Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদযাত্রায় দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রীদের দুর্ভোগের শঙ্কা

ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চ ও ফেরি ঘাট মেরামত হয়নি

মো. নজরুল ইসলাম, রাজবাড়ী থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০১ এএম

দুর্ভোগের অপর নাম রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার। এ রুটে ফেরি ও লঞ্চ দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ও যানবাহন নদী পারাপার হয়। গত বর্ষা মৌসুমে পদ্মার ভাঙনের ফলে নদীতে বিলীন হয় দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যাত্রীদের যাতায়াতের কাঠের দুটি সেতুও। ৭টি ফেরি ঘাটের মধ্যে ১, ২ ও ৬ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে।
যাত্রী, লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকরা বলেন, লঞ্চ ঘাটের ক্ষতিগ্রস্থ ঘাট ও সেতু দু’টি দীর্ঘ ৬ মাস অতিবাহিত হলেও কোনো সংস্কার হয়নি। ফলে যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে জিও ব্যাগের তৈরি রাস্তা দিয়ে লঞ্চ ঘাটে যাতায়াত করছেন। নদীর পানি হ্রাসের কারণে প্রায় ২০-২৫ ফুট নিচে ওঠানামা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। যাত্রীরা মালামাল বহন করে ওঠা নামা করতে গিয়ে চরম বেগ পেতে হচ্ছে যাত্রীদের। ৭টি ফেরি ঘাটের মধ্যে ১,২ ও ৬ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে ও ৩, ৪, ৫, ৭ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। নাব্যতা সংকট ও ঘাট সংকটের কারণে প্রায় মাসখানিক ধরেই প্রতিদিনই নদীপারের অপেক্ষায় যানবাহনের সারির সৃষ্টি হচ্ছে।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ৩৪টি লঞ্চ চলাচল করে। দিনে প্রায় ১০ হাজার যাত্রী পারাপার হয়। বর্তমানের তুলনায় ঈদে যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা বেড়ে আরও কয়েকগুণ হবে। ফলে জিও ব্যাগের রাস্তা দিয়ে যাতায়াতে যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। দ্রæত ক্ষতিগ্রস্থ ঘাট ও সেতু সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন যাত্রী, লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লঞ্চ ঘাটের কাঠের সেতু দু’টির প্রবেশ পথ বন্ধ রয়েছে ও শেষ ভাগ ঘাটের পল্টুন থেকে অনেক উঁচুতে রয়েছে। অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। যাত্রীরা সেতুর পরিবর্তে সেতুর নিচ দিয়ে জিও ব্যাগের রাস্তা দিয়ে হেঁটে ঘাটে প্রবেশ করছেন। ঘরমুখো যাত্রীদের লঞ্চ থেকে নেমে একইভাবে মাটির সিঁড়ি ব্যবহার করে উপরে ওঠতে হচ্ছে। মালামাল বহন করছেন যারা, তাদের উপরে উঠতে বেগ পেতে হচ্ছে। চোখে মুখে গাম ও দুর্ভোগের ছাপ।
যাত্রী নজরুল ইসলাম, রতন, মাসুদসহ আরও কয়েকজন বলেন, গত বর্ষায় নদী ভাঙনের কারণে লঞ্চঘাট ও তাদের যাতায়াতের সেতু ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তারপর থেকে ঝুঁকি নিয়ে জিও ব্যাগ ফেলে তৈরি করা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা কাদা-পানিতে পিচ্ছিল হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। এ সময় পিচ্ছিল খেয়ে অনেকে আহত হন, আবার অনেকের কাপড় নষ্ট হয়। সামনে বর্ষা মৌসুমে প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টি হবে, যদি এ অবস্থা থাকে তাহলে তাদের দুর্ভোগের শেষ থাকবে না। তারা বলেন, এ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। ঈদের সময় তার সংখ্যা বেড়ে কয়েকগুণ হয়। ঘাট ও যাতায়াতের পথ ভালো না করলে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রæত লঞ্চঘাট ও যাতায়াতের সেতু দু’টি সংস্কার প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লঞ্চ মালিকের প্রতিনিধি মোফাজ্জেল হোসেন জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের দুইপাশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী নদী পারাপার হন। দৌলতদিয়া ঘাটের যাত্রীদের যাতায়াতের সেতু দীর্ঘ দিন অকেজো পড়ে আছে। ৬ মাস আগে নদী ভাঙনে লঞ্চ ঘাট ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কর্তৃপক্ষ সংস্কারের প্রয়োজন মনে করেনি।
যাত্রীদের পাশাপাশি লঞ্চ মালিক-শ্রমিকরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সংস্কার করা না হলে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যাত্রী সংকটে পড়বে এবং যাত্রীদের ভোগান্তির সীমা থাকবে না। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে, তখন দুর্ভোগও বাড়বে। ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে রাজবাড়ী পুলিশ সুপার এমএম শাকিলুজ্জামান ও বিআইডবিøউটিএর কর্মকর্তারা ঘাট এলাকার সমস্যা চিহিৃত ও দুর্ভোগ লাঘবে ঘাট এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডবি¬উটিএ) আরিচা অঞ্চলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, ঘাট আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় দৌলতদিয়ায় ৬ কিলোমিটার স্থায়ী কাজ হবে। গত বর্ষায় নদী ভাঙনে ঘাট ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় যাত্রীদের চলাচলের জন্য জিও ব্যাগ ফেলে রাস্তা করা হয়েছে। বর্তমানে যাত্রীরা সেই রাস্তা ব্যবহার করছে।
তিনি আরও বলেন, ঈদের সময় নদীর পানি বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি বিবেচনা করে যে কোনো একটি ফেরি ঘাটকে লঞ্চঘাট হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ৭টি ফেরি ঘাটের মধ্যে ৩, ৪, ৫, ৭ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। নাব্যতা সংকট কাটাতে ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ