Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মহাদেবপুরে হিজাব পরার অপরাধে ১৮ ছাত্রীকে পেটালেন হিন্দু শিক্ষিকা

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৩৩ এএম

নওগাঁর মহাদেবপুরে হিজাব পরে স্কুলে আসার অপরাধে ১৮ ছাত্রীকে লাঠি দিয়ে পিটালেন শিক্ষিকা আমোদিনি পাল। বুধবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার দাউল বারবারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি তাদের অভিভাবকদের জানালে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। অভিভাবকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

এর জের ধরে অভিভাবকরা বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে ওই স্কুলে গিয়ে এর প্রতিবাদ জানান। অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে না পেয়ে তারা স্কুলের আসবাবপত্র ভাংচুর করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের দুটি ভ্যান ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।



নির্যাতনের শিকার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আফরিন অভিযোগ করে জানান, বুধবার দুপুরে জাতীয় সঙ্গীতের পর লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনি পাল কেন হিজার পড়ে স্কুলে এসেছে এ কথা জিজ্ঞাসা করে ইউক্যালিপটাস গাছের ডাল দিয়ে তাদেরকে প্রহার করেন। শিক্ষিকা তাদেরকে জানিয়ে দেন যে ‘স্কুলে কোন পর্দা চলবে না। ঢং করে আসচো। বাসায় গিয়ে বোরখা পড়ে থাকো। যখন তোমরা মহাদেবপুর বাজারে যাবে তখন পর্দা করবে। স্কুলে আসলে মাথার কাপড় ফেলে আসবে।’ তিনি ছাত্রীদের হিজাব খুলে ফেলার জন্য টানাটানি করেন। এমনকি যারা হিজাব ছাড়া শুধু মাস্ক পড়ে এসেছিল তাদের মাস্কও খুলে দেন। তিনি হুমকি দেন যে, ‘কাল থেকে যদি হিজাব ও মাস্ক পড়ে আসো তাহলে পিটিয়ে তোমাদের পিঠের চামড়া তুলে নেয়া হবে।’

সাদিয়া আরোও জানান, লাইনের কয়েকজন ছাত্রীকে মারতে মারতে তার কাছে এসে তাকে মারতে থাকলে লাঠি ভেঙ্গে যায়। অন্যদের মধ্যে দশম শ্রেণির ছাত্রী ঐশি, সুমাইয়া, তিথি, লাকি, নবম শ্রেণির মোনাসহ কমপক্ষে ২০ জন ছাত্রীকে পিটানো হয়।

সাদিয়ার মা সাবেরা বেগম জানান, তার মেয়ে স্কুল থেকে এসে কান্নাকাটি করে হিজাব পড়ার জন্য ম্যাডাম মেরেছে বলে জানায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা বড় হয়েছে। তারা পর্দা করবেই। স্কুলে গিয়েই ভদ্রতা শিখবে। তা না শিখিয়ে যদি এরকম মারপিট করে তাহলে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা কোথায়?’ তিনি তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার স্বার্থে অভিযুক্ত শিক্ষিকার অপসারণ দাবি করেন।

দশম শ্রেণির ছাত্রী উম্মে সুমাইয়া আকতারের মা মরিয়ম নেছাও জানালেন একই কথা। তার মেয়ে সুমাইয়া ও তার ক্লাসমেট তিথি জাতীয় সঙ্গীতের পর স্কুলে গেলে তারা কেন হিজাব পড়ে স্কুলে গেছে সেই অপরাধে শিক্ষিকা আমোদিনি পাল তাদেরকে পিটানোর জন্য শিক্ষক বদিউল আলমকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে বাদিউল মাস্টার সুমাইয়া ও তিথিকে লাঠি দিয়ে পিটায়। এই ঘটনার পর তার মেয়ে ক্লাস না করে বাড়ি এসে কাঁদতে থাকে।

ঘটনার সত্যতা জানার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষিকা আমোদিনি পালের মোবাইলফোনে রিং দিলে সাংবাদিক পরিচয় পাবার পর তিনি ফোন কেটে দেন। পরে বার বার রিং দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। অভিযুক্ত অপর শিক্ষক বদিউল আলম জানান, হিজাব না পড়ায় ছাত্রীদেরকে শিক্ষিকা আমোদিনি পাল মারধর করেছেন। তিনি নিজে কাউকে মারেননি বলেও দাবি করেন।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, স্কুলে হিজাব পড়ে আসায় শিক্ষিকা আমোদিনি পাল ৫/৬ জন ছাত্রীকে মারধর করেছেন। ঘটনার দিন তিনি স্কুলের কাজে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে এসে বিষয়টি জেনেছেন।

মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, বিষয়টি খুবই সেনসেটিভ। এবিষয়ে সংবাদ প্রকাশে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান তিনি। তবে এবিষয়ে থানায় কোনো মামলা হয়নি বলেও তিনি জানান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান হিজাব না পড়ায় স্কুলছাত্রীদের পিটানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আগে তাকে শোকজ করি। তারপর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

অভিভাবকেরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা স্কুল ঘেরাও করেন। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষিকা এদিন স্কুলে আসেননি। তারা অবিলম্বে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।



 

Show all comments
  • MILON MIAH ৮ এপ্রিল, ২০২২, ৭:১৪ পিএম says : 0
    ঐ শিকিক্ষাকে পিটিয়ে বহিস্কৃত করা হোক????????????
    Total Reply(0) Reply
  • MILON MIAH ৮ এপ্রিল, ২০২২, ৭:১৪ পিএম says : 0
    ঐ শিকিক্ষাকে পিটিয়ে বহিস্কৃত করা হোক????????????
    Total Reply(0) Reply
  • mahmud Talukder ৮ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ পিএম says : 0
    এই মুদীর বশংবদ .. বাচ্চাকে .. ভারতে ঝেটিয়ে বিদায় করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • K M F Ruhan ৮ এপ্রিল, ২০২২, ২:২৪ পিএম says : 0
    হে আল্লাহ, যেসব বোন এতো কষ্টের পরও আপনার আদেশ দৃঢ়ভাবে পালন করছেন তাঁদেরকে আপনি উত্তম প্রতিদান দান করুন। হে আল্লাহ, এই বরকতময় মাসে আপনি আপনার মনোনীত জীবনব্যবস্থার বিরোধিতাকারীদের হিদায়াত দান করুন। হে আল্লাহ, যারা না বুঝে আপনার আদেশের বিরোধিতা করছে তাদেরকে আপনি বুঝার তৌফিক দান করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে এই তৌফিক দান করুন যেন আমরা আপনার বাণী সঠিকভাবে আপনার রাসূল (ﷺ) এর আদর্শ অনুযায়ী প্রচার করতে পারি। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মাঝে সংযম দান করুন যেন আমরা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গালিগালাজ ও অশ্লীল ভাষা পরিহার করে ঠিকমতো ইসলামের দাওয়াহ সকলের নিকট পৌঁছাতে পারি। হে আল্লাহ, আপনি মুসলিমদের আবার ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করে দিন। হে আল্লাহ, আপনি ইসলাম ও মুসলিমদেরকে সাহায্য করুন ও আপনার মনোনীত জীবনব্যবস্থা ইসলামকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করুন। আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • ইব্রাহীম সম্রাট ৯ এপ্রিল, ২০২২, ৭:১০ পিএম says : 0
    বিদ্যালয় থেকে এমন শিক্ষাকাদের বহিঃস্কার করা হোক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাদেবপুর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ