Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমজান পথপ্রদর্শক ও সুপথের উজ্জ্বল নিদর্শন

খুৎবা-পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘রমজান মাস; যার মধ্যে মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক এবং সুপথের উজ্জ্বল নিদর্শন’ ও (হক আর বাতিলের মাঝে) পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রমজান মাসে (নিজ আবাসে) উপস্থিত থাকে, সে যেন রোজা পালন করে। (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)। গতকাল জুমার বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। বিভিন্ন মসজিদে পবিত্র রমজান মাসের মহত্ত ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন পেশ ইমামরা। রমজানের সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করার তাগিদ দেন পেশ ইমাম ও খতিবরা। নগরীর মসজিদগুলোতে জুমার নামাজে মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়।

মুফতি রুহুল আমীন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় গতকাল জুমার বয়ান পূর্বে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বলেন, ঈমানের পর সর্বোচ্চ তোহফা হচ্ছে নামাজ। রাসূল (সা.) বলেছেন, মু’মিনের নামাজ মেরাজের সমতুল্য। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হলে মহান আল্লাহ ৫০ ওয়াক্তের সওয়াব দান করবেন। বায়তুল মোকাররমে খতিবের দায়িত্ব দেয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, জুমার দিনের আমলগুলো নিজে পালন করতে হবে এবং পরিবারের সদস্যদেরও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নবনিযুক্ত খতিব বলেন, রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত বরকতময়। একমাত্র রোজাদারের জন্যই জান্নাতের প্রবেশপথে তোড়ন তৈরি করা হবে। রোজা পালনের মাধ্যমে শারীরিক ফায়দা পাওয়া যাবে। সিয়াম সাধানা পূর্ববর্তীদের জন্যও ফরজ করা হয়েছিল। সিয়াম সাধানার মাধ্যমে তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে হবে। খতিব মাহে রমজানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সাধারণ ব্যক্তিদেরও ভুলত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতে হবে। রোজার ক্ষতি হয় এমন কাজকর্ম থেকে বিরত থাকতে হবে। রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে হবে। মোবাইল অথবা ফেইসবুক নিয়ে অহেতুক সময় নষ্ট না করে, তা’ থেকে বিরত থাকতে হবে। খতিব রমজানের রোজাদারদের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের পথ পরিহার করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের রাখার অনুরোধ জানান। আল্লাহ সবাইকে এ বরকতময় মাসটিকে কাজে লাগানোর তৌফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকার শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি সিফাতুল্লাহ রহমানি গতকাল জুমার পূর্ব বয়ানে বলেন, রমজান মাসে পবিত্র কোরআন নাযিল হয়েছে। এ মাসে রোজা ফরজ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘রমজান মাস; যার মধ্যে মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক এবং সুপথের উজ্জ্বল নিদর্শন ও (হক আর বাতিলের মাঝে) পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রমজান মাসে (নিজ আবাসে) উপস্থিত থাকে, সে যেন রোজা পালন করে। (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)। এ মাসেরই একটি রাত হলো ‘লাইলাতুল কদর’। যে রাতে কোরআন নাযিল হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি শবে কদরে (মর্যাদাপূর্ণ রাতে), আর শবে কদর সম্বন্ধে তুমি কি জানো? শবে কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম; সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরাঈল আ.) অবতরণ করেন প্রত্যেক কাজের জন্য তাদের রবের অনুমতিক্রমে, (এ রাতে) শান্তিই শান্তি, ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত। (সূরা কদর, আয়াত: ১-৫)। খতিব বলেন, হক ও বাতিলের প্রথম যুদ্ধ তথা বদর যুদ্ধ এ মাসের ১৭ রমজান সংঘটিত হয়েছে। এ মাসের ৮ রমজান মক্কা বিজয় হয়েছে। এ সব সত্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য প্রতি বছর রমজান মাস আমাদের কাছে আসে। তাই প্রতিটি মুসলিম পরিবারের দায়িত্ব প্রত্যেক বালেগ পুরুষ ও বালেগা নারীকে ফরজ রোজা রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করা এবং নূরানী পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সার্বিক চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন।

গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী জুমার বয়ানে বলেন, ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রমজান মাসের রোজা অন্যতম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় হিজরিতে কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা উম্মতের ওপর রোজা ফরজ করেছেন। মাহে রমজান অন্য সকল মাস অপেক্ষা উত্তম ও তাৎপর্যপূর্ণ। এ মাসের অর্জিত জ্ঞান অন্য সকল মাসে প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের জীবন সুন্দর ও আলোকিত হয়ে ওঠে। রহমত, মাগফেরাত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে আসা রমজান নিঃসন্দেহে অন্যান্য মাস অপেক্ষা অধিক মর্যাদাপূর্ণ। ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে আমাদের জীবনে রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি।

নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। ইবাদতের ভরা মওসুম হচ্ছে মাহে রমজান। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তই মহামূল্যবান। আর তাই এ মাসে বিশেষভাবে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে। যেন কোনোভাবেই স্মার্টফোন আমাদের সময়গুলো নষ্ট করে দিতে না পারে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, কিয়ামতের দিন আদম সন্তানকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক কদমও স্ব-স্থান থেকে নড়তে দেয়া হবে না। প্রকৃতপক্ষে রমজান হলো পূর্বের সকল গুনাহর জন্য ক্ষমা চেয়ে সাচ্চা মুসলমান হয়ে জীবনযাপনের প্রতিজ্ঞা করার মাস। এ মাসের সময়গুলো খুব বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করা উচিত। ফরজ নামাজ ও রোজা, ফরজ নামাজের পাশাপাশি তারাবিহ পড়া, সেহরির আগে তাহাজ্জুদ পড়া, যথাসম্ভব জিকির ও কোরআন মাজীদ তেলাওয়াত করে সময় কাটানো উচিত। আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের ঈমানকে মজবুত করার সুযোগ দেন। আমিন!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুৎবা-পূর্ব বয়ান

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ