Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জনগণ বলছে ‘সোনার বাংলা নরক কেন? ’: রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ৪:৩১ পিএম

গণতান্ত্রিক অধিকার নেই বলেই দুর্নীতি আজ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া কিছু ব্যবসায়ী এবং দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হরিলুটে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দেশের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় খাতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির বিস্তার ঘটিয়েছে তারা। ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শ্লোগান ছিল-সোনার বাংলা শ্মশান কেন? আর এখন জনগণ বলে-“সোনার বাংলা নরক কেন?” কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই শোষণ, লুন্ঠন, অবিচার, রাজনৈতিক হত্যা আর উৎপীড়ণে দেশে ভয়াবহ কলঙ্ক রচনা করে। করোনা মহামারীতে যখন বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে আর শত শত কোটি মানুষ ছিল মৃত্যু ভয়ে ভীত-সেই ভয়ানক পরিস্থিতিও সরকারের নেতা মন্ত্রীদেরকে দুর্নীতি থেকে সরাতে পারেনি। গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

টিআইবি’র প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন ক্রয় এবং ব্যবস্থাপনার নামে সরকার রাষ্ট্রের তথা জনগণের ২৩ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। প্রাক্কলিত ব্যয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রদত্ত হিসাবের অর্ধেকেরও কম। এছাড়াও ১০.১% নাগরিক টিকার জন্য ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন। ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে পছন্দ অনুযায়ী টিকা প্রদান করা হয়েছে এবং টিকা না নিয়েও টাকার বিনিময়ে প্রবাসীরা টিকা সনদ সংগ্রহ করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশের জন্য বিপদ আর আমাদের দেশের আওয়ামী লীগের লোকজনের কাছে মহাউৎসবে মেতে ওঠা। তাই করোনা গোটা মানবজাতির জন্য ভীতির কারণ হলেও আওয়ামী ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কাছে ছিল ‘আনন্দবার্তা’। তারা রাজনীতি করছেন দুর্নীতির কাছে নিঃস্বার্থ আত্মনিবেদনের জন্য। আর উন্নয়ন মানে তাদের পকেটের উন্নয়ন।

তিনি বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি সেক্টরে পিলে চমকানো বড় বড় দুর্নীতির খবর বেরুলেও আজ পর্যন্ত কোনো দুর্নীতির বিচার হয়নি। বরং দুর্নীতি এবং দুর্নীতিবাজদের বাঁচানো এই সরকারের দুটি বিরল গুণ। এরা দুর্নীতিকে জায়েজ করতে জাতীয় সংসদে পর্যন্ত দায়মুক্তির আইন পাশ করা হয়।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শুরু থেকেই করোনার টিকা নিয়ে দুর্নীতি আর অনিয়মের খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। কেবল টিকা নয়, গত দুই বছরে করোনা মহামারীকালের প্রাত্যহিক সংবাদপত্রের পাতা ঠাসা ছিল স্বাস্থ্যখাতের নিয়োগ, ক্রয়, অবকাঠামো নির্মাণ ও সেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগুনতি অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষ কেলেংকারী ও অব্যবস্থাপনার সংবাদে। সত্য সংবাদ প্রকাশের জন্য একজন সাংবাদিককে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। নির্বিঘেœ নিরুপদ্রবে দুর্নীতির অভিপ্রায় চরিতার্থ করতে ২০২১ সালের ৮ জুলাই ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত এক আদেশে কোভিড-১৯ রোগী ও স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক তথ্য গণমাধ্যমের কাছে আদান প্রদানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। জাতীয় সংসদে একাধিকবার কোন কোন সংসদ সদস্য টিকার দাম জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘ননডিসক্লোজার’ চুক্তির কারণে টিকার দাম প্রকাশ করা যাবে না। আবার তিনি টিকা নিয়ে একেক সময় একেকটা বিভ্রান্তিকর কথা বলে মানুষকে বেকুব বানানোর চেষ্টা করেছেন। গত ১০ মার্চ রাজধানীর জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে কিডনি দিবসের অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনার টিকা কেনা ও টিকাদান কার্যক্রম মিলে সরকারের প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। অপরদিকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া গত কয়েক মাসে একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, টিকা কেনায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এটা থেকে যে কেউ অনুমান করতে পারেন ২৩ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির আসল রহস্য। চরমভাবে ব্যর্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ ও গণক্ষোভ তৈরী হলেও সরকার কেন তাকে স্বপদে বহাল রেখেছে তা টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে উন্মোচন হলো। দেশের জনগণ এই ২৩ হাজার কোটি টাকা কারা লুটপাট করলো তার হিসাব চায়। বিরোধী দলের নেতাদের হয়রানীর জন্য ওঁৎপেতে থাকা দুদককে বলবো তদন্ত করে ২৩ হাজার কোটি টাকার হিসাব বের করুন। এ সমস্ত নজীরবিহীন দুর্নীতির হিসাব জনগণকে দিতেই হবে।

 

রিজভী বলেন, কেবল টিকা নয়, সুঁই কেনা থেকে শুরু করে কাঁথা বালিশ চাদর কিংবা হসপিটালের জানালার পর্দা কেনাকাটায় সরকারের লোকজন দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। সেখানে বিদেশ থেকে কঠিন শর্তে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা ঋণ এনে কথিত মেগা প্রকল্প করছে। এই প্রকল্পগুলো মুলতঃ লুটপাটের খনি। দফায় দফায় ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিদেশ থেকে শত শত হাজার হাজার কোটি টাকা ধার দেনা করে এনে নিশিরাতের সরকার দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এ নিয়ে জনগণ ভয়াবহ উৎকন্ঠায়। বাংলাদেশে শ্রীলংকার পরিস্থিতির ন্যায় সকল উপাদানই বিদ্যমান। বর্তমানে একটি শিশু ৯৮ হাজার টাকা ঋণ মাথায় জন্ম গ্রহণ করে, এখন সেটি বেড়ে দ্বিগুন হয়ে গেছে। কারণ ইতোমধ্যে আরও ৬ বিলিয়ন ঋণ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডিও বলেছে, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি বাংলাদেশকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ ২০২৩ সাল থেকে সকল ঋণ পরিশোধের কিস্তি শুরু হবে, তখন শ্রীলংকার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে বাংলাদেশে। রেমিটেন্স নির্ভর অর্থনীতির উপর ভর করে নিশিরাতের সরকারের নেতা মন্ত্রীরা প্রতিদিনই দাবি করে বলছেন, বাংলাদেশে কখনোই শ্রীলংকার মতো পরিস্থিতি হবেনা। যারা পবিত্র রমজানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা, যারা বেগুনের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মিষ্টি কুমড়া দিয়ে বেগুনি খাবার নির্দেশ দেয়, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং স্থানীয় সরপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম প্রধান পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, তিনি নিজেও ফেন্সিডিল খেয়েছেন, তার ছেলেরাও ফেনসিডিল খায়। সুতরাং দেশে ফেনসিডিল আমদানি করার জন্য নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের এই নেতা। এই হলো ‘টপ টু বটম’ আওয়ামী লীগ নেতানেত্রীদের অবস্থা। এই সমস্ত বক্তব্যে প্রমাণিত হয়-বাংলাদেশে এখন জঙ্গলের রাজত্ব চলছে। সুতরাং এই আওয়ামী লীগের হাতে দেশ এবং জনগণ নিরাপদ কিনা এ প্রশ্নটিই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। যে দলের নেতারা রাজস্ব ব্যয় বাড়াতে ফেন্সিডিল আমদানির সুপারিশ করে, এই সরকারের লোকজনের কথা শুনলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হতে হয়। মনে হয় আমরা সত্যিকার রাক্ষস-ক্ষোক্কসের দেশে বাস করছি।

বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের কথা উল্লেখ করে রাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, ঋণ নিয়ে শেখ হাসিনা শত শত মেগাপ্রকল্প খুলেছে। সবগুলোই হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। বলা যায়-পুরো বাংলাদেশ এখন বিদেশিদের ঋণের জালে বন্দী। ফলে আমাদের সার্বভৌমত্বও বন্দী। এরপর মেগাদুনীতি, অর্থপাচার ও মূল্যস্ফিতিতে শ্রীলংকার চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা আরও খারাপ। এটি রীতিমতো উদ্বেগ, ভয় ও বিপদের কারণ হতে পারে। সরকার এখন শুধু চাপার জোরে টিকে আছে। যে কোনো সময় বায়বীয় অর্থনীতি ধসে পড়তে পারে। দেশের দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে তিতিবিরক্ত, বিব্রত জনগণের সামনে প্রতিদিন ওবায়দুল কাদের আর হাসান মাহমুদদের অর্থহীন কথাবার্তা জনগণের কাছে ‘মিষ্টি কুমড়া বেগুনি’র মতোই বিস্বাদ মনে হয়।

সারাদেশে গ্রেফতার নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শামসুল ইসলামকে গ্রেফতার করার পর তার ওপর নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। একজন স্বনামধন্য আইনজীবী হিসেবে নিজ জেলায় পরিচিত। কিন্তু গ্রেফতারের পর শামসুল ইসলাম সাহেবকে হাতকড়া পরিয়ে কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা-যাওয়া করা হয়। এছাড়াও কারাগারে তাকে ফাঁসির সেলে রাখা হয়েছে। গ্রেফতারের পর তার ওপর চালানো হয়েছে অবর্ণনীয় শারীরিক নির্যাতন। তার একমাত্র অপরাধ ছিল বিএনপি’র সমাবেশে পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। আওয়ামী লীগ এমনভাবে তাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সাজিয়েছে যারা অরাজকতা, হিংসা, নির্যাতন ও হত্যায় আগ্রহী। আমি এ্যাডভোকেট শামসুল ইসলামের ওপর পুলিশী নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

এছাড়া কুমিল্লা দক্ষিণ জেলাধীন সদর উপজেলা বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক রেজাউল কাইয়ুম, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম রায়হান, ভিপি জসিম, কাউন্সিলর সাখাওয়াতুল্লাহ শিপন, সাবেক কাউন্সিলর বিল্লাল, মহানগর যুবদলের সভাপতি উদবাতুল বারী আবু, সহ-সভাপতি তারেক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়সালুর রহমান পাভেল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনির হোসেন পারভেজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ, মহানগর যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক টিটু নাহা, জেলা যুবদলের সহ-কোষাধ্যক্ষ জুয়েল রানা আশরাফী, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জুম্মন হোসেন সুমন, মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত হীরা এবং যুবদল নেতা বসির গতকাল আদালতে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় জামিন নিতে গেলে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের ঘটনায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ