Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইউরোপের জন্য মন্দার দুষ্টচক্র

রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৭ এএম

ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ বৃহস্পতিবার রাশিয়ার কয়লার উপর নিষেধাজ্ঞার আরোপ করেছে। দেশটির বিরুদ্ধে ইউরোপীয় জোটের সর্বশেষ এই নিষেধাজ্ঞা প্রক্রিয়ার মন্থরতা ২৭টি সদস্য দেশের মধ্যে শাস্তির বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জগুলিকে প্রতিফলিত করেছে। জোটের কিছু দেশ বাকিদের তুলনায় রাশিয়ান জ্বালানির উপর বেশি নির্ভরশীল হওয়ায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে, রাশিয়া থেকে কয়লা সরবরাহ বন্ধ করা হলে দেশটির থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষতি বেশি হতে পারে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাট অনুসারে, ২০১৯ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আসা কয়লার ৪৭ শতাংশ রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে, যা দেশটিকে জ্বালানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী করে তুলেছে। ইইউ রাশিয়ান কয়লার উপর নির্ভরশীল হলেও, তারা প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেল অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে রাশিয়াকে আরও সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারে। কিন্তু পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান রিস্তাদ এনার্জি-এর মতে, রাশিয়া থেকে কয়লা নিষিদ্ধ করার ফলে অঞ্চলটিতে বিদ্যমান ঘাটতির কারণে ইউরোপীয় গ্রাহকদের জ¦ালানীর মূল্য বৃৃদ্ধির মুখেমুখি হতে হবে। রিস্তাদের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কার্লোস তরেস দিয়াজ নিষেধাজ্ঞাগুলিকে ‘একটি দ্বি-মুখি তলোয়ার’ বলে অভিহিত করেছেন।

ইইউ’র প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন জ্বালানির চাহিদা রয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে রাশিয়ান জ্বালানির উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীলদের মধ্যে রয়েছে অঞ্চলটির বৃহত্তম অর্থনীতি জার্মানি। দেশটি যে কয়লা আমদানি করে তার প্রায় অর্ধেক আসে রাশিয়া থেকে, যা তাদের গত বছরের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে মোট ২.২ বিলিয়ন ইউরো। বেশির ভাগই জার্মানির ইস্পাত শিল্পে বিদ্যুত এবং শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। রাশিয়া থেকে আমদানি কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার আমদানি করা কয়লা ঘাটতি পূরণে সহায়তা করতে পারে। এক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া ২০১৯ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়লা আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করেছে। তবে, অস্ট্রেলিয়ার বাজারগুলি ইতিমধ্যেই তাদের কয়লার দর বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে।

ইউক্রেন-রাশিয়া সঙ্ঘাত ইতিমধ্যে ইউরোপ জুড়ে মন্দার একটি দুষ্টচক্র তৈরি করেছে, যার প্রভাব ইউরোপের শেয়ারবাজারেও পড়েছে। এই সঙ্ঘাত ইতিমধ্যেই জ্বালানির উল্লেখযোগ্য দরবৃদ্ধি করেছে এবং ইউরোপকে তার সামরিক ব্যয় বাড়াতে বাধ্য করছে। ২০১৪ সাল থেকে তেলের দাম ইতিমধ্যেই সর্বোচ্চ ছিল এবং তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাশিয়া তেলের তৃতীয় বৃহত্তম উৎপাদক, তাই নিষেধাজ্ঞার কারণে আরও দাম বৃদ্ধি অনিবার্য। ইউরোপ তার প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশ পায় রাশিয়া থেকে। তাই এতেও উচ্চ হারে দর বৃদ্ধি ঘটতে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ কমে আসছে, এবং ইউরোপীয় নেতারা উদ্বিগ্ন যে, ইউক্রেনকে সমর্থন দেয়ার কারণে মস্কো এই অঞ্চলের গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে।

রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম গম সরবরাহকারী। একসাথে, তারা এবং ইউক্রেন মোট বৈশ্বিক রপ্তানির প্রায় এক চতুর্থাংশ বহন করে। মিশরের মতো দেশগুলি, যারা রাশিয়ান গম আমদানির উপর অনেক বেশি নির্ভর করে, ইতিমধ্যে বিকল্প সরবরাহকারীদের সন্ধান করছে। এদিকে বিশ্বের বৃহত্তম ধাতু রপ্তানিকারক রাশিয়া বিশ্ব বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কার মধ্যে, প্যালাডিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় ধাতু, যা স্বয়ংক্রিয় নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত হয়, ঘাটতের কারণে তার মূল্য বেড়েই চলেছে। রাশিয়ার আরেকটি প্রধান রপ্তানি পণ্য নিকেলের দামও বেড়েছে। এছাড়া, বিশে^র ব্যাঙ্কগুলি রাশিয়াতে বিদেশী পুঁজির প্রবেশ এবং বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ডলার, ইউরো এবং অন্যান্য মুদ্রায় অর্থপ্রদান প্রক্রিয়া সীমাবদ্ধ করার উদ্দেশ্য নিষেধাজ্ঞার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
রাশিয়ার তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের রফতানি বন্ধ করা আরও কঠিন। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে জার্মানি রাশিয়ার গ্যাসের উপর নির্ভরতা ১৫ শতাংশ কমিয়েছে। কিন্তু শিল্প নেতারা রাশিয়ান প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছেন যে, এটি রাসায়নিক, খনি এবং ওষুধ খাতে যথেষ্ট মাত্রায় কর্মসংস্থান হ্রাস করতে পারে। যদিও জার্মানি নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণকে ত্বরান্বিত করার জন্য খসড়া আইন উপস্থাপন করেছে, বায়ু এবং সৌর শক্তির মাধ্যমে আরও বেশি জ¦ালানী উৎপাদনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে, কিন্তু নতুন এই ক্ষেত্রগুলি তৈরি হতে আরো কয়েক বছর সময় লাগবে। এবং এমনকি যদি অনুমোদনের প্রক্রিয়াগুলি তরানি¦তও করা হয়, তাহলেও রাশিয়ার পাইপলাইন থেকে আসা প্রায় ২২ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাসের মিশ্রেেণর প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হতে জার্মানির কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।



 

Show all comments
  • Antara Afrin ৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:১৯ এএম says : 0
    রাশিয়ার উচিত স্বর্ণমুদ্রাই লেনদেন করা।তবেই আম্রিকার উচিত শিক্ষা হবে। কথায় কথায় বিভিন্ন দেশকে ব্ল্যাকমেইল করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়াটা বন্ধ হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Saddam Hossin Emon ৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২০ এএম says : 0
    কথায় কথায় নিষেধাজ্ঞা এখন সামলা ঠেলা রাশিয়া জিন্দাবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Sohel Rana ৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২০ এএম says : 0
    ইউরোপ কিন্তু বাংলাদেশ থেকে গ্যাস নিতে পারে। এমন একটা বক্তব্য তো আমাদের নেতারা দিতেই পারবো...
    Total Reply(0) Reply
  • Kajal Motahar Alam ৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২০ এএম says : 0
    এই মুহূর্তে রাশিয়ার উচিত্ হবে : মাত্র তিন দিন ঐ মূল পাইপলাইন বন্ধ রাখা তাহলেই বুঝতে পারবে বিশ্বের মার্কেটে রাশিয়ার গুরুত্ব কতো বেশি । খবরে পড়েছি তাঁদের জ্বালানির ক্ষমতা মাত্র দুই দিন । তারপর ?
    Total Reply(0) Reply
  • Rafiq Sikdar ৯ এপ্রিল, ২০২২, ৫:২০ এএম says : 0
    ন্যাটোর সম্প্রসারণ স্বাধীন দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ