেয়ার’ নামে এই মেলা বিগত কয়েক বছর যাবৎ কায়রোতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মেলা উপলক্ষে মিশরের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা মাদবৌলী বলেন, আমি মেলায় বিভিন্ন দোকান ঘুরে ঘুরে দাম পর্যবেক্ষণ করেছি। মেলায় পণ্যে মূল্যছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে।’ রমজান মাস শেষ হলেও মূল্যের কোনো ধরনের হেরফের হবে না। মিশরের সেনাবাহিনী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ক্রয়সীমা নাগালের ভিতরে রাখতে ভ্রাম্যমাণ দোকানেরও ব্যবস্থা চালু করেছে।

রোজার মাস উপলক্ষে মালয়েশিয়াতেও বিপুল পরিমাণ পণ্যে মূল্যছাড় দেয়ার ঘোষণা এসেছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও কর্তৃপক্ষ বেশিরভাগ পণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। দেশটি চাল, ডাল, তেল, আদা, মসলা, সবজি, মাছ, গোশত, মিষ্টি, দধি, খেজুর, পনিরসহ বিভিন্ন পণ্যের দামে ছাড় দিয়েছে। পোশাক, প্রসাধনী, কাঁচামাল, অভোগ্য অন্যান্য পণ্যেও ব্যাপকভাবে মূল্যছাড় দিয়েছে কতৃপক্ষ। পণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েই প্রশাসন বসে নেই। বরং বাজার স্থিতিশীল রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি সরকার খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করতেও যথাযথ ভূমিকা রেখে চলেছে। এ উপলক্ষে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব বিশেষভাবে নজরদারি অব্যাহত রেখেছেন। মেলাতে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় মনিটরিং অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। অন্য যেকোনো মাসের তুলনায় রমজান মাস এলেই সিটি কর্পোরেশন তাদের তৎপরতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। দেশটির জায়ান্ট, লুলু, মাইডিন, এনেসকে, এয়নবিগসহ বড় বড় সুপারশপে নিয়মিত অনলাইন ও অফলাইনে চলছে বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। জনপ্রিয় অনলাইন শপ লাজাডা ও শপি সাইটগুলো রমজান উপলক্ষে বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে।

এবার অন্য ধর্মের উৎসবে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরা যেতে পারে। গোটা খ্রিস্টান বিশ্ব বড়দিন উপলক্ষে ব্যাপক আয়োজন করে থাকে। বড়দিন ছাড়াও তারা বিভিন্ন উৎসব পালন করে থাকে। ইস্টার সানডে, পুণ্য শুক্রবার ও মৃত্যু লোকের পর্ব দিবস তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এসব উৎসব উপলক্ষে ইউরোপজুড়ে রীতিমতো মূল্যছাড়ের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাতে উৎসবের ঠিক এক মাস আগে বাজারে উৎসবের আমেজ ভরপুর থাকে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সারাটা বছর যেনো তারা এ দিনের জন্য অপেক্ষা করে আসছিল। স্বল্পমূল্যে পণ্য কিনতে পেয়ে তারা যারপরনাই খুশি হয়। সম্পদশালীরা এই সুযোগে সারাবছরের পণ্য ক্রয় করে রাখে। ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলো অন্য ধর্মের প্রতিও যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। তাই রমজান উপলক্ষেও তারা পণ্য কম দামে বিক্রি করে। এ সমস্ত দেশের মুসলিম ব্যবসায়ীরা এবং কোম্পানির মালিকরা রমজানের আগমন উপলক্ষে পণ্যে ব্যাপকভাবে মূল্যছাড় দেয়। বিশেষ করে ইংল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, জার্মানি এবং ফ্রান্সের মুসলিম ব্যবসায়ীরা পণ্য কম দামে বিক্রি করে। এ বছরের রমজান মাসেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এমনও দেখা যায় যে, লাভ ছাড়াই ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রয় করে চলেছে। মূলত এ সমস্ত দেশের সরকার ও ব্যবসায়ীরা ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্প্রীতি বাড়াতে এমন উদ্যোগ নিয়ে থাকে।

কিন্তু এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র শুধু বাংলাদেশেই দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা নির্লজ্জভাবে ফায়দা লুটতে সারাবছর রমজানের জন্য অধীরভাবে অপেক্ষায় থাকে। রমজানের ঠিক এক মাস আগে থেকেই তারা পণ্যমূল্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। খোঁড়া যুক্তির মাধ্যমে তারা গরিবের টাকা হাতিয়ে নেয়। সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত টাকা পকেটে ঢুকিয়ে তারা তাদের পকেট মোটা করে। এ রমজানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাইতো তারা রমজানের আগে দেশের বাজারে ১ কেজি সজনে ডাটার দাম হাকিয়েছিল ৮০০ টাকা। ১ কেজি উস্তের দাম ছিল ১০০ টাকা। ১ কেজি পটলের দাম ছিল ১০০ টাকা। ১ কেজি মসুর ডালের দাম ছিল ১৩০ টাকা। মাঝারি সাইজের একটি লাউয়ের মূল্য ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ইতোমধ্যেই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনৈতিক উপায়ে গরিবদের অনাহারে রেখে নিজেদের পকেট ভারি করেছে। রমজান এলে এ সিন্ডিকেট কীভাবে পণ্যের দাম বাড়াতে পারে সেটা নিয়েই ধান্দাবাজিতে ব্যস্ত থাকে সারাবছর। অসাধু সিন্ডিকেট শুধু পণ্যের দাম পেতেই পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। তারা সুযোগ পেয়ে এ সময়ে চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। বড় এবং ছোটো-সকল ব্যবসায়ীর মাঝেই এ ধান্ধাবাজি লক্ষ করা যায়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে এজাতীয় আচরণ মোটেই কাম্য নয়। দেশের ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই মুসলিম। ইতোমধ্যে রমজানের অর্ধাংশ শেষ হতে চলেছে। এ সময় বাজারের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র এখানে তুলে ধরা হলো: আগে চিনির কেজি ছিল ৭৫ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। সাধারণ মানুষ নিম্ন মানের সাধারণ খেজুর দিয়ে ইফতার করে থাকে। রমজানের আগে যার প্রতি কেজির দাম ছিল ৮০ টাকা। বর্তমানে তার মূল্য ১৪০ টাকা। রমজানের আগে প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম ছিল ১২৫ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। মসলার দাম আগে ছিল ৩০০ টাকা, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ টাকা। ১ কেজি জিরার দাম ছিল ৩৫০ টাকা থেকে ৩৮০ টাকা। বর্তমান তার মূল্য ৪৩০ টাকা। প্রতি কেজি পোলাওয়ের চালের দাম রমজানের আগে ছিল ৯০ টাকা। এখন তার দাম ১০০ টাকা। আটার দাম ছিল ২৫ থেকে ২৮ টাকা, বর্তমান তার দাম ৩৫ টাকা। বর্তমান বাজারে ১ কেজি গরুর গোশতের দাম হাকানো হচ্ছে ৬৫০ টাকা। রমজানের আগে যার মূল্য ছিল ৫৫০ টাকা। ১ কেজি দেশি মুরগির পূর্বমূল্য ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। বর্তমানে তার মূল্য ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা। একটি গ্যাস সিলিন্ডারের ২ মাস আগের দাম ছিল ৮০০ টাকা। বর্তমান তার মূল্য ১৩৫০ থেকে ১৪০০ টাকা। এমতাবস্থায় জনগণের প্রত্যাশা, সরকার অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দেবে। বাজারব্যবস্থার যথার্থভাবে নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত মনিটরিং করবে।

লেখক: কলামিস্ট ও অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
[email protected]



 

Show all comments
  • Kazi Arifa ১৬ এপ্রিল, ২০২২, ১১:০০ এএম says : 0
    অসাধারণ দেখনি। দেশের অবস্থা দৃষ্টে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় লেখাটা সার্বজনীন হোক এটা প্রত্যাশা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন