চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মানুষ একটা কথা বলে থাকে— দেওয়ালেরও কান আছে! সত্যিই কী দেওয়ালের কান আছে? না, কথার গুরুত্ব বুঝাতে এই বাক্যটি ব্যবহার করে। একটি নির্জন রুমে দুই ব্যক্তির কথোপকথন নিরাপদ থাকে না। কিভাবে যেন তৃতীয় ব্যক্তি শুনে যায়। এইজন্য মানুষ বলে— দেওয়ালেরও কান আছে!
কবি বলেন, তুমি যাকে ক্লোসড ফ্রেন্ড ভেবে গোপন কথাটা বলছ, তারও তো বেস্ট ফ্রেন্ড থাকতে পারে, সেও তোমার মতো ভরসা তাকে তোমার গোপন কথাটা বলে তাকে দিতে পারে। তখন আর এই কথা গোপন থাকবে না। এই দোষ চর্চা, গীবত আমাদের দেশে বেশি করে মহিলারা। দু’চারজন বসে বসে মানুষকে নিয়ে বাজে মন্তব্যে লিপ্ত হয়। ঘরের গোপন কথাগুলো শেয়ার করে। কয়েকজন নেককার মহিলা ছাড়া অধিকাংশ মহিলা নিজেদের স্বামীর বদনাম গেয়ে বেড়ায়। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন! সামনাসামনি হলে হাসিমুখে কথা বলে, হালত ফুরসি করে। কেউ দেখলে ভাবে, এদের মতো গভীর, নিবিড়, পবিত্র বন্ধন এই পৃথিবীতে আর নেই। অগোচর হলে বেরিয়ে আসে আসল রূপ! কারো অবর্তমানে তার দোষ চর্চা করো না। এতে তোমার বিন্দুমাত্র লাভ নেই। শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি! প্রথম ক্ষতি হলো, যখন জানতে পারবে, আপনি তার অগোচরে দোষ চর্চা করেছেন, গীবত করেছেন, আপনাদের মাঝে যে মোহাব্বত সেটা আর বাকি থাকবে না। যদিও বা সামনাসামনি আপনার ভূয়সী প্রশংসা করছে, হাসিমুখের কথা বলছে, তবুও আপনাদের মাঝে পূর্বের ভালোবাসা বহাল থাকবে না।
দ্বিতীয় ক্ষতি হলো, আপনি যার কাছে গীবত করেছেন হতে পারে ওই ব্যক্তির নিকট লোকটি সম্মানের। সবসময় সম্মান করে কথা বলতো, রেস্পেক্ট দিতো। কিন্তু তোমার গীবত করায় ব্যক্তিটির প্রতি একটা কু-ধারণা জন্ম নিলো। ফলে বাহ্যত সম্মান করলেও অন্তর থেকে সে সম্মান আসে না। তৃতীয় ক্ষতি হলো, আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ ফরমান, তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (সূরা হুযুরাত : আয়াত ১২)।
আল্লাহ তাআলা গীবত করাকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন, যাতে মানুষ সচেতন হয়। এছাড়া হাদিসে কঠিন আযাবের কথা রয়েছে। আচ্ছা গীবত কী? আমার মতো সাহাবাদের মনেও এই প্রশ্ন জেগেছিলো। নবী সা. তার জাওয়াব দিয়েছেন। হাদিসটি আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সা.-কে প্রশ্ন করা হলো, গীবত কী? তিনি বললেন, তোমরা ভাইয়ের ব্যাপারে তোমার এমন কিছু বলা যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয়। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে বর্তমান থাকে? তিনি বললেন, তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তাকে মিথ্যা অপবাদ দিলে। (সুনানে আন-নাসায়ী : হাদিস নং ৪৮৭৪)। যদি আমরা এমন হই, কারো গীবত করবো না, দোষ চর্চা করবো না, অন্যের দোষ প্রকাশ করবো না, তাহলে? তাহলে আল্লাহ আপনার দোষও গোপন রাখবে। কঠিন আযাব থেকে বেঁচে যাবো। হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি কোন মু’মিনের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে (প্রকাশ করবে না), আল্লাহ তা’আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। (সহীহ মুসলিম : হাদিস নং ২৬৯৯)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।