পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে ঢাকাকে ‘যানজটমুক্ত’ করতে মাঠে নেমেছে জাইকা : ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত জাইকা কাজ করবে : মো. মুনিবুর রহমান
পৃথিবীর বায়ুদূষণ, শব্দদূষণের শীর্ষে থাকা শহরের মধ্যে রাজধানী ঢাকা অন্যতম। মাত্র ৪০০ বছরের পুরোনো এই শহর বায়ু আর শব্দদূষণে ক্রমান্বয়ে মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে যানজট। মানুষের দ্রæত গন্তব্যে যেতে অসংখ্য ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। এসব মেগা প্রকল্পের সংখ্যা যতই বাড়ছে; ততই যানজট দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও ঢাকা শহরের একপ্রান্তে বসবাস করে কর্মজীবী মানুষ অন্যপ্রান্তে চাকরি করতেন। এখন উত্তরায় বসবাস করে গুলিস্তানে কর্মস্থলে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হলে এক ঘণ্টার রাস্তা অতিক্রম করতে কত ঘণ্টা লাগবে বলা দূরহ।
তাছাড়া ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার দূরত্বের রাস্তা অতিক্রম করতে কত সময় লাগবে তা বলা দুষ্কর। রাজধানী ঢাকা শহরে যানজটে এমন অবস্থা যে কর্মজীবী, শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের ঘর থেকে বের হয়ে নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছাই চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। তবে রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা) মাঠে নামছে বলে জানা গেছে। ৩০ মার্চ এক সভায় জাইকার প্রতিনিধিরা ঢাকা যানজট মুক্ত রাখতে বিভিন্ন কর্মকৌশল তুলে ধরে যানজট নিরসনে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রেসক্লাবে এক সেমিনারে যোগ দিতে সকাল ৯টায় ঘর থেকে বের হন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক। গ্রীন রোডের বাসা থেকে প্রেসক্লাবে আসতে সময় লাগার কথা ৩০ মিনিট। এক ঘণ্টা আগে রওয়ানা দিয়েও তিনি পৌঁছে দেখেন অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন ৩০ মিনিট দূরত্বের রাস্তায় সময় লেগেছে পৌনে ২ ঘণ্টা। তিন দফায় সিগন্যালে তার এ সময় চলে গেছে। একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন, এমন এক ব্যক্তি মতিঝিলের এক বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য লালমাটিয়ার বাসা থেকে বের হয় সকাল সাড়ে ৮টায়। ১০টায় বৈঠক শুরুর কথা। কিন্তু তিনি এসে দেখেন বৈঠক শুরু হয়ে গেছে, তার পৌঁছার আগেই। কথা প্রসঙ্গে বললেন, ঢাকায় যারা চাকরি-বাকরি করেন তাদের যথাসময়ে কর্মস্থলে পৌঁছানোই এখন চ্যালেঞ্জ। সড়কে যানজট হবে জেনে আগে বের হলেও নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছা যায় না। কারণ কখনো কোথায় ছাত্র-শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে মিছিল করছে; কখন কোথায় চাঁদা তোলার জন্য সড়কে যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে; কোথায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করার জন্য গণপরিবহন ধরেছে বলা মুশকিল। কোথাও একটি বাস দু’মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখলে মুহূর্তেই পেছনে শত শত যানবাহন দাঁড়িয়ে যায়।
তাছাড়া সড়কে নামলেই দেখা মেলে রাজধানীর সব উন্নয়ন চিত্র। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, ওয়াসার লাইন, ডিপিডিসি, বিটিআরসি, ডেসকো, তিতাসসহ সব সেবা সংস্থা কিছু হলেই রাস্তায় গর্ত করেন। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। আনোয়ার হোসেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ১০ বছর আগে উত্তরা থেকে মতিঝিলের অফিসে পৌঁছাতে সময় লাগত এক ঘণ্টার। এখন উত্তরা থেকে মতিঝিলে আসতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। সময় বাঁচানোর জন্য বাসা বদল করে বাড্ডায় এসেছেন। সেখান থেকেও কখনো এক ঘণ্টা কখনো দুই ঘণ্টা সময় লাগে মতিঝিল পৌঁছাতে। বললেন, আগে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা যেতে ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগত। এখন উত্তরা থেকে মতিঝিল আসতে সে সময় লেগে যায়। রফিক মোল্লা নামের এক ব্যাংকার মীরপুর থেকে মতিঝিলে সাপ্তাহে ৫ দিন অফিস করেন। বললেন, এক সময় এক ঘণ্টা সময় লাগত পথে; এখন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। যানজটে শরীর ঘেমে যায়।
গতকাল জাতীয় সংসদে রাজধানীর যানজট নিয়ে তীব্র বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ঢাকার মানুষকে প্রতিদিন যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এতে একদিকে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। যানজটের কারণে বছরে ৮৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ঢাকা শহর অকার্যকর শহরে পরিণত হবে। আরো কয়েকজন সদস্য যানজট নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন।
জাতীয় সংসদে যোগাযোগমন্ত্রীর দেয়া তথ্যে দেখা যায়, একটি আধুনিক নগরীতে মোট আয়তনের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সড়ক থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকায় আছে মাত্র ৭ থেকে ৮ ভাগ সড়ক। ঢাকা শহরের বর্তমান আয়োতন ১৩৫৩ বর্গকিলোমিটার; রাস্তার আয়তন ২,২০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২১০ কিলোমিটার প্রধান সড়ক। অলিগলিসহ আছে মাত্র ৭ শতাংশ। মেইন রোড আছে ৩ শতাংশ। এ ৩ ভাগ সড়কের ৩০ শতাংশ দখল করে আছে দখলদাররা। যার মধ্যে একটি অংশ হচ্ছে হকার।
গত কয়েক দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে যানজটের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শুক্রবার বাদে সপ্তাহের বাকি ৬ দিনই রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে যানজট থাকে। এমননিতেই প্রয়োজনের তুলনায় সড়ক কম; তারপর ফুটপাথ দখল, যানবাহনের প্রতিযোগিতা, সড়কে যানবাহন আটকিয়ে লাইসেন্স ও ফিটনেস দেখা, গণপরিবহন আটকিয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি, সড়কের পাশেই বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমল, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাÐে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি, ধীরগতি ও দ্রæতগতির যানবাহন একই সড়কে চলাচল করা ইত্যাদির কারণে যানজট লেগেই যাচ্ছে।
কয়েকদিন সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে রাজধানীর সড়কে যারা চলাচলকারী সাধারণ মানুষও জানজটের জন্য কম দায়ী নয়। শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, মালিবাগ, কমলাপুর, নীলক্ষেত, আজিমপুর এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো কে কার আগে যাবেন এই প্রতিযোগিতা নিয়ে ছুটে চলছে। বাসের সঙ্গে তিন চাকার রিকশা ছুটছে। একই সড়কে চলছে রিকশা। তিন ধরনের যানবাহনের মধ্যে কে আর আগে যাবে পাল্লা দিয়ে চলছে। আর গণপরিবহনের যাত্রী ধরার প্রতিযোগিতা তো রয়েছেই। সকাল থেকে কর্মব্যস্ত মানুষের চলাচল শুরু হয়। সঙ্গে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও বের হন। সব মিলিয়ে দিনের পুরোটা সময় এসব সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট বিহীন কোনো সড়ক রাজধানীতে নেই।
যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে রিপোর্ট করেন এমন একাধিক সাংবাদিক জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কাজলা, গুলিস্তান, ফার্মগেইট, নিউ নীলক্ষেত, কারওয়ান বাজার অন্যদিকে উত্তরা, হাউজবিল্ডিং, জসীমউদ্দিন রোড, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, নতুনবাজার, বাড্ডা, রামপুরা, বনানী, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখেছেন প্রতিটি সড়কে যানজট। কোথাও থমকে দাঁড়িয়ে রয়েছে গণপরিবহন কোথাও খুব ধীরগতিতে যানবাহনগুলো চলাচল করছে। একই চিত্র দেখা গেছে কুড়িল থেকে বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, মগবাজার, মৌচাক, বাংলামোটর এলাকা। এ বিষয়ে ডিএমপির মহাখালী ট্রাফিক বক্সের পরিদর্শক মো. সালাহউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, সকাল ৬টা থেকে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজটও বাড়ছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সচেতনতা বাড়লে যানজট নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জাইকা মাঠে নামছে : বিভিন্ন দেশে উন্নয়নমূলক কাজে বিনিয়োগকারী জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা) বাংলাদেশেও উন্নয়নমূলক কর্মকাÐে ধারাবাহিকতার পাশাপাশি রাজধানীর চলমান ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে কাজ করবে বলে জানা গেছে। গত ৩০ মার্চ ডিএমপির সম্মেলন কক্ষে জাইকা ও ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট (ডিআরএসপি) প্রকল্পের যৌথ সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আগামী ৩ বছর মেয়াদি ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট (ডিআরএসপি) প্রকল্পে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে তারা। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি যানজট থেকে মুক্ত করতে এ প্রকল্প ভ‚মিকা রাখবে। ঢাকাকে যানজটমুক্ত রাখতে ট্রাফিক পুলিশ ও জাইকা ছাড়াও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত দায়িত্বরত কর্মকর্তা, বিভিন্ন সেবা সংস্থার কর্মকর্তা, সিটি করপোরেশন, বিআরটিসি, বিআরটিএ, পরিবহন মালিক-শ্রমিক-যাত্রী প্রতিনিধিরা এই প্রকল্পের কাজে যুক্ত থাকবেন।
জানতে চাইলে ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট (ডিআরএসপি) প্রকল্পে পরিচালক ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, উন্নত দেশগুলোতে সড়ক ব্যবস্থাপনা এবং ট্রাফিকের বিষয়ে যাত্রী-চালক-হেলপারদের কীভাবে সচেতনতা করা হয়, কীভাবে তাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়; এসব বিষয় আমরা জাইকার কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানব। এছাড়া জাইকার অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগিয়ে রাজধানীবাসীকে আরও সচেতন করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ট্রাফিক সিস্টেম ঠিক থাকলে অর্থনীতি সচল থাকবে। মানুষের কর্মকাÐ আরও গতিশীল হবে। এ সব বিষয় মাথায় রেখে এরই মধ্যে জাইকার সাথে আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত জাইকা আমাদের সাথে কাজ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।